অনলাইন ডেস্ক:
বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে জন্য সীমান্তে সতর্কতা জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে আদালত বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি কোথায় গেছে! অনেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমরা সবাই মর্মাহত।’ দেশজুড়ে মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, এমন ঘটনায় পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল।
গত বুধবার সকালে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে রিফাতকে (২৩) দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে একদল যুবক। এ সময় তার স্ত্রী দুর্বৃত্তদের ঠেকাতে গেলেও পারেননি। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়ে গেলে শুরু হয় তীব্র সমালোচনার ঝড়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ওই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের বেঞ্চের নজরে আনেন। আদালত তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশারকে বরগুনার ডিসি ও এসপির সঙ্গে যোগাযোগ করে বেলা ২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দেন।
দুপুরে আবার আদালত বসলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ‘আমি এরই মধ্যে বরগুনার ডিসি, এসপি ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন এ ঘটনায় আজকে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।’ বিচারক বলেন, ‘যেহেতু গতকাল (বুধবার) ঘটনাটি প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটেছে তাই এর অ্যাকশন দ্রুত হওয়া উচিত ছিল। পুলিশের ভূমিকা জোরালো মনে হচ্ছে না।’ আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, বরগুনা যেহেতু সুন্দরবন ও সীমান্তের কাছে, সেহেতু আইজিপিকে জানাতে হবে যাতে আসামিরা কোনোভাবে সীমান্ত পার না হতে পারে।’
আদালত বলেন, ‘প্রকাশ্য রাস্তায় মানুষটাকে মারল। একজন ছাড়া কেউ এগিয়ে এলো না। জনগণকে আপনি কী করবেন? বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না। ভিডিও করল, কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না। এটি জনগণের ব্যর্থতা। তাই এই সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবে কে? দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ প্রতিবাদ করল না। পাঁচজন মানুষ অন্তত এগিয়ে আসলে হয়তো তারা সাহস পেত না। হয়তো তারা ক্ষমতাবান, হয়তো মানুষ ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’
ঘটনায় জড়িত কেউ রক্ষা পাবে না : আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল : বরগুনায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত কেউ রক্ষা পাবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, বরগুনার ঘটনায় সব আসামিকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা হবে। ইতিপূর্বে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাসহ যতগুলো চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে সব ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার হয়েছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, কেউ রক্ষা পাবে না।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ১০ বছর আগের পুলিশের সঙ্গে বর্তমান পুলিশের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমনে বর্তমান পুলিশ বাহিনী সক্ষম।
আগামী দিনে যারা নেতৃত্ব দেবে সেই যুবসমাজকে বাঁচাতে দেশকে জঙ্গি ও মাদকমুক্ত করার জন্য সরকার কাজ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দুটি বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।’ তিনি বলেন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিমধ্যে জঙ্গি দমনে সফলতা দেখিয়েছে। মাদকমুক্ত দেশগড়ার চ্যালেঞ্জেও তারা জিতবে। এটা আমাদের বিশ্বাস।
পুলিশ বাহিনীতে বর্তমানে মোট সদস্যের সাত শতাংশ নারী কর্মরত আছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তা ১০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার। এ জন্য আইজিপিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল দেশ এগিয়ে যাবে।