বিশেষ প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে আজ রোববার উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। সারা বছরই সাংবাদিকদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করে কাজ করতে হয়।
এর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সাংবাদিকদের জীবনের নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে সারা বিশ্বে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বাংলাদেশেও একজন সাংবাদিক মারা গেছেন।
আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত গণমাধ্যমকর্মী। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। এতে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। করোনায় দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোর আয়ে ধস নেমেছে।
জনগণের কাছে তথ্য জানাতে কাজ করে যাওয়া সাংবাদিকদের প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বিবৃতিতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এ শ্রদ্ধা জানান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জনগণকে কোভিড-১৯ মহামারীর তথ্য জানানোর জন্য অক্লান্তভাবে ও বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে যাওয়া সাংবাদিকদের বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাই।
বিবৃতিতে গণতন্ত্র রক্ষা ও নাগরিকদের তথ্য প্রবাহে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরেন মিলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ সব জায়গায় সাংবাদিক, আলোকচিত্র সাংবাদিকসহ মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
কোভিড-১৯ রোগে অসুস্থ হয়ে পড়া সাংবাদিক ও জনসেবায় তাদের নিঃস্বার্থ অবদানকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। বিবৃতিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিনিয়র সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের মৃত্যুতে তার প্রতি সম্মান জানানো হয়।
এদিকে, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণমাধ্যম নয়, দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশেষ করে কোভিড-১৯ উদ্ভূত জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে সংকটকালীন গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
পাশাপাশি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহ সচল রাখা নিশ্চিতকরণে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
কোভিড-১৯ মহামারীকে দুর্নীতির মহোৎসবে পরিণত করার পাঁয়তারায় যারা লিপ্ত তাদের অশুভ তৎপরতা নিয়ন্ত্রণের অন্যতম শক্তি হতে পারে মুক্ত গণমাধ্যম।
শুধু স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ করে অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ নয়, এ দুর্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরিভিত্তিতে অতীব প্রয়োজনীয় বহুমুখী সরকারি ক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমে বিভিন্ন প্রকার যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের সম্পদ বিকাশের সুযোগ গ্রহণকারীদের নিবৃত্ত করতে তথ্যের অবাধ প্রকাশের বিকল্প নেই।
আর এক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের অবারিতভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা আত্মঘাতী হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ বা হয়রানি নয়, বরং দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
চলমান দুর্যোগে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার সংবাদ সংগ্রহকালে ও প্রকাশের জেরে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হয়রানি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ অপপ্রয়োগসহ বিভিন্নভাবে মামলার সংবাদে হতাশা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. জামান।
এদিকে, বাকি বিশ্বের মতো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দক্ষিণ এশিয়ার সংবাদ মাধ্যমকে গভীর সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। উপমহাদেশজুড়েই সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন সংবাদ পোর্টাল সব কিছুই করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছে। সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর।
বাংলাদেশেও পত্রিকার মুদ্রণ সংখ্যা কমে গেছে ও সংবাদমাধ্যম শিল্পের ভবিষ্যৎ খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথম আলোর মতো বড় পত্রিকাগুলো তাদের পাতার সংখ্যা ১৬ থেকে কমিয়ে ১০ বা ১২-তে নামিয়ে এনেছে।
আমরা যা ছাপাতাম এখন তার এক-তৃতীয়াংশ ছাপাচ্ছি কারণ আয় প্রায় শূন্য। রাজধানীর বাইরের সংবাদপত্রগুলো অনলাইনে চলে গেছে বা তাদের মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য মিডিয়া শিল্পকে করোনাভাইরাস মহামারীর সময়টাতে অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে রাজি হয়েছে।
নেপালে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করার পরপরই দেশের সবচেয়ে বড় মিডিয়া হাউজ কান্তিপুর গ্রুপসহ দেশের প্রধান সংবাদ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো নেপালি ও ইংরেজি দুই ভাষারই পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়।
ভারতের বিশ্লেষকরা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সংবাদপত্রের বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনী ব্যয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ভারতের সংবাদ ম্যাগাজিন আউটলুক ৩০ মার্চ তাদের প্রিন্ট ভার্সন ছাপানো বন্ধ করেছে।
শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে সংবাদপত্র শিল্পে গুরুতর আঘাত হানলেও সেখানকার বড় সংবাদপত্রগুলোতে ব্যাপক হারে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেনি।