ঝুলিতে ১৭৫ রানের পুঁজি। তা নিয়ে লড়াই করতে নেমে ৪ ওভার শেষেই জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল বাংলাদেশ? নিশ্চিত না হলেও আভাস তো ছিলই। জিম্বাবুয়ের যে চতুর্থ ওভার শেষেই ১৬ রান তুলতে ৩ উইকেট নেই! জয় ও ফাইনালে ওঠার সুবাসটা তখনই পাওয়ার কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
আর তখনকার এ সুবাসের সেরা প্রাপ্তিটুকু নিঃসন্দেহে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষিক্ত হওয়ার আগে অনেকেরই ভ্রুকুটি ছিল তাঁকে ঘিরে। ছিলেন ব্যাটসম্যান আর মাঝে মধ্যে লেগ স্পিনটা করতেন। সেই আমিনুল কি না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের তৃতীয় বলেই তুলে নিলেন উইকেট! সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মুতোম্বজিকে লং অফে ক্যাচে পরিণত করেন আমিনুল। ব্রেন্ডন টেলর, রেগিস চাকাভা ও শন উইলিয়ামসরা তার আগেই ফিরে যাওয়ায় জিম্বাবুয়ে তখন হার দেখছে।
শেষ পর্যন্ত ১৩৬ রানে থেমেছে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। ৩৯ রানের এ জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল নিশ্চিত করল করল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হওয়ায় অনেকে এ জয়কে স্বস্তির বলতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন, তবে পারফরম্যান্স নিয়ে সাম্প্রতিক হতাশার মধ্যে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠাকে সাফল্য বলাই যায়। ৩ ম্যাচে ২ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর জিম্বাবুয়ে ৩ ম্যাচেই হেরে বাদ পড়ল টুর্নামেন্ট থেকে।
আমিনুল পরেও উইকেট পেয়েছেন। ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা মাথাব্যথা হয়ে ছিলেন। ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ তা দূর করলেন নিজের পরের ওভারেই। সেটি জিম্বাবুয়ের ইনিংসে নবম ওভারে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ২৫ বলে ২৫ রান করা মাসাকাদজাকে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মাঠে রাতে ‘ডিউ ফ্যাক্টর’ তো ছিলই। এর মধ্যে বল গ্রিপ করতে যেকোনো স্পিনারেরই সমস্যা হয়। আমিনুল তেমন বাঁক না পেলেও লাইন-লেংথ খারাপ ছিল না। মাঝে-মধ্যে তাঁর কয়েকটি ডেলিভারি বেশ উঠেছেও। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে অভিষেকটা স্মরণীয়ই করে রাখলেন আমিনুল।
জিম্বাবুয়ের ইনিংসে প্রথম ১০ ওভার শেষেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের জয় তুলে নেওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার। কারণ জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ৫৬। আর শুরুতেই জিম্বাবুয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার কাজটা করেছেন তিন বোলার—মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, সাকিব আল হাসান ও শফিউল ইসলাম। সাইফউদ্দিনের প্রথম ওভারেই বল আকাশে তুলে ক্যাচ দেন টেলর (০)। পরের ওভারে চাকাভা কোনো রান করার আগেই শিকার হন সাকিবের। ভেতরে ধেয়ে আসা বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন। মাঝে এক ওভার বিরতির পর আঘাত হানেন শফিউল। তাঁকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন উইলিয়ামস (২)।
সপ্তম উইকেট পর্যন্ত কোনো জুটিতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের ন্যূনতম ৩০ রানও তুলতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। অষ্টম উইকেটে মুতুম্বামি ও জার্ভিস মিলে দলের সংগ্রহটাকে ভদ্রস্থ করার চেষ্টা করেন। সে কাজে তাঁরা বেশ সফলও হয়েছেন। এ দুজনের জুটিতেই মূলত ইঙ্গিত মিলেছে, পুরো ২০ ওভার খেলতে পারে জিম্বাবুয়ে। ঘটেছেও ঠিক তাই, অলআউট হয়েছে ইনিংসের শেষ বলে। তবে জয়ের পথ থেকে জিম্বাবুয়ে ছিটকে পড়েছিল আগেই। শেষ ৫ ওভারে ৮৮ রান দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের। হাতে লেজের তিন উইকেট।
এ অবস্থায় হার নিশ্চিত জেনেও প্রতি আক্রমণ করে গেছেন মুতুম্বামি-জার্ভিস। বাংলাদেশের বোলাররাও এ সময় বেশ বাজে লাইন-লেংথে বল করেছে। সেটা কী জয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে? সে কথা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যায় না। ব্যাটিংয়ে সাত ও নয়ে নামা দুই বোলার সাইফউদ্দিন-মোস্তাফিজ-শফিউলদের কাছ থেকে যেভাবে রান তুলে নিয়েছেন তা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটপ্রেমীর ভালো লাগার কথা না।
ভালো ব্যাট করেই ৩০ বলে ফিফটি তুলে নেন মুতুম্বামি। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে তাঁকে (৫৪ রান) তুলে নেন শফিউল। এর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় জার্ভিস-মুতুম্বামির ৩৬ বলে ৫৮ রানের জুটি। প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফিরে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন শফিউল। ১টি করে উইকেট সাকিব, সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজের।