চাঁদপুরে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের বলাৎকার, প্রতিবাদে ভাংচুর, ভয়ে শিক্ষকদের পলায়ন

  • আপডেট: ০৫:২২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০১৯
  • ৪৭

নিজস্ব প্রতিনিধি:

চাঁদপুর শহরের চৌধুরীঘাট এলাকায় অবস্থিত (তাজমহল বোডিং সংলগ্ন) কোরআনিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ছাত্রদের উপর অমানুষিক নির্যাতন এবং এক ছাত্রকে বলাৎকারের প্রতিবাদে মাদ্রাসার ছাত্ররা ভাংচুর ও বিক্ষোভ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ১ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে। ঘটনার পর তাৎক্ষণিক চাঁদপুুর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ যাওয়ার পূর্বে অভিযুক্ত শিক্ষক আঃ খালেক মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশি পাহারায় রয়েছে মাদ্রাসার ছাত্ররা। এ ঘটনায় একজন অভিভাবকের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্ততি চলছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের চৌধুরী মসজিদের পশ্চিম পাশে তাজমহল বোডিংয়ের সাথে কোরআনিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক আব্দুল খালেক কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রদের পর্যায়ক্রমে বলাৎকার ও ছাত্রদের বেদমভাবে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। ঘটনার পরেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই আবু হানিফ ও সঙ্গীয় ফোর্স। এ ঘটনায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আহত ছাত্ররা চিকিৎসা নিয়েছে।

সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৭/৮ থেকে ১২/১৩ বছরের শিশুরা মাদ্রাসার ভেতরে ভাংচুর করছে এবং কান্নাকাটি করছে। ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ ইকরাম মাদ্রাসায় সবসময় থাকেন না। ছাত্রদেরকে নাজরানা ও হেফ্জ পড়ার অজুহাতে শিক্ষক হাফেজ আব্দুল খালেক বেদম পিটিয়ে তাদেরকে রক্তাক্ত করে ফেলে। মাদ্রাসার তিনটি গেটে তালা লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা ছাত্রদেরকে ভেতরে জেলখানার কয়েদীদের মতো রাখা হয়। সবসময় তালা মারা থাকায় তারা অভিভাবকদের জানাতে পারেনি। গতকাল মাদ্রাসায় গেলে ছাত্ররা তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পুলিশ, সংবাদকর্মী ও অভিভাবকদের দেখায়। তাতে দেখা যায়, শরীর ফেটে ক্ষত হয়ে রয়েছে। তাদের শরীর দেখে বুঝা যায় তাদেরকে মাদ্রাসায় বন্দী করে রেখে শিক্ষার নামে প্রতিদিনই নির্যাতন চালানো হয়।

ছাত্ররা জানায়, তাদের শিক্ষক আব্দুল খালেক তার ইচ্ছামত ছাত্রদের ডেকে নিয়ে বলাৎকার করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপরে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। গত ক’দিন পূর্বে মাদ্রাসার ছাত্র শেখ মোহাম্মদ (১১)কে ডেকে নিয়ে রাতে তার মশারির ভেতরে ঢুকতে বলে। সে প্রবেশ করার পর প্রথমে তাকে দিয়ে শরীরে ঔষধ মালিশ করায়। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুখ চেপে ধরে বলাৎকার করে তাকে রক্তাক্ত করে ফেলে। পরে সকালে ছাত্র মোহাম্মদ ঘটনাটি মাদ্রাসার অন্য ছাত্রদের জানায়। ক’দিন যাবৎ এ ঘটনাটি নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছিলো।

গতকাল মঙ্গলবার একইভাবে মাদ্রাসার ছাত্র যোবায়েরকে বলাৎকারে রাজি না হওয়ায় তাকে শিক্ষক আব্দুল খালেক বেদমভাবে পিটিয়ে আহত করে এবং তার একটি চোখে লাঠি দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে মারাত্মকভাবে আহত করে। ছাত্ররা আরো জানায়, তাদের থেকে মাসে ৩/৪ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। অথচ তাদেরকে খুবই নিম্নমানের খাবার পোকাসহ খাওয়ায়।

মঙ্গলবার কয়েকজন ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় শিক্ষক আব্দুল খালেকের নির্যাতনের প্রতিবাদ করে ছাত্ররা হঠাৎ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে এলাকার ব্যবসায়ীরা বিষয়টি জেনে ছাত্রদেরকে বাইরে থেকে সহযোগিতা করার সাহস দেয়। তখন তারা আরো উত্তেজিত হয় এবং এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাছিম উদ্দিনকে অবহিত করেন। তিনি মডেল থানার পক্ষ থেকে এএসআই মোঃ আবু হানিফকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মারাত্মক আহত ছাত্র যোবায়েরকে তার অভিভাবক ঘটনার পর খবর পেয়ে এসে তাকে মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করে এবং থানায় এ ঘটনার আলোকে মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার এ মাদ্রাসার ছাত্ররা হচ্ছে মেহেরাত (১০), হাবিব (১২), মাহফুজ (১২), তারেক (১১), নাহিদ (১৩), রাকিব হোসেন শাহাদাত (১২) ও ফয়সাল (১৪)।

এই বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মোঃ ইকরামের সাথে মোবাইল ফোনে বক্তব্য প্রদানের জন্যে বলা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

