চাঁদপুর॥
তৃণমূল পুনর্গঠন নিয়ে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলা কমিটি তৃণমূলের মতামত না নিয়ে ইচ্ছামত পছন্দের লোক দিয়ে উপজেলা কমিটি গঠননের অভিযোগ আছে সাধারন নেতাকর্মীদের। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত ও সাংগঠনিক কাঠামো গতিশীল করার লক্ষে তৃণমল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাইকমান্ডের নির্দেশনা ছিল তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে ভোটাভুটির মাধ্যমে বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে ছিল, রাজনৈতিক মামলা হামলার শিকার হয়েছে ্এরকম দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে সকল কমিটি গঠন করা হবে।
সরেজমিনে প্রেরীত তথ্য মতে, মাঠ পর্যয়ের অসংখ্য নেতাকর্মীদের অভিযোগ চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ২০১৪ সালের শেষের দিকে অনুমোদিত হয়। উক্ত কমিটি ৭১ সদস্য বিশিষ্ট হলেও নাম রয়েছে ৩১জনের যার মধ্যে ৫জন মৃত্যুবরন করেছে। বেশিরভাগ যুগ্ম আহবায়ক পক্ষ ত্যাগ করেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ চাঁদপুর জেলা কমিটি তৃণমূল পুনর্গঠনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা না মেনেই জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জসহ সকল উপজেলার আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে। ফলস্বরূপ বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পাল্টা পাল্টি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছে। অপরদিকে জেলা কমিটি বলেছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশেই সকল কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের জন্যে চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিমুচ্ছালামকে সাংগঠনিক প্রধান করে টীম গঠন করে দেয়া হয়। গত ৬ জুলাই ফরিদগঞ্জে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি বিশেষ সাংগঠনিক সভার আয়োজন করলেও তা শুরুর পূর্বে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে পন্ড হয়ে যায়। ফলে সাংগঠনিক টীমের আর কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি লায়ন মোঃ হারুনুর রশিদকে অবহিত না করে বা কোনপ্রকার আলাপ আলোচনা ছাড়া গত ২৮ জুলাই জেলা বিএনপি ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ মোঃ ইউনুছকে আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট এবং ২ মাস পর আমানত গাজীকে ২৬ সেপ্টেম্বর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে করে উপজেলা ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলতে থাকে বিক্ষোভ মিছিল, মিটিং ও প্রতিবাদ সমাবেশ।
অন্যদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমিটির গঠিত আহ্বায়ক শরীফ মোঃ ইউনুছ এলাকায় বর্ধিত সভা না করেই ১৫টি ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক কমিটি বাতিল করে দিয়ে চাঁদপুর বসে সম্মেলন ছাড়া ব্যানার টানিয়ে ১৫টি ইউনিয়নের নতুন কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। নামকাওয়াস্তে পৌর বিএনপি’র বর্ধিত সভা হলেও ত্যাগী নেতাকর্মী না থাকার কারনে ঘরে বসেই ওয়ার্ড কমিটিগুলো করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌর বিএনপি’র এক নেতা জানালেন, মামলা-হামলার শিকার বিএনপির তৃণমূলের দুর্দিনের পরীক্ষিত কর্মীদের বাদ দিয়ে তাদের নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করার ফলে প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণার সাথে সাথে উক্ত ইউনিয়নে বিএনপি ও অঙ্সংগঠনের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করে। এই অবস্থায় গত ৫ অক্টোবর উপজেলা বিএনপির ঘোষিত কমিটির ৬ জন যুগ্ম আহ্বায়ক সংবাদ সম্মেলন করে ইউনিয়ন পর্যায়ের গঠিত কমিটিগুলোকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে সেগুলো বাতিল না করলে পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন।
সেই অনুযায়ী তারা গত ১১ অক্টোবর ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন আরম্ভ করে জাঁকজমকপূর্ণ প্যান্ডেল ও বহু নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে ১৫টি ইউনিয়ন বিএনপি’র ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড বিএনপির নতুন কমিটির নাম ঘোষণা দেয়। ফলে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সবকটি ওয়র্ডে এখন বিএনপির দুই কমিটি বিদ্যমান। তৃণমূলের উপস্থিতিতে ৬ জন যুগ্ম আহবায়কের দ্বারা গঠিত ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো ৯০ ভাগ শক্তিশালী। অন্যদিকে চাঁদপুর থেকে দেয়া পকেট কমিটির তেমন কোন প্রভাব তৃণমূলে নেই।
অপরদিকে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ৬ জন যুগ্ম আহ্বায়ককে গত ১৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়াতে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। ৬জন যুগ্ম আহবায়ক কারন দর্শানোর নোটিশের জবাবে সাফ জানিয়ে দেন, বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের ৯(ঘ) ধারা মতে বিগত ৫ বছরে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কোন সাংগঠনিক মিটিংয়ে জনাব মোঃ সেলিমুস সালামের নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি পুর্নগঠনে সাব-কমিটি করা এবং জনাব এ্যাডঃ সলিমউল্যা সেলিমকে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের পক্ষে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাহা তাদের জানা নেই। বিএনপির গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও সংগঠন বিরোধী কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত নেই। তাই, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মতে আমাদের বিরুদ্ধে কারন দর্শানো নোটিশ প্রদান করা যুক্তিসংগত নয় বলে তারা মনে করেন।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আজিজুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে যারা এখনো বিএনপিকে তৃণমূলে ধরে রেখেছে তাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাতকারীদের নিয়ে দলের কমিটি গঠিত কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপি’র স্থানীয় এমপি’র ইচ্ছানুযায়ী বা মতামত নিয়ে সকল কমিটি গঠন করা হলে কোন বিরোধ থাকতো না। তাছাড়া দলের চেয়ারপার্সন
অন্যদিকে বার বার সময় নির্ধারন করলেও অধ্যাবধি সম্মেলন করতে পারেনি গঠিত আহবায়ক কমিটি। ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আগামী ৭ ডিসেম্বর উভয় পক্ষেরই উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে এলাকায় বড় ধরনের সাংগঠনিক বিপর্জয় ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেও আশংঙ্কা করছেন সাধারন মানুষ। তাই, বিষয়টি সুরাহা করতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ফরিদগঞ্জ বিএনপির তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী।
প্রতিবেদক: বিশেষ প্রতিনিধি,