হাজীগঞ্জে গৃহবধুর আত্মহত্যা, ইউপি সদস্যের ৩ লক্ষ টাকা ভাগাভাগির ঘটনায় তোলপাড়!

  • আপডেট: ১২:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯
  • ৩০

বিশেষ প্রতিনিধি॥
হাজীগঞ্জে গৃহবধুর আত্মহত্যার ঘটনায় ইউপি সদস্যের ৩লক্ষ টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। ১৫ অক্টোবর উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সেন্দ্রা গ্রামের দক্ষিণ ধোপা বাড়ির জয় রামের ছেলে ঝুটন চন্দ্র দাসের স্ত্রী পপি রাণী দাস (১৯) সাংসারিক অভাব অনটনে রাগে ক্ষোভে ইঁদুর ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ও ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে ১৯ অক্টোবর শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

এ ঘটনায় পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ্বাস বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর দায়ে মামলা করে। যার মামলা নং০১/৩৫, তারিখ-১৯/১০/২০১৯।

গৃহবধু পপিরাণী দাসের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আনিছুর রহমান সোহেলের মধ্যস্থতায় ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করা হলেও পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ্বাসের হাতে দেড় লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাকী দেড় লক্ষ টাকা রহস্যে ঘেরা! ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান সোহেলসহ কয়েকজন ভাগ-বন্টন করে দেয়।

গত ১৫ অক্টোবর ভোরে ঈদুর ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে পপি রাণী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী ঝুটন চন্দ্র দাস এবং চাচা শ^শুর অমলচন্দ্র দাস। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পপি রাণী দাসকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর ভর্তি রাখলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পপি রাণীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ৪দিন পর ১৯ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। মৃত্যু বরণ করার ঘটনায় সমঝোতাকে কেন্দ্র করে ৩ লক্ষ টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।

পপি রাণী দাসের স্বামী ঝুটনচন্দ্র দাস একটি এনজিও সংস্থায় সামান্য বেতনে চাকরি করে। যা দিয়ে টানাটানির মধ্যে সংসার চলে। স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় অনেকটাই পথে বসার উপক্রম হয়েছে এ পরিবার। এর মাঝে শিশু সন্তান নিয়েও বিপাকে রয়েছে ঝুটনের পরিবার। স্ত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় এনজি অন্বেষা থেকে ৪লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে পপি রাণী দাসের পরিবারের দাবী মেটাতে হয়েছে। যার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ইতোমধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে এ পরিবার।

প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিক ভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সেন্দ্রা গ্রামের দক্ষিণ ধোপা বাড়ির জয় রামের ছেলে ঝুটন চন্দ্র দাসের সাথে কচুয়া উপজেলার পালাখাল ইউনিয়নের বাচাইয়া মাঝি বাড়ির জীবন বিশ^াসের মেয়ে পপি রাণী দাস বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এর মাঝে তাদের এক সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে মাঝে মধ্যে ঝগড়া হতো। পপিরাণী দাস ত্যাজী স্বভাবের কারণে কোন ঘটনা সহজে মেনে নিতে পারতেন না।

ঝুটনের চাচা অমল চন্দ্র দাস বলেন, যা চাওয়া হয়েছে আমরা তা দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা আর কোন কথা বলতে চাই না। হাসপাতালে দৌঁড়া-দৌঁড়ি করার কারণে আমি বাড়িতে এসেই ঘুমিয়ে পড়ি। পড়ে জানতে পারি ইউপি সদস্যের মাধ্যমে একটি সমাধান হয়েছে। আমাদের কাছে যা চেয়েছে তা আমরা দিয়েছি। এর জন্য অন্বেষা থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন জায়গা বিক্রি করে তা পরিশোধ করতে হবে।

পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে ফোন কেটে দেন।

ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান সোহেলের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ঝুটন চন্দ্র দাসের বাবা জয়রাম দাসের কাছ থেকে আমি ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছি। এর মধ্যে পপি রানী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। আমাকে ফাঁদে ফেলে একটি পক্ষ আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। কারা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আপনাদের সাথে দেখা করবো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই সাধন চন্দ্র বলেন, পপি রানী দাস বিষক্রিয়ায় মারাগেছে নাকি অন্য কোন কারণে মারাগেছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে জানাযাবে। তিনি বলেন, পপি রানীর শশুরের পরিবার থেকে কেউ টাকা নিয়েছে কিনা আমি জানিনা, তাদের কাছ থেকে থানা পুলিশ এক টাকাও নেইনি। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে মৃতদেহ বাড়িতে আসলে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মেডিকেল রিপোর্ট আসলে বলা নিশ্চিত বলা যাবে। এ বিষয়ে অর্থ বান্যিজ্যের সাথে পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই। থানায় আসলে মেয়ের বাবাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। যেহেতু অভিযোগ পেয়েছে এ ঘটনায় খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ঋণের কথা বলে শাহবাগে সমাবেশের ডাক, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আহ্বায়ক মোস্তফা আটক

হাজীগঞ্জে গৃহবধুর আত্মহত্যা, ইউপি সদস্যের ৩ লক্ষ টাকা ভাগাভাগির ঘটনায় তোলপাড়!

