কিন্তু ভারতে এসব লক্ষণ ছাড়াই বেড়ে চলছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এ নিয়ে বেশ চিন্তিত দেশটির স্বাস্থ্যবিভাগ। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার। এন্টালি এলাকার বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির এক বৃদ্ধা ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, এ সময় তার জ্বর, কাশি, গলাব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট কিছুই ছিল না।
অ্যান্টিবায়োটিক শুরুর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু এতে কোনো কাজ করে না। চার দিন পরে জ্বর আসে। আরও এক দিন পরে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এর পর বৃদ্ধার লালার নমুনা পরীক্ষা হলে করোনা ধরা পড়ে।
পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ নিয়ে ২৭ এপ্রিল ঢাকুরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন বিহারের বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নের প্রৌঢ়া।
পার্কিনসন্সের রোগী ওই মহিলারও পরে করোনা ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, করোনার মূল উপসর্গ হল, জ্বর, কাশি, গলাব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট।
কিন্তু ডায়েরিয়ার উল্লেখ প্রশিক্ষণ-সিলেবাসে একেবারে ছিল না, তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু-র নির্দেশিকাতেও এর উল্লেখ রয়েছে। তবে কোভিড-প্রশিক্ষণে তা বিশেষ গুরুত্ব পায়নি।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বহীন’ সেই উপসর্গই প্রাথমিক লক্ষণের তালিকায় রয়েছে। কেন এ ভাবে কিছু ক্ষেত্রে বদলে যাচ্ছে করোনার উপসর্গ, সেটাই এখন চিন্তার কারণ তাদের।
পশ্চিমবঙ্গে গত ১৭ মার্চ প্রথম আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য দফতর জানায়, গত দেড় মাসে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০০ জন রোগীর মধ্যে জ্বর প্রাথমিক উপসর্গ ছিল, এমন রোগীর সংখ্যা ৫২ জন। কাশি ৪৫, গলাব্যথা ২৩, শ্বাসকষ্ট চার এবং ডায়েরিয়া ছিল সাতজনের। উপসর্গ নেই কিন্তু করোনা পজ়িটিভ, এমন রোগীর সংখ্যা ২২।
আইডি হাসপাতালের করোনা বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, দিল্লিতে করোনা প্রশিক্ষণের সময়ে বলা হয়েছিল, দুই থেকে চার শতাংশ করোনা রোগীর ডায়েরিয়া উপসর্গ হতে পারে। কিন্তু তা ১০ শতাংশ কখনওই নয়।
তিনি জানান, রোগীর করোনা ধরা পড়ার পরে ডায়েরিয়া হওয়া এক জিনিস। কিন্তু একশো জনের মধ্যে দশ জনের একেবারে গোড়ায় ডায়েরিয়া এবং তার পর জ্বর, শ্বাসকষ্টের লক্ষণ ফুটে ওঠা স্বাভাবিক নয়।
তার কথায়, করোনার ডায়েরিয়া সাধারণ ডায়েরিয়ার থেকে আলাদা। এ ক্ষেত্রে ডায়েরিয়ায় চিকিৎসকেরা সচরাচর যে ওষুধ দেন তাতে কাজ হয় না। অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে না। অন্ত্রের সঙ্কোচন এবং প্রসারণ রোধে লোপেরামাইড দেয়া যেতে পারে।
ডায়েরিয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু রোগীর প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে দেখা গিয়েছে, গন্ধ না-পাওয়া। আইডি হাসপাতালে এমন তিনজন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানকার এক চিকিৎসক জানান, একজন শুধুই গন্ধ না-পাওয়ার সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।
অন্য দু’জনের মধ্যে এক জনের গন্ধ না-পাওয়ার পাশাপাশি জ্বর এবং আর একজনের গলাব্যথা ছিল। ডায়েরিয়া নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা আইডি-র চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা থেকে ভিন্ন।
পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রমৌলি ভট্টাচার্য বলেন, এক-দু’জন ডায়েরিয়া নিয়ে ভর্তি হলেও বেশির ভাগের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। ভর্তির পরেও ডায়েরিয়া হয়েছে।
এটা অ্যাজিথ্রোমাইসিন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জন্যও হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ের উপসর্গ হিসেবে ডায়েরিয়ার উপস্থিতি নিয়ে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান তথা রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক বিভূতি সাহা বলেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে এমন হচ্ছে। এ রাজ্যের পাশাপাশি অন্যত্রও এমন ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।