নারায়গণ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা, সদর ও বন্দর উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ৬ এপ্রিল থেকে কেউ অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাসা বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। কেউ অহেতুক বাসা থেকে বের হলে তার উপর প্রশাসনের কঠোর অ্যাকশন চলবে।
৫ এপ্রিল রোববার রাতে জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিনের সভাপতিত্বে জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, সিভিল সার্জন মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, সেনাবাহিনী ও র্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন,এখন থেকে আমরা জিরো টলারেন্স। কোন এলাকা থেকে কেউ বের হবে না। নারায়ণগঞ্জে ইনপুট আউটপুট বন্ধ থাকবে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের ও ঢুকতে পারবে না। এখন নারায়ণগঞ্জ বেশ গুরুত্বপূর্ণ সে কারণে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। সোমবার থেকে পিপিই প্রস্তুত করা ও বিদেশী অর্ডার ছাড়া বাকি সব গার্মেন্ট বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত আমরা কঠোর থাকবো।
তিনি আরো জানান,ইতোমধ্যে আমাদের মাইকিং চলছে। অলিগলি বাশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরে রাত থেকেই মাইকিং শুরু করেছে প্রশাসন। এতে বলা হচ্ছে, আপনারা কেউ রাস্তায় বের হবেন না। বের হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এর আগে নারায়ণগঞ্জে করোনায় ইতোমধ্যে দুইজনের মৃত্যু ও আরো ৬ জন শনাক্ত হওয়ায় দ্রুত এ সংক্রামন ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আগেই পুরো জেলাকে লকডাউনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহবান রেখে পৃথক বিবৃতি দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে নতুন করে ৬ জন করোনা রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ জেলাতে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ জন। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও করোনার ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, শনিবার ১৪ জন ও এর আগের দিন ১৩ জন সর্বমোট ২৭ জনের নমুনা আমরা সংগ্রহ করেছিলাম। এর মধ্যে ৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এর আগে জেলাটিতে নমুনা সংগ্রহের পর ৮ মার্চ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হিসেবে দুজনকে চিহ্নিত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)। যারা ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। পরে ২৩ মার্চ জেলায় আরো একজন আক্রান্ত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন জেলা সিভিল সার্জন। পরে তিনিও ১ এপ্রিল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
৩০ মার্চ জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়ে বন্দরের রসুলবাগ এলাকার মারা যান। পরে ২ এপ্রিল রাতে এলাকাটি লকডাউন করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৪ এপ্রিল জেলায় দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এদিকে এর আগে যেকোনো সময় পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। মেয়র, এমপি এবং আইনজীবী নেতার পক্ষ থেকে এ দাবি উঠার পর পুরো জেলা লকডাউনের বিষয়টি জোরাল হয়ে উঠে।
তাদের প্রত্যেকেরই দাবি, জেলাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তাররোধ করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে জেলাকে লকডাউন করতে হবে। অন্যথায় যেভাবে এর সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ফলে, কালক্ষেপণ করাটা কোনোভাবেই সুমচিতন নয়।
রোববার (৫ এপ্রিল) সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
মেয়রের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দিন দিন সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় কয়েকটি এলাকা প্রশাসনের সহায়তায় লকডাউন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘সিটি এলাকায় ইপিজেড, গার্মেন্টস, হোসিয়ারিসহ ভারী শিল্প কল কারখানার পাশাপাশি চাল, ডাল, আটা, ময়দা, লবণসহ নিত্যপণ্যের পাইকারী বাজার রয়েছে বিধায় এলাকাটি শ্রমিক অধ্যুষিত। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এই নগরীতে করোানা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকি অত্যাধিক। মানুষের জীবন রক্ষার্থে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণপূর্বক সার্বিক বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী জরুরী ভিত্তিতে সিটি এলাকা লকডাউন/কারফিউ জারী করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বিশেষভাবে অনুরােধ জানিয়েছেন। অন্যথায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যেতে পারে।’
এছাড়াও জেলাকে লকডাউনের জন্য দাবি তুলেছেন সাংসদ শামীম ওসমানও। তিনি একটি গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে এই দাবি তুলেন।
এর আগে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলা লকডাউনের দাবি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসীন মিয়া। তার এই দাবির সাথে অসংখ্য মানুষ একমতও পোষণ করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই দিতে পারেননি। এর মধ্যে খবর এসেছে নারায়ণগঞ্জে নতুন করে আরও পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। যার মধ্যে দুজন মারা গেছেন এবং তিন জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসাধিন অবস্থায় আছেন ৬ জন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে নতুন করে করেনা আক্রান্ত হয়েছেন আরও পাঁচজন। রোববার দুপুরের দিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আইইডিসিআরের বরাত দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে আরও ৬ জন আক্রান্ত হন।
এ নিয়ে জেলায় সরকারি হিসেবে মতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। এদের মধ্যে এক নারী ও এক পুরুষ মারা গেছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তিনজন। বর্তমানে একজন চিকিৎসকসহ চিকিৎসাধিন রয়েছেন ৬ জন।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে শনিবার পর্যন্ত দুই দফায় ২৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এই ২৭ জনের মধ্যে পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, এর আগে জেলায় ৬ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। নতুন করে আরও পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। আজ এই তথ্য আমাদের জানিয়েছে আইইডিসিআর।
এর আগে শনিবার সকালের দিকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান কাশিপুর বড় আমবাগান এলাকার বাসিন্দা হাজী আবু সাঈদ (৬০)। তাকে আগের দিন মিটফোর্ড ঘুরে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হয়ে সন্ধ্যায় কুর্মিটোলায় ভর্তি করা হলে শনিবার সকাল ৯ টার দিকে তিনি মারা যান। পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় খিলগাঁও তালতলা এলাকায় নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাবাজার বড় আম বাগান এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
এছাড়াও এর আগে ৩০ মার্চ বন্দর রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা শিউলী ওরফে পুতুল নামে এক নারী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে আইইডিসিআর ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করলে ২ এপ্রিল করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে।
এ ঘটনায় রসুলবাগ এলাকা লকডাউন করে প্রশাসন। এখানে শতাধিক পরিবার রয়েছে। এছাড়াও তার সংস্পর্শে আসায় এক চিকিৎসক, নার্স ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনিকশিয়ান এবং ওই নারীর আত্মীয় সজনসহ তাকে গোসল করানো দুই নারী নিয়ে মোট ৪১ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ওয়ার্ডবয় রয়েছেন আইসোলেশনে।
অন্যদিকে শহরের এক নং বাবুরাইল এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে ফয়সাল সুজন নামে এক ব্যবসায়ী মারা যান ৩ এপ্রিল রাতে। এ ঘটনায় ওই পরিবারের আটজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকের শহরের চাষাড়ার একটি বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাটের দুজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।