“সময়ের স্রােতে যে গা ভাসায় সে পিছিয়ে পড়ে”

  • আপডেট: ০৫:০৩:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৩

সময়ের স্রোতে যে গা ভাসায় সে পিছিয়ে পড়ে, আর যার মধ্যে থাকে টিকে থাকার দৃঢ়তা সে শতকষ্টেও সময়ের স্রােতে সাঁতরাতে থাকে। যারা সাঁতরায় তারাই সমাজে সফল বলে দাবিদারই নয়, স্বীকৃতিও পায়। তেমনি চাঁদপুরে শিল্পী রাঢ়ীও এদেরই একজন।

শিল্পীর পিতা বশির রাঢ়ী ব্যবসা করতেন। ২৮ বছর পূর্বে বাবা মারা যান। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এতিম হয়ে পড়ে আড়াই বছরের শিল্পী রাড়ী। এ সুযোগে আপন চাচা মো. কামাল রাঢ়ী বড় ভাইয়ের একমাত্র এতিম মেয়ে শিল্পী রাঢ়ীকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে নিকট আত্মীয়ের আশ্রয়ে ঢাকায় বেড়ে উঠার পর জামাল মিয়ার ছেলে মো. মোজাহার সোহেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর এক মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই কাটছিলো শিল্পী রাঢ়ীর সোনার সংসার। কিন্তু সেখানেও সুখ মিলেনি এতিম মেয়েটির। সর্বগ্রাসী পদ্মার ভাঙ্গনে স্বামীর ভিটা মাটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়।

ফলে অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে স্বল্প শিক্ষিতা শিল্পী রাঢ়ী নামেন সেলাই মেশিন নিয়ে। শ্রমিক মা দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতেই হিমশিম। লেখাপড়ার খরচ জোগাবে কে? বাঁচার জন্য চাই একটুকরো ভিটে মাটি, সেই ভিটেমাটিও দখল করে আছে আপন চাচা। প্রায় সময়ে বাবার পৈত্রিক সম্পত্তির খোজ নিতে দেশে আসলে আপন চাচা কামাল রাঢ়ী তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত শিল্পী রাঢ়ীর পাশে পান চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেনকে । তিনি সেই থেকে এখন পর্যন্ত তথা টানা ২ বছর ধরে প্রতিশ্রুতি পালনই করেননি, পিতার মতোই পাশে থেকেছেন।

প্রথমে ২০১৮ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) বরাবর ও সর্বশেষ ২০১৯ সালে থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর এতিম মহিলা পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে আপন চাচা কামাল রাঢ়ীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উপজেলার আলীগঞ্জ ৩০৩ নং তৌজি ভূক্ত ২৪০নং কংগাইশ মৌজার ৪৫নং খতিয়ানভূক্ত বিভিন্ন দাগে বসত ভিটি, পুকুর, বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৬ শতাংশ সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী শিল্পী রাঢ়ী দাবি করেন।

অভিযোগের আলোকে কামাল রাঢ়ীসহ থানায় ও সর্বশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে বসে সিদ্ধান্তমতে শুধুমাত্র মেয়েটিকে বসতঘর উঠানোর জায়গাটুকু দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তাও দিতে নারাজ সূদখোর কামাল রাঢ়ী।

ভূক্তভোগী শিল্পী রাঢ়ী বলেন, গত ৩৬ বছর ধরে বাবার সম্পত্তি ভোগ করছেন আমার চাচা কামাল রাঢ়ী। পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে এতো বছর ধরে আমাকে দূরে রেখেছে। চাচা এলাকায় নামকরা সুদখোর বলে কেউ কোন কথা বলতে পারছে না। আমি এতিম অসহায় একজন নারী হিসাবে প্রশাসনের আস্তায় বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই।

আপন ভাতিজীকে বসতঘর করার জন্য .৪০ পয়েন্ট জায়গা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেননি সুদখোর কামাল রাঢ়ী।

সকল প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে, সমানে আসা সকল ঘেরাটোপ সে তার ইচ্ছে শক্তির বলে একের পর এক টপকে এখন দাঁড়িয়েছে পুলসিরাতের দরজায়। যে শিল্পী রাঢ়ীর একদিন ছিলো সুখের সংসার, সেই শিল্পী রাঢ়ী এখন নিজের প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তি পেতে আদালত আর বিভিন্ন জনের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পী রাঢ়ীকে জানাই অভিনন্দন। কারণ সে কিছুতে দমেনি, থামেনি।

অভিবাদন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন। জীবনগড়ার লক্ষ্য নিয়ে সময়ের স্রােতে এক নারী যখন সকল কিছু হারিয়ে অর্থ সংকটের অতল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো, তখনই তার সামনে ভরসার সোপান মেলে ধরেন তিনি। শুধু শিল্পী রাঢ়ীকেই নয়, আরও বেশ ক’জন অসহায় নারীর অভিভাবকত্বও করেন তিনি। এক’কন্যার জনক আফজাল হোসেন সমাজের অসহায়দের প্রতি তার মহানুভবতা সমাজের অন্যদেরকও অথাৎ সমাজে ছিটিয়ে ছড়িয়ে থাকা শিল্পী রাঢ়ীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ করবে।

অবশ্যই না, দু একজন শিল্পী রাঢ়ীকে সহযোগিতা করলেই সমাজের সব দায়িত্ব পালন হয় না। সমাজের সকল শিল্পীদের অসহায়ত্বের পরিবেশ গড়ে তুলতে পারাটাই আসল পারা। সেই পারার আগে যারা অসহায়ের পাশে দাঁড়ায় তাদের স্যালুট করতেই হয়।

লেখক : সাইফুল ইসলাম সিফাত
গণমাধ্যমকর্মী

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে ৪’শ নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

“সময়ের স্রােতে যে গা ভাসায় সে পিছিয়ে পড়ে”

আপডেট: ০৫:০৩:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সময়ের স্রোতে যে গা ভাসায় সে পিছিয়ে পড়ে, আর যার মধ্যে থাকে টিকে থাকার দৃঢ়তা সে শতকষ্টেও সময়ের স্রােতে সাঁতরাতে থাকে। যারা সাঁতরায় তারাই সমাজে সফল বলে দাবিদারই নয়, স্বীকৃতিও পায়। তেমনি চাঁদপুরে শিল্পী রাঢ়ীও এদেরই একজন।

শিল্পীর পিতা বশির রাঢ়ী ব্যবসা করতেন। ২৮ বছর পূর্বে বাবা মারা যান। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। এতিম হয়ে পড়ে আড়াই বছরের শিল্পী রাড়ী। এ সুযোগে আপন চাচা মো. কামাল রাঢ়ী বড় ভাইয়ের একমাত্র এতিম মেয়ে শিল্পী রাঢ়ীকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। পরে নিকট আত্মীয়ের আশ্রয়ে ঢাকায় বেড়ে উঠার পর জামাল মিয়ার ছেলে মো. মোজাহার সোহেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর এক মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে সুখে শান্তিতেই কাটছিলো শিল্পী রাঢ়ীর সোনার সংসার। কিন্তু সেখানেও সুখ মিলেনি এতিম মেয়েটির। সর্বগ্রাসী পদ্মার ভাঙ্গনে স্বামীর ভিটা মাটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়।

ফলে অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে স্বল্প শিক্ষিতা শিল্পী রাঢ়ী নামেন সেলাই মেশিন নিয়ে। শ্রমিক মা দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতেই হিমশিম। লেখাপড়ার খরচ জোগাবে কে? বাঁচার জন্য চাই একটুকরো ভিটে মাটি, সেই ভিটেমাটিও দখল করে আছে আপন চাচা। প্রায় সময়ে বাবার পৈত্রিক সম্পত্তির খোজ নিতে দেশে আসলে আপন চাচা কামাল রাঢ়ী তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত শিল্পী রাঢ়ীর পাশে পান চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেনকে । তিনি সেই থেকে এখন পর্যন্ত তথা টানা ২ বছর ধরে প্রতিশ্রুতি পালনই করেননি, পিতার মতোই পাশে থেকেছেন।

প্রথমে ২০১৮ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) বরাবর ও সর্বশেষ ২০১৯ সালে থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর এতিম মহিলা পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে আপন চাচা কামাল রাঢ়ীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উপজেলার আলীগঞ্জ ৩০৩ নং তৌজি ভূক্ত ২৪০নং কংগাইশ মৌজার ৪৫নং খতিয়ানভূক্ত বিভিন্ন দাগে বসত ভিটি, পুকুর, বাগানসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৬ শতাংশ সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী শিল্পী রাঢ়ী দাবি করেন।

অভিযোগের আলোকে কামাল রাঢ়ীসহ থানায় ও সর্বশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর কার্যালয়ে বসে সিদ্ধান্তমতে শুধুমাত্র মেয়েটিকে বসতঘর উঠানোর জায়গাটুকু দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তাও দিতে নারাজ সূদখোর কামাল রাঢ়ী।

ভূক্তভোগী শিল্পী রাঢ়ী বলেন, গত ৩৬ বছর ধরে বাবার সম্পত্তি ভোগ করছেন আমার চাচা কামাল রাঢ়ী। পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে এতো বছর ধরে আমাকে দূরে রেখেছে। চাচা এলাকায় নামকরা সুদখোর বলে কেউ কোন কথা বলতে পারছে না। আমি এতিম অসহায় একজন নারী হিসাবে প্রশাসনের আস্তায় বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই।

আপন ভাতিজীকে বসতঘর করার জন্য .৪০ পয়েন্ট জায়গা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেননি সুদখোর কামাল রাঢ়ী।

সকল প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে, সমানে আসা সকল ঘেরাটোপ সে তার ইচ্ছে শক্তির বলে একের পর এক টপকে এখন দাঁড়িয়েছে পুলসিরাতের দরজায়। যে শিল্পী রাঢ়ীর একদিন ছিলো সুখের সংসার, সেই শিল্পী রাঢ়ী এখন নিজের প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তি পেতে আদালত আর বিভিন্ন জনের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে বেড়াচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিল্পী রাঢ়ীকে জানাই অভিনন্দন। কারণ সে কিছুতে দমেনি, থামেনি।

অভিবাদন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন। জীবনগড়ার লক্ষ্য নিয়ে সময়ের স্রােতে এক নারী যখন সকল কিছু হারিয়ে অর্থ সংকটের অতল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো, তখনই তার সামনে ভরসার সোপান মেলে ধরেন তিনি। শুধু শিল্পী রাঢ়ীকেই নয়, আরও বেশ ক’জন অসহায় নারীর অভিভাবকত্বও করেন তিনি। এক’কন্যার জনক আফজাল হোসেন সমাজের অসহায়দের প্রতি তার মহানুভবতা সমাজের অন্যদেরকও অথাৎ সমাজে ছিটিয়ে ছড়িয়ে থাকা শিল্পী রাঢ়ীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ করবে।

অবশ্যই না, দু একজন শিল্পী রাঢ়ীকে সহযোগিতা করলেই সমাজের সব দায়িত্ব পালন হয় না। সমাজের সকল শিল্পীদের অসহায়ত্বের পরিবেশ গড়ে তুলতে পারাটাই আসল পারা। সেই পারার আগে যারা অসহায়ের পাশে দাঁড়ায় তাদের স্যালুট করতেই হয়।

লেখক : সাইফুল ইসলাম সিফাত
গণমাধ্যমকর্মী