চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প

  • আপডেট: ০১:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী ২০২২
  • ৩৪

ছবি-সংগৃহিত

হোটেলে গৃহবধূকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও রেস্টুরেন্ট এবং আবাসিক হোটেলগুলোতে দাম নিয়ে নৈরাজ্যেও চরম প্রভাব পড়েছে পর্যটন ব্যবসার ওপর। ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে মিলছে না উল্লেখযোগ্য পর্যটকের দেখা। ফলে হতাশা বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে।

কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল এন্ড রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে পর্যটন এলাকার প্রায় আবাসিক হোটেলে ৮০-৯০ ভাগের অধিক রুম বুকিং থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রায় হোটেলে ৫০ ভাগের অধিক রুম খালি পড়ে আছে। বলতে গেলে চলতি পর্যটন মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পর্যটক নেই।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুল আবছার জানান, বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনেও পর্যটকের দেখা মেলেনি সেভাবে। কিন্তু অন্যান্য বছর হোটেলে রুম পেতেই গলদঘর্ম হতে হতো পর্যটকদের। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতিও গেছে হাজার হাজার পর্যটক রাস্তায় এবং খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছে। কিন্তু এবার দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পরও ধর্ষণকাণ্ড ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের গলাকাটা বাণিজ্য নিয়ে পর্যটন ব্যবসায় চরমভাবে ধস নেমেছে; যা পর্যটন ব্যবসার জন্য সত্যিই উদ্বেগজনক।

কক্সবাজার পর্যটন গলফ মাঠের গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারাদার কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সেতু বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর ছুটির ৩ দিনে পর্যটকদের বড় বাস পার্কিং ছিল সাড়ে ৩০০টি। পার্কিং জায়গা না পেয়ে স্থানীয় ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে আরও ২৫০ বড় বাস পার্কিং করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ বাস কক্সবাজারে পার্কিং হয়েছিল। কিন্তু এবারে বছরের বিদায় ও বরণ উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকদের বড় বাস পার্কিং করা হয় ১০০টির মতো। এ থেকে বোঝা যায়, অন্যান্য ছুটির সময়ের তুলনায় এবার কক্সবাজারে পর্যটক আসেনি বললেই চলে।

তিনি বলেন, এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটক ব্যবসায়ীরা। মূলত থার্টিফার্স্ট নাইটকে উপলক্ষ করে পার্কিং ইজারা নেওয়া হয়; যা খুবই হতাশাজনক।

ইজারাদার সেতু বলেন, মূলত গৃহবধূকে সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী কর্তৃক দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও ডাল-ভাতের দামসহ মালাই চায়ের দাম নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় চলতি বছর কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবার আশানুরূপ পর্যটক আসেনি। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে মাত্র ৫০ শতাংশের অধিক রুম বুকিং হয়। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারি নিষেধাজ্ঞাও পর্যটক ধসের আরেকটি কারণ। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। বছর বিদায় ও বরণের এমন সময়ে কক্সবাজারে এমন নাজুক অবস্থা আর হয়নি।

আবাসিক হোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, এখন সব হোটেল অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে। তাই কোনো দালালের কাছে না নিয়ে গিয়ে সরাসরি হোটেল বুকিং দিলে সাশ্রয় রেটে রুম দেওয়া সম্ভব। এবার কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের আগমন হয়নি। তবে খুশির খবর হচ্ছে এবার অন্যবারের তুলনায় কিছু বিদেশি পর্যটক বেশি এসেছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারের সাড়ে ৪০০ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল; যা এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারে যাতে আর কোনো নেতিবাচক ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারকে নিয়ে প্রচারণায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শুধু থার্টিফার্স্ট নাইট বা বর্ষবরণ নয়, ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে খাঁটি গরুর দুধ বিক্রর নামে প্রতারণা

চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প

আপডেট: ০১:০৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী ২০২২

হোটেলে গৃহবধূকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও রেস্টুরেন্ট এবং আবাসিক হোটেলগুলোতে দাম নিয়ে নৈরাজ্যেও চরম প্রভাব পড়েছে পর্যটন ব্যবসার ওপর। ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে মিলছে না উল্লেখযোগ্য পর্যটকের দেখা। ফলে হতাশা বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে।

কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল এন্ড রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, প্রতি বছর এ সময়ে পর্যটন এলাকার প্রায় আবাসিক হোটেলে ৮০-৯০ ভাগের অধিক রুম বুকিং থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রায় হোটেলে ৫০ ভাগের অধিক রুম খালি পড়ে আছে। বলতে গেলে চলতি পর্যটন মৌসুমে উল্লেখযোগ্য পর্যটক নেই।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুল আবছার জানান, বছরের শেষ দিন অর্থাৎ ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনেও পর্যটকের দেখা মেলেনি সেভাবে। কিন্তু অন্যান্য বছর হোটেলে রুম পেতেই গলদঘর্ম হতে হতো পর্যটকদের। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতিও গেছে হাজার হাজার পর্যটক রাস্তায় এবং খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়েছে। কিন্তু এবার দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পরও ধর্ষণকাণ্ড ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের গলাকাটা বাণিজ্য নিয়ে পর্যটন ব্যবসায় চরমভাবে ধস নেমেছে; যা পর্যটন ব্যবসার জন্য সত্যিই উদ্বেগজনক।

কক্সবাজার পর্যটন গলফ মাঠের গাড়ি পার্কিংয়ের ইজারাদার কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর সালাহউদ্দিন সেতু বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর ছুটির ৩ দিনে পর্যটকদের বড় বাস পার্কিং ছিল সাড়ে ৩০০টি। পার্কিং জায়গা না পেয়ে স্থানীয় ইলিয়াছ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে আরও ২৫০ বড় বাস পার্কিং করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৭০০ বাস কক্সবাজারে পার্কিং হয়েছিল। কিন্তু এবারে বছরের বিদায় ও বরণ উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকদের বড় বাস পার্কিং করা হয় ১০০টির মতো। এ থেকে বোঝা যায়, অন্যান্য ছুটির সময়ের তুলনায় এবার কক্সবাজারে পর্যটক আসেনি বললেই চলে।

তিনি বলেন, এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটক ব্যবসায়ীরা। মূলত থার্টিফার্স্ট নাইটকে উপলক্ষ করে পার্কিং ইজারা নেওয়া হয়; যা খুবই হতাশাজনক।

ইজারাদার সেতু বলেন, মূলত গৃহবধূকে সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী কর্তৃক দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও ডাল-ভাতের দামসহ মালাই চায়ের দাম নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় চলতি বছর কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবার আশানুরূপ পর্যটক আসেনি। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে মাত্র ৫০ শতাংশের অধিক রুম বুকিং হয়। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারি নিষেধাজ্ঞাও পর্যটক ধসের আরেকটি কারণ। পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে। বছর বিদায় ও বরণের এমন সময়ে কক্সবাজারে এমন নাজুক অবস্থা আর হয়নি।

আবাসিক হোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান, এখন সব হোটেল অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে। তাই কোনো দালালের কাছে না নিয়ে গিয়ে সরাসরি হোটেল বুকিং দিলে সাশ্রয় রেটে রুম দেওয়া সম্ভব। এবার কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের আগমন হয়নি। তবে খুশির খবর হচ্ছে এবার অন্যবারের তুলনায় কিছু বিদেশি পর্যটক বেশি এসেছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারের সাড়ে ৪০০ আবাসিক হোটেলে প্রায় দেড় লাখ লোক রাত্রিযাপন করতে পারেন। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি হোটেলে সিসিটিভি ক্যামেরা নিশ্চিত করা হয়েছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল; যা এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানা ও পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজারে যাতে আর কোনো নেতিবাচক ঘটনা না ঘটে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারকে নিয়ে প্রচারণায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতে এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শুধু থার্টিফার্স্ট নাইট বা বর্ষবরণ নয়, ভরা পর্যটন মৌসুমে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।