আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো হাটহাজারীর জোড় ইজতেমা

  • আপডেট: ০২:২৬:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২১

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি॥
শীতের সকাল। কুয়াশায় ঢাকা চারদিকে। ভোর থেকে হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কে মানুষের ঢল উদ্দেশ্য চারিয়া ইজতেমার । সকাল নয়টার মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামের ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় মোনাজাতে অংশ নিতে আসা ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লিদের জনসমুদ্র। দুপুর ১২টা ৩৮মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত শেষ হয় ১টা ২মিনিটে। লাখো মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনির মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন দিনব্যাপী আলমী শূরার জোড় ইজতেমা।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। প্রায় ২৪ মিনিট ব্যাপী আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমাস্থলে লাখো লাখো মুসল্লির ঢল নামে। শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লিরা চট্টগ্রাম-খাড়গড়াছড়ি মহাসড়কে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হতে থাকে।

এ সময় ইজতেমা মাঠ ও আশপাশ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ দেখা যায়। সকাল নাগাদ ইজতেমার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা ও অলিগলিতে অবস্থান নেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমাস্থলের শামিয়ানায় পৌঁছাতে না পারা অনেক মুসল্লি মহাসড়ক ও সড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা পুরোনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। পার্শ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসাবাড়ি, দোকান ও যানবাহনের ছাদে অবস্থান নেন মুসল্লিরা। নারীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাঠের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাড়ির ছাদে ও উঠানে দাঁড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নেন তাঁরা। মাঠ থেকে এক দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন মোনাজাতে অংশ নিতে মাইকের ব্যবস্থা করেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর শুরু হয়। বিনম্র সুরে আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়ে বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন মারকাজ কাকরাইল মসজিদের খতিব আল্লামা হাফেজ জুবাইর আহমদ। তাঁর সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে “আমিন, আমিন ধ্বনি” তোলেন। এ সময় লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির “আমিন, আমিন ধ্বনিতে” মুখরিত হয়ে ওঠে হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকা। এ সময় মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে কেঁদে কেঁদে নিজেদের পাপমোচনে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মুসল্লিরা। তাঁরা পাপ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আকুতি-মিনতি করেছেন।

আখেরি মোনাজাতের ইজতেমার শেষে দিনে বাদ ফজর আমবয়ান করেন পাকিস্তানের মুরব্বি ডাক্তার নওশাদ। এ সময় তারই পার্শ্বে মঞ্চে উপবিষ্ট কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা নুরুর রহামন উক্ত বয়ান বাংলাতে তরজমা করেন। এবার ইজতেমা থেকে ১ চিল্লা, ৩ চিল্লা ও ১ বছরের জন্য ৩শ জামাত বের হয়েছে বলে এ প্রতিবেককে জানান ইজতেমা কমিটির সদস্য পাহারাদার ও জিম্মদার মেখল মাদ্রাসার সিনিয়ির শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।

মোনাজাতে অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও হাটহাজারীর সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি, মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, উপজেলা নির্বাহী অপিসার রুহুল আমিন, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আলম মাসুম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা,সংবাদ কর্মী জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেম-ওলামাবৃন্দরা।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

দেশে HMPV ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু, বাড়ছে আতঙ্ক

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো হাটহাজারীর জোড় ইজতেমা

আপডেট: ০২:২৬:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি॥
শীতের সকাল। কুয়াশায় ঢাকা চারদিকে। ভোর থেকে হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়কে মানুষের ঢল উদ্দেশ্য চারিয়া ইজতেমার । সকাল নয়টার মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামের ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় মোনাজাতে অংশ নিতে আসা ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লিদের জনসমুদ্র। দুপুর ১২টা ৩৮মিনিটে শুরু হয় আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত শেষ হয় ১টা ২মিনিটে। লাখো মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনির মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন দিনব্যাপী আলমী শূরার জোড় ইজতেমা।

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। প্রায় ২৪ মিনিট ব্যাপী আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমাস্থলে লাখো লাখো মুসল্লির ঢল নামে। শীত উপেক্ষা করে লাখো মুসল্লিরা চট্টগ্রাম-খাড়গড়াছড়ি মহাসড়কে পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হতে থাকে।

এ সময় ইজতেমা মাঠ ও আশপাশ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ দেখা যায়। সকাল নাগাদ ইজতেমার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা ও অলিগলিতে অবস্থান নেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমাস্থলের শামিয়ানায় পৌঁছাতে না পারা অনেক মুসল্লি মহাসড়ক ও সড়কে অবস্থান নেন। তাঁরা পুরোনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। পার্শ্ববর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাসাবাড়ি, দোকান ও যানবাহনের ছাদে অবস্থান নেন মুসল্লিরা। নারীদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাঠের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন বাড়ির ছাদে ও উঠানে দাঁড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নেন তাঁরা। মাঠ থেকে এক দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন মোনাজাতে অংশ নিতে মাইকের ব্যবস্থা করেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর শুরু হয়। বিনম্র সুরে আল্লাহর কাছে আকুতি জানিয়ে বাংলা ভাষায় মোনাজাত পরিচালনা করেন মারকাজ কাকরাইল মসজিদের খতিব আল্লামা হাফেজ জুবাইর আহমদ। তাঁর সঙ্গে লাখো মুসল্লি দুই হাত তুলে “আমিন, আমিন ধ্বনি” তোলেন। এ সময় লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির “আমিন, আমিন ধ্বনিতে” মুখরিত হয়ে ওঠে হাটহাজারীর চারিয়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকা। এ সময় মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে কেঁদে কেঁদে নিজেদের পাপমোচনে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মুসল্লিরা। তাঁরা পাপ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আকুতি-মিনতি করেছেন।

আখেরি মোনাজাতের ইজতেমার শেষে দিনে বাদ ফজর আমবয়ান করেন পাকিস্তানের মুরব্বি ডাক্তার নওশাদ। এ সময় তারই পার্শ্বে মঞ্চে উপবিষ্ট কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা নুরুর রহামন উক্ত বয়ান বাংলাতে তরজমা করেন। এবার ইজতেমা থেকে ১ চিল্লা, ৩ চিল্লা ও ১ বছরের জন্য ৩শ জামাত বের হয়েছে বলে এ প্রতিবেককে জানান ইজতেমা কমিটির সদস্য পাহারাদার ও জিম্মদার মেখল মাদ্রাসার সিনিয়ির শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী।

মোনাজাতে অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও হাটহাজারীর সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি, মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, উপজেলা নির্বাহী অপিসার রুহুল আমিন, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আলম মাসুম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা,সংবাদ কর্মী জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন মাদ্রাসার আলেম-ওলামাবৃন্দরা।