বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করছে : প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট: ১১:৫৫:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৩

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানবতার ক্ষেত্রে সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থাকে দুটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করছে। আমরা বিশ্বাস করি, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। কোনো সীমানা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজ্জিত করেছি। সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনস-সিএফআর আয়োজিত ‘এ কনভারসেশন উইথ অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’ শীর্ষক অংশগ্রহণমূলক সংলাপে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ, সিএফআর সভাপতি রিচার্ড এন হাসসহ সংস্থাটির সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন- এক. সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের জোগান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দুই. তাদের অর্থের জোগান বন্ধ করতে হবে। তিন. সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। চার. আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষের জন্য সমান সুবিধাজনক পরিস্থিতি নিশ্চিতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় তাদের পৈতৃক নিবাসে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ ও তাৎক্ষণিক সমাধান চাই। মিয়ানমারই এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং সমাধানও মিয়ানমারেই রয়েছে। মিয়ানমার সরকার একটি পরিকল্পিত নৃশংসতার মাধ্যমে উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিধন শুরু করে। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের সীমান্ত খুলে দিই। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সাধ্যমতো সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এসব শিবির পরিদর্শনে এসে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা রোহিঙ্গাদের নিধনযজ্ঞের বিভিন্ন নৃশংস ঘটনাবলি শুনলে আপনারা কেঁপে হয়ে উঠবেন। আপনারা শিগগিরই রোহিঙ্গাদের এসব বেদনাদায়ক পরিস্থিতির অবসান চাইবেন। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় কাজ করেছে, তা হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশিদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার বিষয়টি। সে সময় বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি জনগণ প্রতিবেশী দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ নৃশংসভাবে হত্যার পর আমি নিজেও শরণার্থী হয়ে পড়েছিলাম। কেবল আমি এবং শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। প্রায় ছয়টি বছর তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশে ফিরতে দেননি। যে কারণে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হই। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা এবং বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যের বিস্তার রোধে ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক উভয় অংশীদারদের সঙ্গেই চমৎকার সহযোগিতা বিদ্যমান। যে কারণে ২০০৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর এ পর্যন্ত আর কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেনি। পরে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ আলোচনা প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, আগামীকাল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় শনিবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকাল ৪টা) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। শেখ হাসিনা এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট অবসানে তাঁর ভাষণে চারটি প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গও তুলে ধরবেন।
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস : মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সভায় এ প্রস্তার পাস হয়।

বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন বিনিয়োগ জরুরি : বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আরও উন্নয়নের জন্য অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগ ও সম্পৃক্ততা জরুরি। এটি হবে দুই দেশের জন্য একটি ‘উইন-উইন অপশন’। তাই অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন, আমাদের উদার বিনিয়োগ নীতির বহুবিধ সুবিধার মধ্যে কয়েকটি হলো- আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর অবকাশ সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি শুল্ক; অবাধ ও এক্সিট নীতি; এক্সিটের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ও মূলধনের পূর্ণ প্রত্যার্পণ। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গতকাল দুপুরে লোটে প্যালেস হোটেলে মার্কিন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইউএস চেম্বারস অব কমার্স আয়োজিত ‘মধ্যাহ্নভোজ গোলটেবিল বৈঠক’-এ এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, হাসিনা নেওয়াজ, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অভিযাত্রায় আপনাদের আমাদের সঙ্গে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করছে : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: ১১:৫৫:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানবতার ক্ষেত্রে সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থাকে দুটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই দুই ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করছে। আমরা বিশ্বাস করি, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। কোনো সীমানা নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজ্জিত করেছি। সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার বিকালে কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনস-সিএফআর আয়োজিত ‘এ কনভারসেশন উইথ অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’ শীর্ষক অংশগ্রহণমূলক সংলাপে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংলাপে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ, সিএফআর সভাপতি রিচার্ড এন হাসসহ সংস্থাটির সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন- এক. সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের জোগান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দুই. তাদের অর্থের জোগান বন্ধ করতে হবে। তিন. সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। চার. আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষের জন্য সমান সুবিধাজনক পরিস্থিতি নিশ্চিতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছায় তাদের পৈতৃক নিবাসে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ সংকটের একটি শান্তিপূর্ণ ও তাৎক্ষণিক সমাধান চাই। মিয়ানমারই এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং সমাধানও মিয়ানমারেই রয়েছে। মিয়ানমার সরকার একটি পরিকল্পিত নৃশংসতার মাধ্যমে উত্তর রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিধন শুরু করে। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের সীমান্ত খুলে দিই। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য সাধ্যমতো সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এসব শিবির পরিদর্শনে এসে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা রোহিঙ্গাদের নিধনযজ্ঞের বিভিন্ন নৃশংস ঘটনাবলি শুনলে আপনারা কেঁপে হয়ে উঠবেন। আপনারা শিগগিরই রোহিঙ্গাদের এসব বেদনাদায়ক পরিস্থিতির অবসান চাইবেন। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় কাজ করেছে, তা হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশিদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার বিষয়টি। সে সময় বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি জনগণ প্রতিবেশী দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ নৃশংসভাবে হত্যার পর আমি নিজেও শরণার্থী হয়ে পড়েছিলাম। কেবল আমি এবং শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। প্রায় ছয়টি বছর তৎকালীন স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান দেশে ফিরতে দেননি। যে কারণে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য হই। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা এবং বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যের বিস্তার রোধে ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক উভয় অংশীদারদের সঙ্গেই চমৎকার সহযোগিতা বিদ্যমান। যে কারণে ২০০৬ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর এ পর্যন্ত আর কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেনি। পরে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ আলোচনা প্রক্রিয়ায় সমর্থন জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, আগামীকাল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে (বাংলাদেশ সময় শনিবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকাল ৪টা) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। শেখ হাসিনা এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট অবসানে তাঁর ভাষণে চারটি প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গও তুলে ধরবেন।
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস : মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সভায় এ প্রস্তার পাস হয়।

বাংলাদেশের উন্নয়নে মার্কিন বিনিয়োগ জরুরি : বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আরও উন্নয়নের জন্য অধিকতর মার্কিন বিনিয়োগ ও সম্পৃক্ততা জরুরি। এটি হবে দুই দেশের জন্য একটি ‘উইন-উইন অপশন’। তাই অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে থাকুন, আমাদের উদার বিনিয়োগ নীতির বহুবিধ সুবিধার মধ্যে কয়েকটি হলো- আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা, উদার কর অবকাশ সুবিধা, যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতি শুল্ক; অবাধ ও এক্সিট নীতি; এক্সিটের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ও মূলধনের পূর্ণ প্রত্যার্পণ। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গতকাল দুপুরে লোটে প্যালেস হোটেলে মার্কিন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইউএস চেম্বারস অব কমার্স আয়োজিত ‘মধ্যাহ্নভোজ গোলটেবিল বৈঠক’-এ এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন ও এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, হাসিনা নেওয়াজ, বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন অভিন্ন সুবিধা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের অভিযাত্রায় আপনাদের আমাদের সঙ্গে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’