মেধা অর্জন ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছার উপর র্নিভর করে

  • আপডেট: ০১:৪৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৭

আলহাজ্ব এস.এম. চিশতী

মেধা অর্জন করতে হয়।বিশিষ্ট দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলতে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যে কেউ প্রতিভাবান হতে পারে ।বাফেন নামক একজন মনীষী বলেছেন, প্রতিভা মানে বিরাট ধৈর্য।কোনো ছাত্র-ছাত্রী নিজের উপর আস্থা হারালে মেধার বিকাশ হবে না।
মনে রাখতে পারা জন্মগত প্রতিভার ব্যাপার নয় ।সাধনা করলে স্মরণশক্তি বাড়ানো যায়। স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছার উপর র্নিভর করে, কারণ একটি কম্পিউটারের মূল্যের চেয়ে মানুষের ব্রেনের মূল্য কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকা বেশি! এ মহামূল্যবান ব্রেনটাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের শকুন্তলা দেবী কম্পিউটারের মতো তড়িৎ গতিতে যে কোন গাণিতিক হিসাব সমাধান করতে পারতেন। এ কারণে তাঁকে ‘মানব কম্পিউটার’ হিসেবে উপাধি দেয়া হয়েছে।
যাদুকর জুয়েল আইচ খেলা দেখাতে গিয়ে মাত্র একবার শুনে শতাধিক দর্শকের নাম অবলীলায় বলে যাচ্ছিলেন। যাদের নাম বলে দিচ্ছিলেন তারা অবাক হয়ে মনে করছিলেন এ হচ্ছে যাদু। আসলে তা নয় । এটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর স্মরণশক্তি ও সাধনার গুণে। তাই স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য একজন ছাত্র/ছাত্রীকে প্রথমে নিজের উপর আস্থা স্থাপন করতে হবে। আর নিজের মনোদৈহিক প্রক্রিয়াকে একটু বুঝতে চেষ্টা করলেই এ আস্থা ও আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
যারা শিক্ষার্থী তাদের নিজের দেহের কথা ভাবতে হবে । আপনাদের প্রত্যেকের দেহে-ই রয়েছে পাঁচ শতাধিক মাংশপেশি দু’শতাধিক হাড়, পঞ্চাশ ট্রিলিয়ন দেহকোষ বা সেলের সমন্বয়ে গঠিত এ শরিরের প্রতিটি সেলে খাবার পৌঁছানের জন্য রয়েছে শিরা ও ধমনির ষাট মাইল দীর্ঘ পাইপ লাইন।এ ছাড়া আপনাদের হার্ট ক্লান্তি ছাড়াই প্রতিদিন একলক্ষ বার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬’শ গ্যালনেরও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে। এর পরও আপনারা যদি নিজেদেরকে অভাবগ্রস্থ মনে করে থাকেন এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছুই হতে পারে না।
কারণ আপনাদের মনোদৈহিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্রেন হচ্ছে যে কোন কম্পিউটারের চেয়ে দশ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালি আর এটাতো আপনারাও জানেন সভ্যতার সবকিছুর পেছনেই রয়েছে মানুষের ব্রেনের ক্ষমতার সৃজনশীল উপহার।
মানুষ ইচ্ছে করলেই সাধনার মাধ্যমে নিজের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে যার প্রমাণ খ্যাতনামা মুসলিম দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (র:) যিনি ছোট বেলায় কোনো কিছু মনে রাখতে পারতেননা তাই সব কিছু নোট করে খাতাগুলো সাথে রাখতেন।
একবার মরুভূমিতে তিনি ডাকাত দলের পাল্লায় পড়েন তখন সবকিছুর বিনিময়ে খাতাগুলো রক্ষার চেষ্টা করেন ।ডাকাত দলের সর্দার ক্ষিপ্ত হয়ে খাতাগুলো কেড়ে নেন। ইমাম গাজ্জালী (র:)তখন খাতাগুলোর জন্য ডাকাত সর্দারের কাছে অনুনয় করে বলেন,আমার সকল জ্ঞান তোমরা নিয়ে যেও না।ডাকাত সর্দার কৌতুক করে বলেন,যে জ্ঞান ডাকাত নিয়েযেতে পারে সে জ্ঞান দিয়ে কী হবে?তিনি এর পর আর কোনদিন কোন কিছু খাতায় নোট করেননি । গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করে অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়ে উঠেন।
বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন।তিনি জীবনের প্রথম স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেন। অবশ্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হন।এর পর কোনো রকমে ডিগ্রি পাশ করেন ।ইন্টরভিউবোর্ডের সামনে কিছুতেই কোনো প্রশ্নের উত্তর আসতো না তাই চাকরী লাভের আশা ছেড়েদিলেন।তিনি নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলেন।অন্তর থেকে পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করলেন।মাত্র দু’ বছরের চেষ্টায় অসাধারণ উন্নতি ঘটালেন।এর পর ২০ বছরের মাথায় তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
বৈজ্ঞানিক স্যার আইজেক নিউটন বলেছেন, আমার আবিষ্কারের কারণ আমার প্রতিভা নয়।বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও কঠোর পরিশ্রম করেই আমি জটিল তথ্য ও তত্ত্বসমুহ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।
নিউটন যদি চিন্তা করে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হতে পারেন।তাহলে আপনারা যারা নিরলস পরিশ্রম করে লেখাপড়া করবেন, তারা অবশ্যেই সফল হবেন।অতিত ইতিহাস তাই বলে।আমরা দেখেছি অধিকাংশ মেধাবি ছাত্র-ছাত্রী পরিশ্রম করেই নিজেকে প্রতিভাবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।একটি উদাহরণের সাহায্যে বলি,ধরোন দু’টি চারা গাছ সেখান থেকে একটি চারা গাছকে যদি পরিচর্যা করা হয় তাহলে এ চারা গাছটি তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে অনেক মোটা তাজা হয়ে সবার দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হবে।আর অন্য গাছটি পরিচর্যার অভাবে
সেটি মারা না গেলেও দেখবেন গাছটি ছোট হয়ে রয়েছে।একই ধরণের ব্যাপার ঘটে মেধা থাকার পরও যে ছাত্র-ছাত্রীরা ভালোভাবে লেখাপড়া করে না তারা সবার কাছে ছোট হয়ে থাকে।আর যারা পরিশ্রম করে ভালোভাবে লেখাপড়া করে তারা সবার কাছে বড় হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বিখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী ডালটোনের উক্তি দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই।তিনি বলেছেন,“মানুষ আমাকে প্রতিভাবান বলে।কিন্তু আমি পরিশ্রম করা ছাড়া আমার মধ্যে বিশেষ কোন ক্ষমতা আছে বলে আমার জানানেই।” পরিশেষে শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, আপনারা কঠোর পরিশ্রম করলেই মেধাবি হিসেবে
সুনাম অর্জনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়া মেধাবী হবার নেই কোন সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট,কবি ও সাহিত্যিক
সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ,

