• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬ মার্চ, ২০২২
সর্বশেষ আপডেট : ৬ মার্চ, ২০২২

হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে আতংকের নাম নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুস শাহাদাত

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

মো. জহির হোসেন:

উপজেলা পর্যায়ে একজন নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুস শাহাদাত। তার নাম শুনলে আতকে উঠেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এ যেন এক ফিল্মের খলনায়ক। একমাত্র হাতিয়ার প্রতিবন্ধী হওয়ার নাটক। যখন কোন বদলী অর্ডার কিংবা অভিযোগ আসে তখনি হয়ে যান প্রতিবন্ধী, হাটার জন্য ব্যবহার করেন ছড়ি লাঠি। সে নিজেকে সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে লিডার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

নৈশ্য প্রহরী নাজমুস শাহাদাতের ভয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে স্থায়ী ভাবে আসতে রাজী হয় না কোন কর্মকর্তা। দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব কর্মকর্তা দিয়েই চলছে সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। এ নৈশ্য প্রহরীর নিরাপত্তার গায়েবী শিকারে দিশেহারা কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নিজ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ের কোন কর্মকর্তাই এ নিরাপত্তা প্রহরীর অপকৌশল থেকে রেহায় পায়নি ।

হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী নাজমুলের দৌরাত্মে দিশেহারা অত্র অফিসের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কার্যালয়ে বেনামে চিঠি দিয়ে দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠে আসছে। নাজমুস শাহাদাতের নিয়ন্ত্রনে থাকে অফিসের ফাইল । এ নিয়ে প্রতিবাদ করে নানাভাবে বিপদগ্রস্ত হয়েছেন এ অফিসের অনেক সাবেক কর্মকর্তা।

এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে উপজেলা খাদ্য গুদাম কার্যালয়ে কর্মরত সহকারি উপ-খাদ্য পরিদর্শক নাছিমুল করিম ও নৈশ্য প্রহরী কামাল হোসেন।

২০১২ সালে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে নিজ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একের পর এক হয়রানির অভিযোগ ফুঁসে উঠছে। সরকারি চাকরীতে থাকা অবস্থায় প্রতিবন্ধী ভাতাসহ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকারি বাড়তি সুবিধা আদায় করে আসছে এ নিরাপত্তা প্রহরী।

চাকরীতে যোগদানের পর অফিস কর্মকর্তাকে জিম্মি করতে কখনো সাংবাদিক, কখনো উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মীয় স্বজন, আবার কখনো প্রতিবন্ধী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে। রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে অফিস কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে।

নৈশ্যপ্রহরী নাজমুস শাহাদাত হাজীগঞ্জ আমিন মেমোরিয়ার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করলেও বয়স কম দেখিয়ে হাজীগঞ্জ অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে অষ্টম শ্রেণি পাশের জাল সনদ তৈরি করে চাকরীতে যোগদান করে। রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের সুপারিশে খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরে চাকরী পেয়েছেন বলে অকপটে স্বীকার করেন নাজমুস শাহাদাত।

২০১২ সালে নোয়াখালী জেলা সদরে চাকরিরত অবস্থায় তৎকালীন সময়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বাবুলকে সাংবাদিক পরিচয়ে হুমকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় তাকে হাতে নাতে ধরে মানিব্যাগ যাচাই ১৫ থেকে ২০টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়, এবং মুছলেকা দিয়ে ছাড়া পায় নাজমুস শাহাদাত।

নোয়াখালী জেলা সদওে চাকরী স্থায়ীকরণ হলেও ক্ষমতার বলে সংযুক্তিতে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ নিজ উপজেলা হাজীগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। যা নিয়ম বহিভূত। একাধিক বার বদলীর অর্ডার আসলেও কোন ভাবেই এ অফিস ছাড়তে মন চায় না তার।

হাজীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অধিনে খাদ্য দ্রব্যের দোকান, রাইচ মেইল, চাউলের আড়তের লাইন্সেস নবায়ন, নতুন লাইন্সেস করা, বাজার মনিটরিং, ন্যায্য মূল্যের লিডারের চাউলের ছাড়পত্র দেওয়া, এতিমখানায় চাউল বরাদ্ধ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিভিন্ন চলচাতুরী করে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন।

