শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি আওয়ামীলীগ নেতা মিজান আটক

  • আপডেট: ০৬:৪৫:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০১৯
  • ১৭

অনলাইন ডেস্ক:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩২ নং ওয়ার্ডের কমিশনার হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আজ শুক্রবার ভোররাতে সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হাবিবুর রহমান মিজান এখন আওয়ামী লীগ নেতা। তার নামে মোহাম্মদপুর থানায় ১৯৯৬ সালে ইউনূস হত্যা, ২০১৬ সালে সাভার থানায় জোড়া হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে মাদক নিয়ন্ত্রণকারী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পরিচিত। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া মিজান বহুবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। তার সেকেন্ড ম্যান মাতব্বর তুহিন নেশাখোর। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন আদাবরে।

১৯৮৯ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাসায় হামলার সময় মিজান ছিলেন ফ্রিডম পার্টির বড়ো নেতা। অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাকারীদের অন্যতম ছিলেন মিজানুর রহমান মিজান। পাগলা মিজান নামেই সবাই তাকে চেনে। হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি নাম বদলিয়ে রাখেন হাবিবুর রহমান মিজান। পরে এক সময় ফ্রিডম পার্টি থেকে গিয়ে ভেড়েন আওয়ামী লীগে। তিনি এখন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের আলোচিত-সমালোচিত নেতা। গত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্য রাতে ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় একটি চক্র। তারা সেখানে গুলি করে এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় শেখ হাসিনা বাড়ির ভেতর অবস্থান করছিলেন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরাও পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে হামলাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়। ১৯৯৭ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ ফারুক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ ও মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) বজলুল হুদা এবং নাজমুল মাকসুদ মুরাদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানকে হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মিজানের ছোটো ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাও ছিলেন হামলাকারী দলের সদস্য।

মোহাম্মদপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোস্তফা ১৯৯৫ সালে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে মারা যান। সম্প্রতি কাউন্সিল হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের। তবে এখনো নতুন কমিটির তালিকা আসেনি। কমিটিতে মিজানের স্থানও হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে ফ্রিডম পার্টির পক্ষ থেকে মিজান, শামীম জালালী ওরফে দারোগার ছেলে শামীম, বাবুল ওরফে পিচ্চি বাবুলসহ কয়েক জন লিবিয়া যান গেরিলা ট্রেনিং নিতে। হামলার ঘটনার সময় মিজান ছিলেন ফ্রিডম পার্টির ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর জোনের কো-অর্ডিনেটর।

মিজান যেভাবে ‘পাগলা’ মিজান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিজান মোহাম্মদপুরে এসেই শুরু করেন চাঁদাবাজি, ছিনতাই। ছিনতাইকারী হিসেবেই ১৯৭৪/৭৫ সালে তার বিশেষ পরিচিতি আসে। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে খামারবাড়ি খেজুর বাগান এলাকায় ছিনতাই করতে গেলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লালমাটিয়ায় মসজিদের পাশে পুকুরে নেমে পড়েন। পুলিশ তাকে বারবার নির্দেশ দিলেও তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেননি। ৪/৫ ঘণ্টা পর তিনি কোনো ধরনের কাপড় ছাড়াই উঠে আসেন। তার এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য পুলিশ তাকে ‘পাগলা’ আখ্যা দেয় এবং তাকে ছেড়েও দেয়। তখন থেকেই এলাকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে পাগলা মিজান নামে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি আওয়ামীলীগ নেতা মিজান আটক

আপডেট: ০৬:৪৫:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩২ নং ওয়ার্ডের কমিশনার হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আজ শুক্রবার ভোররাতে সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হাবিবুর রহমান মিজান এখন আওয়ামী লীগ নেতা। তার নামে মোহাম্মদপুর থানায় ১৯৯৬ সালে ইউনূস হত্যা, ২০১৬ সালে সাভার থানায় জোড়া হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে মাদক নিয়ন্ত্রণকারী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি পরিচিত। অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া মিজান বহুবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। তার সেকেন্ড ম্যান মাতব্বর তুহিন নেশাখোর। বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন আদাবরে।

১৯৮৯ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাসায় হামলার সময় মিজান ছিলেন ফ্রিডম পার্টির বড়ো নেতা। অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাকারীদের অন্যতম ছিলেন মিজানুর রহমান মিজান। পাগলা মিজান নামেই সবাই তাকে চেনে। হত্যাচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি নাম বদলিয়ে রাখেন হাবিবুর রহমান মিজান। পরে এক সময় ফ্রিডম পার্টি থেকে গিয়ে ভেড়েন আওয়ামী লীগে। তিনি এখন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের আলোচিত-সমালোচিত নেতা। গত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্য রাতে ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় একটি চক্র। তারা সেখানে গুলি করে এবং বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় শেখ হাসিনা বাড়ির ভেতর অবস্থান করছিলেন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরাও পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে হামলাকারীরা চলে যায়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়। ১৯৯৭ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ ফারুক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ ও মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) বজলুল হুদা এবং নাজমুল মাকসুদ মুরাদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানকে হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মিজানের ছোটো ভাই মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাও ছিলেন হামলাকারী দলের সদস্য।

মোহাম্মদপুরের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোস্তফা ১৯৯৫ সালে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে মারা যান। সম্প্রতি কাউন্সিল হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের। তবে এখনো নতুন কমিটির তালিকা আসেনি। কমিটিতে মিজানের স্থানও হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে ফ্রিডম পার্টির পক্ষ থেকে মিজান, শামীম জালালী ওরফে দারোগার ছেলে শামীম, বাবুল ওরফে পিচ্চি বাবুলসহ কয়েক জন লিবিয়া যান গেরিলা ট্রেনিং নিতে। হামলার ঘটনার সময় মিজান ছিলেন ফ্রিডম পার্টির ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর জোনের কো-অর্ডিনেটর।

মিজান যেভাবে ‘পাগলা’ মিজান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিজান মোহাম্মদপুরে এসেই শুরু করেন চাঁদাবাজি, ছিনতাই। ছিনতাইকারী হিসেবেই ১৯৭৪/৭৫ সালে তার বিশেষ পরিচিতি আসে। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে খামারবাড়ি খেজুর বাগান এলাকায় ছিনতাই করতে গেলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লালমাটিয়ায় মসজিদের পাশে পুকুরে নেমে পড়েন। পুলিশ তাকে বারবার নির্দেশ দিলেও তিনি পুকুর থেকে উঠে আসেননি। ৪/৫ ঘণ্টা পর তিনি কোনো ধরনের কাপড় ছাড়াই উঠে আসেন। তার এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য পুলিশ তাকে ‘পাগলা’ আখ্যা দেয় এবং তাকে ছেড়েও দেয়। তখন থেকেই এলাকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে পাগলা মিজান নামে।