শরীফুল ইসলাম:
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা গতকাল শনিবার সকালে জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সকল সদস্য ও উপদেষ্টাম-লীর সদস্যরা এবং আট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভার সকল ওয়ার্ডের সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। এসব কমিটি গঠন করে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তরে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা ও পৌর কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। সেটাও হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জেলার সকল উপজেলা ও পৌরসভাসহ তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নতুন করে সাজানো হবে, সকল কমিটি নতুন করে গঠন করা হবে।
এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের নিজ নিজ উপজেলার সংগঠনের পরিস্থিতি বর্ধিত সভায় তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্যে নানা সমস্যা ও বিশৃঙ্খলার বিষয়গুলো উঠে আসে। সেজন্যে তৃণমূল থেকে সম্মেলনের মাধ্যমে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সকল বিশৃঙ্খলা ও ষড়যন্ত্র দূর করতে নেতাদের প্রতি নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। ফরিদগঞ্জ উপজেলার নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের উপজেলায় সংগঠনের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে আমাদের সংসদ সদস্য মহোদয়ের কাছে যারা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করে আসছেন, তারা চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। এক যুবক ছাড়া আর কেউই তাঁর কাছে পাত্তা পান না। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী তাঁর কাছে কোনো প্রয়োজনে গেলে তাকে নাজেহাল করেন এবং ওই যুবকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আর তিনি যেই যুবকের উপর এখন পুরোপুরি নির্ভরশীল সে একজন কুখ্যাত মাদকসেবী যা ইতোমধ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। এভাবে অন্যান্য উপজেলার নেতারাও তাদের নিজ নিজ উপজেলার সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। অনেকে নির্বাচনের সময় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো কোনো নেতার অবস্থান নেয়ার বিষয়েও অভিযোগ করেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভা চলে একটানা বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদের সভাপ্রধানে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ মাস্টার, ইউছুফ গাজী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহছান উল্লাহ আখন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, আলহাজ অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, আলহাজ শাহির হোসেন পাটওয়ারী, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আলম মিল্টন, সহ-প্রচার সম্পাদক হাছান ইমাম বাদশা, সদস্য ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সদস্য অধ্যাপক একেএম ফজলুল হক, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমান, কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির এবং বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য সভা শুরু হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ। সভা পরিচালনা করেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবু নাছের বাচ্চু পাটওয়ারী। কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের পর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শাহ আলম মিয়াজী। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী বিগত বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তের আলোকে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ পাঠ করেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের এই বিশেষ বর্ধিত সভা কঠোর সাংগঠনিক নিয়মের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্ধারিত ব্যক্তি ছাড়া একজনকেও সভায় ঢুকতে দেয়া হয় নি। নিচতলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর নেতৃত্বে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাসিম উদ্দিন ও পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। আর দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী দলীয় কার্যালয়ের নিচে সভা শেষ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন। সবমিলিয়ে উৎসব ও আনন্দমুখর অবস্থায় বিশেষ এই বর্ধিত সভা শেষ হয়।