আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাতের নীরবতা ভেঙে হঠাৎ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন মিসরীয়রা। তারা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘সিসি, তুই ক্ষমতা ছাড়’।
দেশটির একনায়ক প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির শাসনামলে এটাই প্রথম কোনো গণবিক্ষোভ। ২০১৩ সালে মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন তখনকার সেনাপ্রধান এই সিসি।
এরপর ভিন্নমত ও রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি শূন্যসহনীয় নীতি বেছে নেন তিনি। ষাট হাজারের মতো বিরোধীকে কারাগারে আটকে রাখেন। অনেকের বিচার চলছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রয়টার্সের প্রতিবেদক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। কিন্তু অনেক তরুণ পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শহরের মূল সড়কে অবস্থান করে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন।
বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনী বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর আলেক্সান্দ্রিয়ার সড়কেও বিক্ষোভ দেখা গেছে।
এর আগে স্পেনে নির্বাসিত মিসরীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি আল-সিসি পদত্যাগ না করেন, তবে শুক্রবার মিসরীয়রা তাহরির স্কয়ারের জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন।
আল-জাজিরার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ইয়াহিয়া গানাম বলেন, মিসরীয়দের গতিশক্তির বিভিন্ন মাত্রার প্রতিনিধিত্ব করে শুক্রবারের এই বিক্ষোভ।
তিনি বলেন, মিসরে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন পাওনা আছে। দেশটিতে এখন যা ঘটছে, সেটা তারই প্রতিফলন। আরও আগেই এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দেশবাসী জুলুমশাহির কবল থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন।
২০১৩ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই সব ধরনের গণবিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেন সামরিক শাসক আল-সিসি।
টুইটারে গণতন্ত্রপন্থী তৎপরতাকারী আইয়াদ আল-বাগদাদী বলেন, হেই, ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপনার প্রিয় একনায়ক এখন নিউইয়র্কের পথে। তাকে সেখানেই রেখে দিন। তিনি ফিরে আসুক, মিসরীয়রা সেটি চান না।
শুক্রবারের বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনেক সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারী তাদের প্রফাইলে পুরাদস্তুর লাল ছবি আপলোড করেছেন।
গত ১৭ জুন বিচার চলাকালে আদালত কক্ষে আকস্মিক পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ মুরসি। তার মৃত্যুকে সম্পূর্ণ হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছে মুসলিম ব্রাদারহুড।
মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, কারাগারে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
সংগঠনটিকে সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে কালোতালিকাভুক্ত করেছেন আল-সিসি। ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী শত শত বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছেন তিনি।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ২০১৮ সালের দ্বিতীয় মেয়াদে নিজের ক্ষমতা নিশ্চিত করার পর বিরোধীদের বিরুদ্ধে তার নিরাপত্তা বাহিনী ভীতিপ্রদর্শন, সহিংসতা ও বিনাবিচারে গ্রেফতারের অভিযান বাড়িয়ে দিয়েছে।
মিসরের বাকস্বাধীনতার ওপর ব্যাপক হামলাকে গভীর উদ্বেগের বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের বিশ্লেষকরা।
দেশটিতে প্রচুর সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের অবৈধভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির গবেষক ডালিয়া ফাহমি বলেন, ২০১১ সালের তুলনায় শুক্রবারের বিক্ষোভ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবন্ধকতার আতঙ্ক থেকে এই গণজাগরণ। তবে এটা প্রত্যাশিত। আজকের জনগণের দিকে যদি আপনি তাকান, তবে লাখ লাখ লোকের বয়স ২৩ বছরের আশপাশে হবে। এখন তাদের বয়স থেকে আট বছর বিয়োগ করলে যেটা থাকবে, আরব বসন্তের সময় সেটাই ছিল তাদের বয়স। এর অর্থ দাঁড়ায় তখন তাদের গড় বয়স ছিল ১৫।
ডালিয়া বলেন, আপনার বিপুলসংখ্যক জনসংখ্যা বিপ্লব-পরবর্তী আতঙ্ক ও স্মৃতি নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। এসব তরুণদের চাহিদা ভিন্ন রকম। ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের বোঝাপড়াও ভিন্ন ধরনের। কাজেই আজ যারা সড়কে বিক্ষোভ করছেন, আট বছর আগের তুলনায় তারা একটু ভিন্নই হবে।