অনলাইন ডেস্ক:
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে ভূস্বর্গখ্যাত এই উপত্যকা কার্যত থমকে আছে। বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরে নিরাপত্তাবাহিনীর প্রায় ৩০ হাজার অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে। রাস্তাঘাট, বাজার, দোকানপাট, মসজিদ-সহ কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনায় এখনো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি।
সংবিধান থেকে কাশ্মীর নিয়ে বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে কাশ্মীরিরা বিক্ষোভ করছেন। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে অন্তত ছয় কাশ্মীরি নিহত ও আরো পাঁচ শতাধিক গ্রেফতার হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ বাতিলের পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশি পাকিস্তান-ভারতের উত্তেজনাও এখন চরমে। এর মাঝেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ঘুরছে; কিছু ছবি আবার রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু আসলেই সেসব ছবির মূল ঘটনা কি কিংবা পুরনো কিনা সেব্যাপারে পরিষ্কার তথ্য কেউ দিতে পারেনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পাশাপাশি তিনটি ছবিতে দেখা যায়, ভারতীয় পুলিশের কয়েকজন সদস্য এক কাশ্মীরি নারীকে ঘিরে ধরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করছে। দ্বিতীয় ছবিতে, ওই নারীকে মাটিতে ফেলে সেনা সদস্যদের মারপিট ও লাথি মারতে দেখা যায়।
এ দুই ছবিতে ওই নারীকে স্পষ্ট দেখা না গেলেও তৃতীয় ছবিতে এক পুলিশ সদস্যের পা ধরে কাঁদতে দেখা যায় কাশ্মীরি এক তরুণীকে। তার এই ছবি হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করেছেন। এমনকি বেশ কিছু ভিডিও শেয়ার করেও অনেকে দাবি করেছেন, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি।
ফজলুল হক পাটওয়ারি নামের এক ব্যক্তি এই তিনটি ছবি দ্বীন-ই-ইসলাম নামের একটি গ্রুপে শেয়ার করেছেন। ছবিতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা ওই নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন।
ছবিতে পাটওয়ারি ক্যাপশন দিয়েছেন, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি! প্লিজ, তাদের জন্য দোয়া করবেন। এটি ওই গ্রুপে দেয়ার পর শত শত মানুষ সেটি শেয়ার করেন।
ইন্ডিয়া ট্যুডের অ্যান্টি ফেইক নিউজ ওয়ার রুম (এএফডব্লিউএ) অনুসন্ধানের পর বলছে, এই ছবিগুলো পুরনো। এছাড়া ছবিগুলো পৃথক ঘটনার এবং আলাদা আলাদা বছরে ধারণ করা হয়েছে।
গুগলে প্রথম ছবিটি দিয়ে সার্চ করলে ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারির একটি ব্লগ পোস্টের লিঙ্ক পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, পুলিশের এক সদস্য ওই নারীর একটি দোপাট্টা কেড়ে নিচ্ছেন। ওই সময় কাশ্মীরের পরিস্থিতি বর্ণনা করে সেই ব্লগ পোস্টের শিরোনামে বলা হয়, কাশ্মীরি গণহত্যা। তবে এই ছবিটি কাশ্মীরে তোলা হয়েছে কিনা সেব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি ইন্ডিয়া ট্যুডে।
দ্বিতীয় ছবিতে দেখা যায়, পুলিশের এক সদস্য মাটিতে লুটিয়ে পড়া এক নারীকে সজোরে লাথি মারছেন। এই ছবিটি প্রায় তিন বছর আগে তোলা হয়েছিল। গ্রেটার কাশ্মীর (জিকে) নামের একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ফটো গ্যালারিতে এই ছবিটি পোস্ট করা হয়।
ছবির ক্যাপশনে বলা হয়, শনিবার জাম্পা কাদাল বিক্ষোভে নিহত কুলগাঁওয়ের তরুণের মরদেহ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা প্রতিরোধ করছেন এক নারী। এ সময় পুলিশের এক সদস্য তাকে লাথি মারেন। আমান ফারুক/জিকে।
এই ছবিতে এক নারীকে কাঁদতে কাঁদতে পুলিশের পা ধরে বসে থাকতে দেখা যায়। ছবিটি ২০০৪ সালের ১৭ মে তোলা হয়েছিল। ছবিটি সাটার স্টকের ফটো গ্যালারিতে পাওয়া যায়। ছবিটি তুলেছেন আলতাফ কাদরি।
সাটার স্টকে ছবিটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, বিক্ষোভের সময় রফিক আহমদ নামের এক তরুণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রফিক আহমদের বোন সামিনা তার ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে পুলিশ কর্মকর্তার পায়ে ওড়না ছুড়ে মারেন। তবে এই ছবিটি কাশ্মীর থেকে তোলা কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এই তিনটি ছবি যে উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রতিক উত্তেজনার নয় সেটি নিশ্চিত।
জম্মু-কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিভিন্ন দেশে।