হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার ব্যবহার!

  • আপডেট: ০২:১৫:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ৫৫

—–গাজী মহিনউদ্দিন—–

ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পৃথিবীর মানচিত্রে শুধুই একটি মাত্র জাতি বাঙালি; যারা মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আত্মত্যাগ আর মহিমায় লালিত বাংলা ভাষা: এ ভাষা এমনিতেই অর্জিত হয়নি। এর এক করুণ ইতিহাস রচনার মধ্য দিয়ে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিশ্ব দরবারে। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি এদেশের আপামর ছাত্র জনতা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পাক-বাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন। ঢাকার রাজপথে সেদিন সালাম, জব্বার, বরকত, রফিকসহ শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।
আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৮ বছরেও স্বাধীনতা পায়নি বাংলা ভাষা। এদেশে সর্বত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে এক ধরণের কৃপণতা দেখা দিয়েছে। মুক্ত বিহঙ্গ বাংলা ভাষা বন্দি হয়ে পড়েছে ইংরেজির দাপটে।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বাংলা ভাষা রক্ষণশীলতায় বাঙালি জাতিকে সে দিন প্রতিবাদী করে তুলেছে। দ্বি-জাতি তথ্যের ভিত্তিতে বিভক্ত পাক-ভারত দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ‘জন্মতিথি’তে বাংলাভাষীদের পরিচয় পরাকাষ্টে, পরাধীনতার শিঙ্খলে ছিল বন্দি। মাতৃভাষা বাংলা অথচ উচ্চ আদালতের রায় এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্রে অবাধে চলছে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার।
১৯৭৫ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাকে রাষ্ট্র ও জাতীয় ভাষা ঘোষণা করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষাকে জীবনের সর্বস্তরে ব্যবহারের জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। অথচ বাংলাদেশের সর্বস্তরে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারের মর্যাদা পায়নি।
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলেও এদেশের উচ্চ আদালতের রায় অদ্যাবধি প্রকাশিত হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। আদালতের রায় কবে যে বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হবে সে প্রত্যাশা করছে জাতি। আদালতের রায় ইংরেজিতে প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ তা পড়তে পারে না। অনুবাদ জানার জন্য অন্যের দ্বারস্ত হতে হয়। রায় যদি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা অনুবাদ প্রকাশ পায় তবেই সর্বস্তরে মর্যাদা পাবে। ‘আদালতের রায়, বাংলা ভাষায় চাই’ এ যেন গণদাবীতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আদালতের রায় বাংলায়’ লিখতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আদালতের রায় লেখার সময় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের কথাও বলেছেন। এ বিষয়টি আমলে আনা হলে বিচারপ্রার্থীরা আদালতের রায় পড়ার সুযোগ পাবে।
প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। ডাক্তার তার ব্যবস্থাপত্রে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদে নিজের পরিচয় উল্লেখ করে থাকেন। দুঃখের বিষয় ব্যবস্থাপত্রে ঔষধের নাম তুলে ধরেন ইংরেজি ভাষায়। যা তাল-গোল পেছানো লেখা। অনেক সময় এ ইংরেজি লেখা স্পষ্ট ধরতে না পারার কারণে দোকানি এক ঔষধের স্থলে অন্য নামের ঔষধ সরবরাহ করে থাকে। যা অসুস্থ্য ব্যক্তিকে আরো মহামারি পথে ধাবিত হচ্ছে। চিকিৎসকরা নিজে সুবিধার জন্য অনেকেই সাংকেতি শব্দ ব্যবহার করে থাকে যা সাংঘর্ষিক। যদি ডাক্তারগন দেশ-প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে চিকিৎসা পত্র ইংরেজিতে না লিখে বাংলা লেখার প্রচলন শুরু করেন তবেই বাংলা ভাষার মর্যাদা সু-প্রতিষ্ঠিত হবে।
২১ ফেব্রুয়ারী আসলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি। ভাষা শহীদের স্মরণ করতে চলে নানান আয়োজন। পালিত হয় শোক র‌্যালি। সবই ঠিক-ঠাক থাকে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে উচ্চ-স্বরে মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেমে বেজে উঠা গান। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হিন্দি আর কু-রুচিপূর্ণ গানই শোভা পায়। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জিত হলেও হারিয়ে যাচ্ছে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার! এক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সচেতন এবং তৎপর?
রক্ষণশীলদের দায়িত্বহীন প্রবণতায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার। বিকৃতি ঘটছে বানানের ক্ষেত্রেও। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইংরেজি ভাষা। প্রমিত বাংলা জানা এবং শেখার অন্যতম মাধ্যম রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ গণমাধ্যম। সভ্যতার ক্রমবিকাশে সেখানেও নিজেদের মত করে নতুন নতুন শব্দ আবিষ্কার এবং সংস্কার করে যাচ্ছে। প্রতি বছর শব্দের আদি থেকে নতুনত্ব সৃষ্টির প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটি নির্ধারিত জায়গা থেকে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহারে নিয়ম নীতি বাস্তবায়ন সময়ের দাবী।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলে আমাদের দেশে নানান আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বই মেলার আয়োজন কনসাটে পরিণত হয়েছে। সেখানে ভাষা এবং সংস্কৃতির বড় বিপর্যয় দেখা দেয়। বাংলা একাডেমী বই মেলা ছাড়া আর কোন বই মেলায় বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বই মেলার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে দেশত্ববোধক গানের আড়ালে জাওয়ালি কাওয়ালি গান, নাচ আর নাটকে মুখরিত হয়ে উঠে। যা থেকে ভাষার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান আহরণ দূরের কথা, প্রমিত বাংলা ভাষা ব্যবহারে কৃপণতা দেখা দেয়।
এদেশের অধিকাংশ মানুষের হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। কম বেশি সবাই ব্যবহার করছে ফেসবকু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলা লেখার কথা বলে আর লাভ নেই। সেখানে ভুলে ভরা বানান। ভুল লেখতে গিয়ে ভুল (ভূল) করে অনেকে। এর একমাত্র কারণ প্রমিত বাংলা চর্চা না করা । প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার চর্চা কেন্দ্র এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখান থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে প্রমিত ভাষার বুলি। শিক্ষার্থীরা যথাযথ নিয়মে প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার সুযোগ পাচ্ছে না। অতীত ঐতিহ্য হিসেবে অবস্থান করছে।
ইংরেজির আদলে বাংলা ভাষায় কথা বলা একাংশ শ্রেণির মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠেছে। এক সময়ে ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুনে বাংলা ভাষার একক দখলে ছিল। সময়ের স্রোতাধারায় সেই ঐতিহ্যে থাবা মেরে বসেছে ইংরেজি। শহীদের বুকের তাজা রক্ত গৌরবে গাঁথা ইতিহাস ইংরেজি সাইনবোর্ডের দাপটে নিষ্প্রভ হতে চলছে। দোকানপাট, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন এবং প্রচার মাধ্যমে ভাষা ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার বিস্তৃতি জাতীয় আগ্রাসনের রূপ ধারণ করেছে। শিশুদের মস্তিকে হিন্দির প্রভাব বিস্তার করছে। যা জাতীয় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আকাশ সংস্কৃতির হিন্দি সিরিয়াল।
বিদেশী আকাশ সংস্কৃতি প্রভাব এবং ভাষা বিকৃতি রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। বাংলা ভাষা চর্চায় আইন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল হবে।
লেখক পরিচিতি:-
অধ্যয়নরত- মাস্টার্স (বাংলা বিভাগ)
চাঁদপুর সরকারি।
মোবাইল নং- ০১৮৫২৫৩২৪৭৩

