স্টাফ রিপোর্টার ॥
হাজীগঞ্জ উপজেলার ১০নং গর্ন্ধব্যপুর ইউনিয়নে সেন্দ্রা বাজার সংলগ্ন নিশ্চন্তপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হাজেরা আলী ক্যাডেট দাখিল মাদ্রাসা। ২০০৪ সালে এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব আলহাজ্ব আবুল কাশেম মজুমদারের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ মাদ্রাসাটি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অত্র মাদ্রাসা ফলাফলের দিক থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত ২মে বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মাদ্রাসাটিকে এমপিও ভূক্তকরণ করা হয়।
২০১১ সালের দিকে মাওলানা মোস্তফা কামালকে সুপার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। নিয়োগের পর থেকেই তার খামখেয়ালীপনায় মাদ্রাসা পরিচালনা করা, শিক্ষার্থীদের বেতন, হোস্টেলের ছাত্রদের ফি ও মাদ্রাসার যাবতীয় আয় হিসাবরক্ষকের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়োম থাকলেও তা জমা না করে নিজের কাছে রেখে নিজ হাতে বিভিন্ন ভাউচার বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়ম করে।
যার ফলে শিক্ষকদের বেতন বকেয়া রেখে দেয়। যাহার প্রেক্ষিতে উক্ত কেলেংকারির বিষয়ে মাদ্রাসার গভর্নিংবডি, শিক্ষক ও অভিভাবক মহল চিন্তিত হয়ে পড়েন। উপর্যপুরি সমস্যা নিয়ে মাদ্রাসা‘র প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব আবুল কাশেম মজুমদার মাদ্রাসার শিক্ষক ও গভর্নিং কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অডিট কমিটি গঠন করে অভ্যন্তরীন অডিট করার নির্দেশনা প্রদান করেন। অডিট কমিটি শুধুমাত্র গত ৩ বছরের তাদের তদন্তে সুপারের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান অর্থ কেলেংকারির সত্যতা পান। এতসকল দূর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে আছেন অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা শরফুদ্দিন বলেন, অর্থ কেলেংকারির বিষয়টি তদন্ত পূর্বক অত্র মাদ্রাসার সভাপতিকে অবগত করেছি। তবে অন্যায়ের সাথে আমি কখনো আপোষ করিনি এবং করবো না। কর্তৃপক্ষ বিষটি সমাধান করবে বলে আমি আশা করি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও মাদ্রাসা গর্ভনিং বডির সদস্য মোহাম্মদ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, অর্থ কেলেংকারির সত্যতা আমরা লিখিত পেয়েছি। অভিযুক্ত সুপার আমাদের সাথে বৈঠক করার কথা থাকলেও অদ্যাবদি তিনি তা করেননি। সম্পূর্ন খামখেয়ালী ভাবে তার নাম এমপিও তালিকা তিনি মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছে।
মাদ্রাসার শিক্ষক ও অডিট কমিটির প্রধান নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, কর্তৃপক্ষ অডিট কমিটি করে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা অডিট করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এবং লিখিত অডিট রির্পোট কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি। যা সিদ্ধান্ত এখন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ গ্রহন করবে।
মাদ্রাসার হিসাবরক্ষক হাজেরা বেগম জানান, আমার মাধ্যমে মাদ্রাসার আয়-ব্যায়ের টাকা জমা দেয় নাই। তিনি (সুপার) আমাকে যা নির্দেশ দিয়েছেন আমি তাই করেছি। এখানে আমার কোন কিছু বলার নাই।
সহকারি সুপার কামরুজ্জামান পাটওয়ারী বলেন, এ বিষয়ে আমি কোন প্রকার কথা বলতে রাজি নই। মাদ্রাসার বিতরগত ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।
মাদ্রাসার সাবেক সুপার ও বর্তমানে যিনি একাডেমিক বিষয়ে তদারকি করছেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ভূঁইয়াকে বর্তমান সুপারের বিরুদ্ধে দূর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখুন এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা জনাব আবুল কাশেম মজুমদার স্যার, কমিটির সদস্যরা, শিক্ষক ও অভিভাবক সবাই চেষ্টা করছি কিভাবে একটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। আর প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীন কোন বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নই বিধায় দুঃখ প্রকাশ করছি।
অভিযুক্ত সুপার মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল জানান, বিষয়টি সম্পন্ন সাজানো নাটক। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। লিখিত অডিট রিপোর্টকে স্বীকৃতি দিয়ে তার স্বাক্ষর করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন জবাব দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব আবুল কাশেম মজুমদারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওনাকে পাওয়া যায়নি।
গৌরবময় প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্তি হয়েছে। তাই দূর্নীতিগ্রস্থ ও অভিযুক্ত সুপারকে অপসারন পূর্বক একজন সু-দক্ষ সুপার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এমনটি আশা অভিভাবক ও এলাকার সচেতন মহলের।