আপডেট: ১২:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

বিশেষ প্রতিনিধি॥
হাজীগঞ্জে গৃহবধুর আত্মহত্যার ঘটনায় ইউপি সদস্যের ৩লক্ষ টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। ১৫ অক্টোবর উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সেন্দ্রা গ্রামের দক্ষিণ ধোপা বাড়ির জয় রামের ছেলে ঝুটন চন্দ্র দাসের স্ত্রী পপি রাণী দাস (১৯) সাংসারিক অভাব অনটনে রাগে ক্ষোভে ইঁদুর ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ও ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে ১৯ অক্টোবর শনিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

এ ঘটনায় পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ্বাস বাদী হয়ে হাজীগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর দায়ে মামলা করে। যার মামলা নং০১/৩৫, তারিখ-১৯/১০/২০১৯।

গৃহবধু পপিরাণী দাসের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আনিছুর রহমান সোহেলের মধ্যস্থতায় ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করা হলেও পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ্বাসের হাতে দেড় লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাকী দেড় লক্ষ টাকা রহস্যে ঘেরা! ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান সোহেলসহ কয়েকজন ভাগ-বন্টন করে দেয়।

গত ১৫ অক্টোবর ভোরে ঈদুর ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে পপি রাণী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী ঝুটন চন্দ্র দাস এবং চাচা শ^শুর অমলচন্দ্র দাস। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পপি রাণী দাসকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর ভর্তি রাখলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখা দিলে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পপি রাণীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ৪দিন পর ১৯ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। মৃত্যু বরণ করার ঘটনায় সমঝোতাকে কেন্দ্র করে ৩ লক্ষ টাকার অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।

পপি রাণী দাসের স্বামী ঝুটনচন্দ্র দাস একটি এনজিও সংস্থায় সামান্য বেতনে চাকরি করে। যা দিয়ে টানাটানির মধ্যে সংসার চলে। স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় অনেকটাই পথে বসার উপক্রম হয়েছে এ পরিবার। এর মাঝে শিশু সন্তান নিয়েও বিপাকে রয়েছে ঝুটনের পরিবার। স্ত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় এনজি অন্বেষা থেকে ৪লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে পপি রাণী দাসের পরিবারের দাবী মেটাতে হয়েছে। যার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ইতোমধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে এ পরিবার।

প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিক ভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সেন্দ্রা গ্রামের দক্ষিণ ধোপা বাড়ির জয় রামের ছেলে ঝুটন চন্দ্র দাসের সাথে কচুয়া উপজেলার পালাখাল ইউনিয়নের বাচাইয়া মাঝি বাড়ির জীবন বিশ^াসের মেয়ে পপি রাণী দাস বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এর মাঝে তাদের এক সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে মাঝে মধ্যে ঝগড়া হতো। পপিরাণী দাস ত্যাজী স্বভাবের কারণে কোন ঘটনা সহজে মেনে নিতে পারতেন না।

ঝুটনের চাচা অমল চন্দ্র দাস বলেন, যা চাওয়া হয়েছে আমরা তা দিয়েছি। এ নিয়ে আমরা আর কোন কথা বলতে চাই না। হাসপাতালে দৌঁড়া-দৌঁড়ি করার কারণে আমি বাড়িতে এসেই ঘুমিয়ে পড়ি। পড়ে জানতে পারি ইউপি সদস্যের মাধ্যমে একটি সমাধান হয়েছে। আমাদের কাছে যা চেয়েছে তা আমরা দিয়েছি। এর জন্য অন্বেষা থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন জায়গা বিক্রি করে তা পরিশোধ করতে হবে।

পপি রাণী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে ফোন কেটে দেন।

ইউপি সদস্য আনিছুর রহমান সোহেলের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান, ঝুটন চন্দ্র দাসের বাবা জয়রাম দাসের কাছ থেকে আমি ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছি। এর মধ্যে পপি রানী দাসের বাবা জীবন বিশ^াসকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। আমাকে ফাঁদে ফেলে একটি পক্ষ আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। কারা নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আপনাদের সাথে দেখা করবো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই সাধন চন্দ্র বলেন, পপি রানী দাস বিষক্রিয়ায় মারাগেছে নাকি অন্য কোন কারণে মারাগেছে ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে জানাযাবে। তিনি বলেন, পপি রানীর শশুরের পরিবার থেকে কেউ টাকা নিয়েছে কিনা আমি জানিনা, তাদের কাছ থেকে থানা পুলিশ এক টাকাও নেইনি। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে মৃতদেহ বাড়িতে আসলে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। মেডিকেল রিপোর্ট আসলে বলা নিশ্চিত বলা যাবে। এ বিষয়ে অর্থ বান্যিজ্যের সাথে পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই। থানায় আসলে মেয়ের বাবাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। যেহেতু অভিযোগ পেয়েছে এ ঘটনায় খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।