জানা যায়, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান হাজীগঞ্জ বাজারে ওরিয়েন্টাল লাইব্রেরীতে কাজ করার সুবাদে চাকরিতে তবদীর এবং বিভিন্ন সময়ে বদলী ঠেকাতে তদবীর করার জন্য সাহায্য প্রার্থী হয় নাজমুস শাহাদাত। আবার কখনো তার মামার বন্ধু হিসেবে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর নাম ভাঙ্গিয়ে বদলী থেকে রেহায় পান বলে স্বীকার করেন তিনি। যার একটি অডিও রেকট প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

২০১০ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে নাম লেখান প্রতিবন্ধী তালিকায়। যদি শরীরের কোন অংশ বিকলাঙ্গ না হয়ে তিনি সড়ক দূর্ঘটনাকে পুঁজি করে ভাগিয়ে নেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের আর্থিক সহযোগিতা এবং প্রতিবন্ধী স্বীকৃতি কার্ড। যা একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে কোন ভাবে সুবিধাভোগী হতে পারে না।

এ ছাড়াও নাজমুস শাহাদাত সরকারি কর্মকর্তাদের নাম্বারের সাথে মিলে এমন সিরিয়ালের মোবাইল সীম সংগ্রহ করে কখনো ডিসি, কখনো এসপি, কখনো সাংবাদিক আবার কখনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেজে ফোন করে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় এবং খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে হয়রানি করার বিষয়ে একাধিক বার হাতে নাতে ধরা পড়ে। আর তখনি প্রতিবন্ধী হওয়ার নাটকে বনে যায় এ নৈশ্য প্রহরী।

ভূক্তভোগী ও অভিযোগকারী কামাল হোসেন বলেন, ২০১২ সাল থেকে চাকরী যোগদানের পর থেকে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে করে আসছে নাজমুস শাহাদাত। আমি নোয়াখালী ছিলাম সেখানে সাংবাদিক সেজে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে। এমন কি অফিসারকে সাংবাদিক পরিচয়ে ভয় দেখিয় অর্থ আত্মসাৎ করতে গিয়ে ধরা পড়ে। সে আমার আত্মীয়। আমার শ^শুরের পালিত মেয়ে বিয়ে করে সে। শ্বশুর বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে সে অনেক ঝামেলা করে। আমি তার অত্যাচার থেকে রেহায় পেতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি মহোদয়ের কাছে দরখাস্ত দিয়েছি। এ পর্যন্ত হাজীগঞ্জে যত ফুড অফিসার ছিল ওনারা অনেকে ওর দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছিল। নোয়াখালীতেও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বাবুল স্যার, কামরুন্নাহার মেডাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সরকার স্যারসহ সাবেক অনেক কর্মকর্তা তার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার ফুড অফিসার মান্নান স্যার, নাছরিন ম্যাডাম, ওয়াসিম স্যার, আব্দুর রহমান স্যারসহ অনেকের বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয়ে এবং বেনামি চিঠি লিখে, এমনকি রাজনৈতিক নেতা, সরকারি বড় বড় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদবির করিয়ে হয়রানি করেন।

হাজীগঞ্জ খাদ্য গুদাম সহকারি উপ-খাদ্য পরিদর্শক নাছিমুল করিম বলেন, আমার কর্মস্থল চাঁদপুর সদরে। আমার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমি নিজ উপজেলা হাজীগঞ্জ খাদ্য গুদামে সংযুক্ত হিসেবে কর্মরত রয়েছি। আমি স্থায়ী বদলীর জন্য আবেদন করলে এ নাজমুস শাহাদাত আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ দেয়। সে একজন প্রতারক। আমি তার বিরুদ্ধে মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।

নাজমুস শাহাদাত বলেন, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। আমি এসবের কিছুই জানি না। আমি সামান্য চাকরি। কামাল আমার আত্মীয় তার সাথে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে। ২০১২ সালের যে ঘটনাটি নোয়খালী সদর অফিসে ঘটেছিল। তা পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সেখানে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে এমন লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • হাজীগঞ্জ এর আরও খবর
error: Content is protected !!