সর্বাধিক পঠিত

সমন্বয়ক আর জামায়াতের কারণে ইউনুছ সরকার ব্যর্থ হবে-ইঞ্জি. মমিনুল হক

চাঁদপুরে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের বলাৎকার, প্রতিবাদে ভাংচুর, ভয়ে শিক্ষকদের পলায়ন

আপডেট: ০৫:২২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিনিধি:

চাঁদপুর শহরের চৌধুরীঘাট এলাকায় অবস্থিত (তাজমহল বোডিং সংলগ্ন) কোরআনিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় ছাত্রদের উপর অমানুষিক নির্যাতন এবং এক ছাত্রকে বলাৎকারের প্রতিবাদে মাদ্রাসার ছাত্ররা ভাংচুর ও বিক্ষোভ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ১ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে। ঘটনার পর তাৎক্ষণিক চাঁদপুুর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ যাওয়ার পূর্বে অভিযুক্ত শিক্ষক আঃ খালেক মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশি পাহারায় রয়েছে মাদ্রাসার ছাত্ররা। এ ঘটনায় একজন অভিভাবকের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্ততি চলছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের চৌধুরী মসজিদের পশ্চিম পাশে তাজমহল বোডিংয়ের সাথে কোরআনিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক আব্দুল খালেক কর্তৃক মাদ্রাসা ছাত্রদের পর্যায়ক্রমে বলাৎকার ও ছাত্রদের বেদমভাবে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। ঘটনার পরেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই আবু হানিফ ও সঙ্গীয় ফোর্স। এ ঘটনায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আহত ছাত্ররা চিকিৎসা নিয়েছে।

সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৭/৮ থেকে ১২/১৩ বছরের শিশুরা মাদ্রাসার ভেতরে ভাংচুর করছে এবং কান্নাকাটি করছে। ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ ইকরাম মাদ্রাসায় সবসময় থাকেন না। ছাত্রদেরকে নাজরানা ও হেফ্জ পড়ার অজুহাতে শিক্ষক হাফেজ আব্দুল খালেক বেদম পিটিয়ে তাদেরকে রক্তাক্ত করে ফেলে। মাদ্রাসার তিনটি গেটে তালা লাগিয়ে ২৪ ঘন্টা ছাত্রদেরকে ভেতরে জেলখানার কয়েদীদের মতো রাখা হয়। সবসময় তালা মারা থাকায় তারা অভিভাবকদের জানাতে পারেনি। গতকাল মাদ্রাসায় গেলে ছাত্ররা তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন পুলিশ, সংবাদকর্মী ও অভিভাবকদের দেখায়। তাতে দেখা যায়, শরীর ফেটে ক্ষত হয়ে রয়েছে। তাদের শরীর দেখে বুঝা যায় তাদেরকে মাদ্রাসায় বন্দী করে রেখে শিক্ষার নামে প্রতিদিনই নির্যাতন চালানো হয়।

ছাত্ররা জানায়, তাদের শিক্ষক আব্দুল খালেক তার ইচ্ছামত ছাত্রদের ডেকে নিয়ে বলাৎকার করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপরে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। গত ক’দিন পূর্বে মাদ্রাসার ছাত্র শেখ মোহাম্মদ (১১)কে ডেকে নিয়ে রাতে তার মশারির ভেতরে ঢুকতে বলে। সে প্রবেশ করার পর প্রথমে তাকে দিয়ে শরীরে ঔষধ মালিশ করায়। এক পর্যায়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুখ চেপে ধরে বলাৎকার করে তাকে রক্তাক্ত করে ফেলে। পরে সকালে ছাত্র মোহাম্মদ ঘটনাটি মাদ্রাসার অন্য ছাত্রদের জানায়। ক’দিন যাবৎ এ ঘটনাটি নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছিলো।

গতকাল মঙ্গলবার একইভাবে মাদ্রাসার ছাত্র যোবায়েরকে বলাৎকারে রাজি না হওয়ায় তাকে শিক্ষক আব্দুল খালেক বেদমভাবে পিটিয়ে আহত করে এবং তার একটি চোখে লাঠি দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে মারাত্মকভাবে আহত করে। ছাত্ররা আরো জানায়, তাদের থেকে মাসে ৩/৪ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। অথচ তাদেরকে খুবই নিম্নমানের খাবার পোকাসহ খাওয়ায়।

মঙ্গলবার কয়েকজন ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় শিক্ষক আব্দুল খালেকের নির্যাতনের প্রতিবাদ করে ছাত্ররা হঠাৎ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে এলাকার ব্যবসায়ীরা বিষয়টি জেনে ছাত্রদেরকে বাইরে থেকে সহযোগিতা করার সাহস দেয়। তখন তারা আরো উত্তেজিত হয় এবং এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক বিষয়টি চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাছিম উদ্দিনকে অবহিত করেন। তিনি মডেল থানার পক্ষ থেকে এএসআই মোঃ আবু হানিফকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনেন। মারাত্মক আহত ছাত্র যোবায়েরকে তার অভিভাবক ঘটনার পর খবর পেয়ে এসে তাকে মাদ্রাসা থেকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করে এবং থানায় এ ঘটনার আলোকে মামলা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার এ মাদ্রাসার ছাত্ররা হচ্ছে মেহেরাত (১০), হাবিব (১২), মাহফুজ (১২), তারেক (১১), নাহিদ (১৩), রাকিব হোসেন শাহাদাত (১২) ও ফয়সাল (১৪)।

এই বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ মোঃ ইকরামের সাথে মোবাইল ফোনে বক্তব্য প্রদানের জন্যে বলা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।