নিজস্ব প্রতিবেদক:
“সিরিয়াল নিতে ঘুষ ও আমার অবস্থান। আমাকে সৎ বলবেন না। আমি সৎ নই। কারণ আমার সব বিচারের রায় সমতার ভিত্তিতে হয়নি। আমি সব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাকে ঘৃণা করুন। এ জীবনের সঠিক সত্য কি বুঝতে পারিনি। আমরা যেমন মানুষ তেমনই আমাদের সমাজ। আমরা বন দেখতে গিয়ে পাতার দিকে তাকিয়ে বনের বিশালতা নিয়ে কখনোই ভাবি না।
আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে বাস্তবতা ও নিরপেক্ষতা মেনে কথা বলিনা। আমাদের চাহিদা অনেক। কিন্তু সম্পদ, দক্ষতার ঘাটতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেই না। পুলিশ অফিসার বা যাদের হাতে ক্ষমতা বেশি তাদের বিরুদ্ধে উচ্চবাচ্য করার সাহস রাখি না। শুধু পারি হাসপাতালের যে কোন ঘটনাকে অতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে উপস্থাপন করতে। অভিযোগ করার নিয়ম হাসপাতালের সব জায়গায় লিখা আছে। ফেসবুকে মন্তব্যের মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ করছি তাতে মনে হয় সাবালক হইনি।
আমার অবস্থানে থেকে ১০ দিন থেকে হাসপাতাল চালান। তারপর আমাকে ফাঁসি দিন। মতামতের স্বাধীনতাকে অমর্যাদাকর অবস্থায় নিয়ে যেয়ে হাসপাতালের অগ্রযাত্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। এটা করতে থাকলে ২০১৫ আগের চেয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি চলবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকুলতা নিয়েই ৪ বছর হাসপাতাল চালিয়ে আসছি। কোন সংস্থা শতভাগ সফল নয়, কারণ আমরা মন ও কথায় এবং কাজে এক নই।
ভাল মন্দ মিলিয়ে চরম ধৈর্য্য নিয়ে এ চার বছর সংগ্রাম করছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। একথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি সাধারণ জনগণের সুচিকিৎসার ব্যাপারে আমি শতভাগ ভালবাসা নিয়েই কাজ করি। সংস্থার ঐক্যের স্বার্থে অনেক কিছু নিয়ে কথা বলি না কারন আমাকে এদেরকে নিয়েই কাজ করতে হয়। আমি চাইলেও সব কিছু শতভাগ ঠিক হবে না। আমি গুণীজন না। বিবেকের কাছে আমি একজন ঘৃনীত মানুষ।”
চিকিৎসা সেবায় দেশের শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহম্মেদ গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এভাবেই ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি আরেক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “১০০০ শয্যার হাসপাতালে ৩২০০ রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আউটডোর এ ২০০০ এর পরিবর্তে ৫০০০ জনকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ১৯৮৭ সাল থেকে আমি ডাক্তার। তারপর থেকেই আমার প্রেম হয়ে রোগীদের সাথে। এখানে কোনো প্রাপ্তির প্রেম নেই। এই প্রেম শুধু দেয়া। এ পর্যন্ত বহু মানুষের জীবনে ভ্যালু বা কল্যাণ যোগ করতে পেরেছি স্রষ্টার দয়ায়।”
উল্লেখ্য, গত চার বছর পুর্বে হাসপাতালে যোগদান করেই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিক্যাটদের বিরুদ্ধে ক্রসেড ঘোষণা করেছিলেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন আহম্মেদ। অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই সিমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ করেছেন। উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছেন। বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছেন তিনি।
দীর্ঘ চারবছর সকল অপশক্তির সাথে আপোষহীন লড়াই করেছেন। এক সময়ের দুর্নীতির আখড়া হিসেবে কথিত হাসপাতালকে দেশের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেছেন ক্লিনম্যান খ্যত রোগী দরদী এ পরিচালক। বাংলাদেশে সকল সরকারি ও প্রাইভেটঁ হাসপাতালগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উন্নত চিকিৎসাসেবায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজরা এক্যবদ্ধ হয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহম্মেদকে বদলি করতে কোটি টাকার ফান্ডও গঠন করে।
রোগী দরদী পরিচালক নাসির উদ্দিন আহম্মেদ বদলির সংবাদে ও বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আট ঘাট বেধে মাঠে নামেন ময়মনসিংহের লক্ষ লক্ষ উত্তাল জনতা। বিক্ষোভ মিছিল মানববন্ধন প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারক লিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করে। সর্বশেষে ময়মনসিংহবাসীর অশুন্ঠ সমর্থন ও দাবির পরিপেক্ষিতে পরিচালকের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার।
ফেইসবুকে, টুইটারে, বিশিষ্ট নাগরিক থেকে শুরু করে হাজার হাজার নানা পেশাজিবী মানুষ অভিন্ন কন্ঠে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হাজার হাজার মানুষের লিখেছেন ভয় পাবেননা স্যার, এগিয়ে যান আমরা আছি আপনার পাশে। আবার অনেকেই লিখেছেন, আপনার মত ভাল মানুষের জন্য ময়মনসিংহবাসী জীবন দিতেও প্রস্তুত আছে।
এই হাসপাতালের ডাক্তার সামিউল নাসিমসহ বেশ কয়েকজন ডাক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পরিচালক স্যারের কথায় ধৈর্য্যসহকারে কাজ করে আমরা পরিপূর্ণতা পেয়েছি। হাসপাতালেরও পরিপূর্ণ সাফল্য এসেছে।’