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিচারের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে-ড. ইউনুস

মেধা অর্জন ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছার উপর র্নিভর করে

আপডেট: ০১:৪৩:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

আলহাজ্ব এস.এম. চিশতী

মেধা অর্জন করতে হয়।বিশিষ্ট দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলতে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যে কেউ প্রতিভাবান হতে পারে ।বাফেন নামক একজন মনীষী বলেছেন, প্রতিভা মানে বিরাট ধৈর্য।কোনো ছাত্র-ছাত্রী নিজের উপর আস্থা হারালে মেধার বিকাশ হবে না।
মনে রাখতে পারা জন্মগত প্রতিভার ব্যাপার নয় ।সাধনা করলে স্মরণশক্তি বাড়ানো যায়। স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছার উপর র্নিভর করে, কারণ একটি কম্পিউটারের মূল্যের চেয়ে মানুষের ব্রেনের মূল্য কমপক্ষে চার হাজার কোটি টাকা বেশি! এ মহামূল্যবান ব্রেনটাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের শকুন্তলা দেবী কম্পিউটারের মতো তড়িৎ গতিতে যে কোন গাণিতিক হিসাব সমাধান করতে পারতেন। এ কারণে তাঁকে ‘মানব কম্পিউটার’ হিসেবে উপাধি দেয়া হয়েছে।
যাদুকর জুয়েল আইচ খেলা দেখাতে গিয়ে মাত্র একবার শুনে শতাধিক দর্শকের নাম অবলীলায় বলে যাচ্ছিলেন। যাদের নাম বলে দিচ্ছিলেন তারা অবাক হয়ে মনে করছিলেন এ হচ্ছে যাদু। আসলে তা নয় । এটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর স্মরণশক্তি ও সাধনার গুণে। তাই স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য একজন ছাত্র/ছাত্রীকে প্রথমে নিজের উপর আস্থা স্থাপন করতে হবে। আর নিজের মনোদৈহিক প্রক্রিয়াকে একটু বুঝতে চেষ্টা করলেই এ আস্থা ও আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
যারা শিক্ষার্থী তাদের নিজের দেহের কথা ভাবতে হবে । আপনাদের প্রত্যেকের দেহে-ই রয়েছে পাঁচ শতাধিক মাংশপেশি দু’শতাধিক হাড়, পঞ্চাশ ট্রিলিয়ন দেহকোষ বা সেলের সমন্বয়ে গঠিত এ শরিরের প্রতিটি সেলে খাবার পৌঁছানের জন্য রয়েছে শিরা ও ধমনির ষাট মাইল দীর্ঘ পাইপ লাইন।এ ছাড়া আপনাদের হার্ট ক্লান্তি ছাড়াই প্রতিদিন একলক্ষ বার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬’শ গ্যালনেরও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে। এর পরও আপনারা যদি নিজেদেরকে অভাবগ্রস্থ মনে করে থাকেন এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছুই হতে পারে না।
কারণ আপনাদের মনোদৈহিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্রেন হচ্ছে যে কোন কম্পিউটারের চেয়ে দশ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালি আর এটাতো আপনারাও জানেন সভ্যতার সবকিছুর পেছনেই রয়েছে মানুষের ব্রেনের ক্ষমতার সৃজনশীল উপহার।
মানুষ ইচ্ছে করলেই সাধনার মাধ্যমে নিজের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে পারে যার প্রমাণ খ্যাতনামা মুসলিম দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (র:) যিনি ছোট বেলায় কোনো কিছু মনে রাখতে পারতেননা তাই সব কিছু নোট করে খাতাগুলো সাথে রাখতেন।
