করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে আসছে আরও একটি প্রকল্প। ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্ড অ্যান্ড পেন্ডামিক রেসপন্স’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে ব্যয় হবে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিলের।
বৃহস্পতিবার প্রকল্প প্রস্তাবটি বিশেষ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর আগে বিশ্বব্যাংকের ঋণে একই ধরনের আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। লকডাউন চলায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক স্থগিত থাকায় এভাবে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে জরুরি প্রকল্প। যে কোনো সময় অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ রোববার যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরিভিত্তিতে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে। এডিবির ঋণে এটি বাস্তবায়ন হবে। সঠিক চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে জনগণের জীবন বাঁচানোর জন্য এ প্রকল্পটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। বলতে গেলে সব নিয়মকানুন মেনেই দ্রুতগতিতে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। আশা করছি যে কোনো মুহূর্তে এটি অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের ১৭ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট দিয়ে সজ্জিত করা হবে। এছাড়া কমপক্ষে ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা এবং গুণমানকে কোভিড-১৯ মাইক্রোবায়োালজিকাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে উন্নত করা হবে। স্বাস্থ্য খাতের কমপক্ষে ৩ হাজার ৫শ’ কর্মী (যার প্রায় ৫০ শতাংশ মহিলা) আধুনিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং আরও স্বাস্থ্য পেশাদার এবং প্রযুক্তিগত কর্মী নিয়োগকে উৎসাহিত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় পিসিআর মেশিন, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, পিপিই এবং মাস্ক ক্রয় করা হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, ৩০ এপ্রিল স্বল্প সুদে ১০ কোটি ডলার বা ৮৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এডিবি। করোনার কারণে তাৎক্ষণিক জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে দ্রুতগতিতে এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। ঋণটি অনুমোদন দিয়ে এডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সহায়তার ক্ষেত্রে এডিবির দ্রুত সাড়া দেয়ার একটি শক্তিশালী ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে এডিবি চিকিৎসা সরবরাহ ও সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য সহায়তা দিয়েছে।
এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দবার যুগান্তরকে জানান, ১০ কোটি ডলাররের বাইরে আরও ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ৭ মে এ অনুমোদন দেয়া হয়। ঋণের এ অর্থ কোভিড-১৯ অ্যাকটিভ রেসপন্স অ্যান্ড এক্সপেন্ডিউচার সাপোর্ট কর্মসূচির অংশ। ঋণের অর্থে বাংলাদেশের ১৫ লাখের বেশি দরিদ্র ও দুর্বল মানুষ উপকৃত হবে। রফতানিমুখী শিল্পে প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন কর্মচারী বর্ধিত বেতন সহায়তা পাবেন এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কোভিড- ১৯ এর সঙ্গে লড়াই করা চিকিৎসক, নার্স এবং চিকিৎসাকর্মীরা বিশেষ সহায়তা পাবেন। এছাড়া বৃদ্ধাশ্রমের লোকদের জন্য এবং সরকারের দুর্দশাগ্রস্ত মহিলাদের জন্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলি সম্প্রসারিত করা হবে। সারা দেশে কমপক্ষে ১৫ লাখ দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক হায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি প্রায় ১০ লাখ পরিবারকে জরুরি সময়কালে মাসে ২০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও খাতগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলোও ভর্তুকিযুক্ত সুদে ঋণ সহায়তা দেয়া হবে বলে এডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে অনুমোদন পায় করোনা মোকাবেলার প্রথম প্রকল্প। এটিও বিশেষ প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘কেভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপার্ডনেস’ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের দেয়া সহজ শর্তের ৮৫০ কোটি টাকার ঋণের অর্থও ব্যবহার করা হচ্ছে।