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

দেশে HMPV ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু, বাড়ছে আতঙ্ক

হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার ব্যবহার!

আপডেট: ০২:১৫:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

—–গাজী মহিনউদ্দিন—–

ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। পৃথিবীর মানচিত্রে শুধুই একটি মাত্র জাতি বাঙালি; যারা মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আত্মত্যাগ আর মহিমায় লালিত বাংলা ভাষা: এ ভাষা এমনিতেই অর্জিত হয়নি। এর এক করুণ ইতিহাস রচনার মধ্য দিয়ে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিশ্ব দরবারে। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি এদেশের আপামর ছাত্র জনতা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পাক-বাহিনীর বন্দুকের নলের মুখে প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন। ঢাকার রাজপথে সেদিন সালাম, জব্বার, বরকত, রফিকসহ শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল।
আন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয়। ভাষা আন্দোলনের প্রায় ৬৮ বছরেও স্বাধীনতা পায়নি বাংলা ভাষা। এদেশে সর্বত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহারে এক ধরণের কৃপণতা দেখা দিয়েছে। মুক্ত বিহঙ্গ বাংলা ভাষা বন্দি হয়ে পড়েছে ইংরেজির দাপটে।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বাংলা ভাষা রক্ষণশীলতায় বাঙালি জাতিকে সে দিন প্রতিবাদী করে তুলেছে। দ্বি-জাতি তথ্যের ভিত্তিতে বিভক্ত পাক-ভারত দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ‘জন্মতিথি’তে বাংলাভাষীদের পরিচয় পরাকাষ্টে, পরাধীনতার শিঙ্খলে ছিল বন্দি। মাতৃভাষা বাংলা অথচ উচ্চ আদালতের রায় এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থা পত্রে অবাধে চলছে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার।
১৯৭৫ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাকে রাষ্ট্র ও জাতীয় ভাষা ঘোষণা করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষাকে জীবনের সর্বস্তরে ব্যবহারের জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। অথচ বাংলাদেশের সর্বস্তরে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারের মর্যাদা পায়নি।
স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলেও এদেশের উচ্চ আদালতের রায় অদ্যাবধি প্রকাশিত হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। আদালতের রায় কবে যে বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হবে সে প্রত্যাশা করছে জাতি। আদালতের রায় ইংরেজিতে প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ তা পড়তে পারে না। অনুবাদ জানার জন্য অন্যের দ্বারস্ত হতে হয়। রায় যদি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা অনুবাদ প্রকাশ পায় তবেই সর্বস্তরে মর্যাদা পাবে। ‘আদালতের রায়, বাংলা ভাষায় চাই’ এ যেন গণদাবীতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আদালতের রায় বাংলায়’ লিখতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আদালতের রায় লেখার সময় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের কথাও বলেছেন। এ বিষয়টি আমলে আনা হলে বিচারপ্রার্থীরা আদালতের রায় পড়ার সুযোগ পাবে।
প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে। ডাক্তার তার ব্যবস্থাপত্রে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি অনুবাদে নিজের পরিচয় উল্লেখ করে থাকেন। দুঃখের বিষয় ব্যবস্থাপত্রে ঔষধের নাম তুলে ধরেন ইংরেজি ভাষায়। যা তাল-গোল পেছানো লেখা। অনেক সময় এ ইংরেজি লেখা স্পষ্ট ধরতে না পারার কারণে দোকানি এক ঔষধের স্থলে অন্য নামের ঔষধ সরবরাহ করে থাকে। যা অসুস্থ্য ব্যক্তিকে আরো মহামারি পথে ধাবিত হচ্ছে। চিকিৎসকরা নিজে সুবিধার জন্য অনেকেই সাংকেতি শব্দ ব্যবহার করে থাকে যা সাংঘর্ষিক। যদি ডাক্তারগন দেশ-প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে চিকিৎসা পত্র ইংরেজিতে না লিখে বাংলা লেখার প্রচলন শুরু করেন তবেই বাংলা ভাষার মর্যাদা সু-প্রতিষ্ঠিত হবে।
২১ ফেব্রুয়ারী আসলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি। ভাষা শহীদের স্মরণ করতে চলে নানান আয়োজন। পালিত হয় শোক র‌্যালি। সবই ঠিক-ঠাক থাকে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে উচ্চ-স্বরে মাইক এবং সাউন্ড সিস্টেমে বেজে উঠা গান। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হিন্দি আর কু-রুচিপূর্ণ গানই শোভা পায়। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জিত হলেও হারিয়ে যাচ্ছে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার! এক্ষেত্রে আমরা কতটুকু সচেতন এবং তৎপর?
রক্ষণশীলদের দায়িত্বহীন প্রবণতায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার। বিকৃতি ঘটছে বানানের ক্ষেত্রেও। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইংরেজি ভাষা। প্রমিত বাংলা জানা এবং শেখার অন্যতম মাধ্যম রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ গণমাধ্যম। সভ্যতার ক্রমবিকাশে সেখানেও নিজেদের মত করে নতুন নতুন শব্দ আবিষ্কার এবং সংস্কার করে যাচ্ছে। প্রতি বছর শব্দের আদি থেকে নতুনত্ব সৃষ্টির প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একটি নির্ধারিত জায়গা থেকে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহারে নিয়ম নীতি বাস্তবায়ন সময়ের দাবী।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলে আমাদের দেশে নানান আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বই মেলার আয়োজন কনসাটে পরিণত হয়েছে। সেখানে ভাষা এবং সংস্কৃতির বড় বিপর্যয় দেখা দেয়। বাংলা একাডেমী বই মেলা ছাড়া আর কোন বই মেলায় বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বই মেলার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে দেশত্ববোধক গানের আড়ালে জাওয়ালি কাওয়ালি গান, নাচ আর নাটকে মুখরিত হয়ে উঠে। যা থেকে ভাষার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান আহরণ দূরের কথা, প্রমিত বাংলা ভাষা ব্যবহারে কৃপণতা দেখা দেয়।
এদেশের অধিকাংশ মানুষের হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। কম বেশি সবাই ব্যবহার করছে ফেসবকু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাংলা লেখার কথা বলে আর লাভ নেই। সেখানে ভুলে ভরা বানান। ভুল লেখতে গিয়ে ভুল (ভূল) করে অনেকে। এর একমাত্র কারণ প্রমিত বাংলা চর্চা না করা । প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার চর্চা কেন্দ্র এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখান থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে প্রমিত ভাষার বুলি। শিক্ষার্থীরা যথাযথ নিয়মে প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার সুযোগ পাচ্ছে না। অতীত ঐতিহ্য হিসেবে অবস্থান করছে।
ইংরেজির আদলে বাংলা ভাষায় কথা বলা একাংশ শ্রেণির মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠেছে। এক সময়ে ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুনে বাংলা ভাষার একক দখলে ছিল। সময়ের স্রোতাধারায় সেই ঐতিহ্যে থাবা মেরে বসেছে ইংরেজি। শহীদের বুকের তাজা রক্ত গৌরবে গাঁথা ইতিহাস ইংরেজি সাইনবোর্ডের দাপটে নিষ্প্রভ হতে চলছে। দোকানপাট, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন এবং প্রচার মাধ্যমে ভাষা ব্যবহারে পরিবর্তন আনতে হবে। বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার বিস্তৃতি জাতীয় আগ্রাসনের রূপ ধারণ করেছে। শিশুদের মস্তিকে হিন্দির প্রভাব বিস্তার করছে। যা জাতীয় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আকাশ সংস্কৃতির হিন্দি সিরিয়াল।
বিদেশী আকাশ সংস্কৃতি প্রভাব এবং ভাষা বিকৃতি রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। বাংলা ভাষা চর্চায় আইন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল হবে।
লেখক পরিচিতি:-
অধ্যয়নরত- মাস্টার্স (বাংলা বিভাগ)
চাঁদপুর সরকারি।
মোবাইল নং- ০১৮৫২৫৩২৪৭৩