একবার মরুভূমিতে তিনি ডাকাত দলের পাল্লায় পড়েন তখন সবকিছুর বিনিময়ে খাতাগুলো রক্ষার চেষ্টা করেন ।ডাকাত দলের সর্দার ক্ষিপ্ত হয়ে খাতাগুলো কেড়ে নেন। ইমাম গাজ্জালী (র:)তখন খাতাগুলোর জন্য ডাকাত সর্দারের কাছে অনুনয় করে বলেন,আমার সকল জ্ঞান তোমরা নিয়ে যেও না।ডাকাত সর্দার কৌতুক করে বলেন,যে জ্ঞান ডাকাত নিয়েযেতে পারে সে জ্ঞান দিয়ে কী হবে?তিনি এর পর আর কোনদিন কোন কিছু খাতায় নোট করেননি । গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করে অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়ে উঠেন।
বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন।তিনি জীবনের প্রথম স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেন। অবশ্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হন।এর পর কোনো রকমে ডিগ্রি পাশ করেন ।ইন্টরভিউবোর্ডের সামনে কিছুতেই কোনো প্রশ্নের উত্তর আসতো না তাই চাকরী লাভের আশা ছেড়েদিলেন।তিনি নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলেন।অন্তর থেকে পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করলেন।মাত্র দু’ বছরের চেষ্টায় অসাধারণ উন্নতি ঘটালেন।এর পর ২০ বছরের মাথায় তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
বৈজ্ঞানিক স্যার আইজেক নিউটন বলেছেন, আমার আবিষ্কারের কারণ আমার প্রতিভা নয়।বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও কঠোর পরিশ্রম করেই আমি জটিল তথ্য ও তত্ত্বসমুহ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।
নিউটন যদি চিন্তা করে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল হতে পারেন।তাহলে আপনারা যারা নিরলস পরিশ্রম করে লেখাপড়া করবেন, তারা অবশ্যেই সফল হবেন।অতিত ইতিহাস তাই বলে।আমরা দেখেছি অধিকাংশ মেধাবি ছাত্র-ছাত্রী পরিশ্রম করেই নিজেকে প্রতিভাবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।একটি উদাহরণের সাহায্যে বলি,ধরোন দু’টি চারা গাছ সেখান থেকে একটি চারা গাছকে যদি পরিচর্যা করা হয় তাহলে এ চারা গাছটি তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে অনেক মোটা তাজা হয়ে সবার দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হবে।আর অন্য গাছটি পরিচর্যার অভাবে
সেটি মারা না গেলেও দেখবেন গাছটি ছোট হয়ে রয়েছে।একই ধরণের ব্যাপার ঘটে মেধা থাকার পরও যে ছাত্র-ছাত্রীরা ভালোভাবে লেখাপড়া করে না তারা সবার কাছে ছোট হয়ে থাকে।আর যারা পরিশ্রম করে ভালোভাবে লেখাপড়া করে তারা সবার কাছে বড় হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বিখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী ডালটোনের উক্তি দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই।তিনি বলেছেন,“মানুষ আমাকে প্রতিভাবান বলে।কিন্তু আমি পরিশ্রম করা ছাড়া আমার মধ্যে বিশেষ কোন ক্ষমতা আছে বলে আমার জানানেই।” পরিশেষে শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, আপনারা কঠোর পরিশ্রম করলেই মেধাবি হিসেবে
সুনাম অর্জনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়া মেধাবী হবার নেই কোন সহজ ও সংক্ষিপ্ত পথ।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট,কবি ও সাহিত্যিক
সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ,