হারিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো গোপনীয় নয়: সচিব

  • আপডেট: ০৯:৫০:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১
  • ১৯

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি নথি গায়েবের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে ক্রাইম সিন ইউনিট। এরই মধ্যে আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় সচিব আলী নূর বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো তেমন গোপনীয় নয়, তবে ফাইল হারিয়ে যাওয়াটাই বড় বিষয়। রোববার (৩১ অক্টোবর) ক্রাইম সিন ইউনিটের তদন্ত শুরুর দিন নিজ দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

কী ধরণের ফাইল ছিল জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এগুলো ক্রয় সংক্রান্ত। এগুলো তেমন গোপনের কিছু নেই। প্রত্যেকটা ফাইলের তথ্য আমাদের অন্যান্য বিভাগেও আছে, আমাদের কম্পিউটারেও আছে, আমাদের ডিজি অফিসগুলোতেও আছে। এটা নিয়ে তেমন সমস্যা না, কিন্তু মূল বিষয়টা হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়াটা। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। এটিই উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

নথি গায়েবের ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কাউকে সন্দেহ করেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সন্দেহের বিষয়টা তো এখন বলাটা কঠিন। কারণ, আমরা তো সত্যিকারভাবেই আসলে জানি না, কে এই কাজটি করেছে। আমি তো মনে করি যে, আমরা সবাই সন্দেহের মধ্যেই আছি। আমরা পুলিশকে সেভাবেই বলেছি, আপনারা সবাইকেই ইনক্লুড করবেন, যাতে আমরা তথ্যটা জানতে পারি, উদ্ধার করতে পারি।’

সচিব বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটা লকারের একটা ড্রয়ার থেকে কিছু ফাইল মিসিং হয়েছে, এটা জানার পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অফিসারদের সেখানে পাঠাই। পরে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, মিসিং হয়েছে। এটা শোনার পর আমি স্পটে গিয়েছি। আমাদের অতিরিক্ত সচিবরা আমার সঙ্গে ছিলেন। ’

আলী নূর বলেন, ‘ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পর আমি পুলিশকে খবর দিলাম। এডিসিসহ আরও দুজন কর্মকর্তা আমাদের এখানে আসছেন। তারা বিষয়গুলো দেখেছেন। দেখার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করি, ক্যাবিনেট সচিব মহোদয়কে অবহিত করি এবং পুলিশকে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

সচিব আরও বলেন, ‘এর বাইরে সিআইডিকে অনুরোধ করি, বিষয়টা টেক আপ করার জন্য, যাতে আমাদের যে বিষয়টা ঘটে গেছে, এটাতো আমাদের উদ্ধার করতে হবে, যেভাবেই হোক। যারা এর সাথে জড়িত, এটা খুঁজে বের করতে হবে, কীভাবে হলো, কখন হলো। এটাই ছিল আমাদের মূল বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, প্রকৃত ঘটনাটা যেন আমরা জানতে পারি।’

এ ঘটনায় চার সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘সেই কমিটিও কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই একটি তথ্য জানতে পারবো, কারা কীভাবে কাজটি করেছে এবং কেন করেছে।’

করোনাকালে নানাকাণ্ডে আলোচিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঘটেছে তুঘলকি কাণ্ড। রাতের অন্ধকারে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গায়েব হয়ে গেছে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি। নিচতলার ২৯ নাম্বার কক্ষে বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ঘটে এ ঘটনা।

পরের দিন বৃহসপতিবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে রোববার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে তদন্তে নামে সিআইডি। সংস্থাটির ক্রাইম সিন ইউনিট ২৯ নম্বর কক্ষের প্রতিটি অংশে তল্লাশি চালায়।

জানা যায়, বুধবার রাতে এ কক্ষের লকারে তালাবন্দি করে ফাইলগুলো রেখে যান কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তালা খুলে দেখতে পান ফাইলগুলো গায়েব। এ লকারের চাবি থাকে আরেক কম্পিউটার অপারেটর আয়েশার কাছেও।

কম্পিউটার অপারেটর আশেয়া আক্তার জানান, যাওয়ার আগে ফাইলগুলো রাখা হয়েছে, তখন তিনি দেখেন ১৭টা ফাইল-ই ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় সে আসে (জোসেফ)। বেলা ১২টার সময় একটা পত্র নিষ্পত্তির জন্য কেবিনেট খোলেন তখন দেখেতে পান ১৭টা ফাইল নেই। যুগ্ম সচিব প্রশাসন অধি শাখা ক্রয় সংগ্রহ ২, ক্রয় সংগ্রহ অধিশাখা এছাড়াও বিভিন্ন শাখার লোক এখানে বসে একটা রুমের ভেতর। এর আগে একটা ফাইল হারিয়ে ছিল লকডাকউনের আগস্টের মাসের ৮ তারিখে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি বলে জানান সিআইডির এসপি মো. কামরুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, এখনো কোনো মামলা হয়নি জিডি হয়েছে। ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে আর ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এটা তদন্তের একটা অংশ। পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

যেভাবে হ ত্যা করা হয় তরুণ আইনজীবী সাইফলকে

হারিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো গোপনীয় নয়: সচিব

আপডেট: ০৯:৫০:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৭টি নথি গায়েবের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে ক্রাইম সিন ইউনিট। এরই মধ্যে আলামতও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় সচিব আলী নূর বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো তেমন গোপনীয় নয়, তবে ফাইল হারিয়ে যাওয়াটাই বড় বিষয়। রোববার (৩১ অক্টোবর) ক্রাইম সিন ইউনিটের তদন্ত শুরুর দিন নিজ দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

কী ধরণের ফাইল ছিল জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এগুলো ক্রয় সংক্রান্ত। এগুলো তেমন গোপনের কিছু নেই। প্রত্যেকটা ফাইলের তথ্য আমাদের অন্যান্য বিভাগেও আছে, আমাদের কম্পিউটারেও আছে, আমাদের ডিজি অফিসগুলোতেও আছে। এটা নিয়ে তেমন সমস্যা না, কিন্তু মূল বিষয়টা হচ্ছে ফাইল মিসিং হওয়াটা। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। এটিই উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

নথি গায়েবের ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কাউকে সন্দেহ করেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘সন্দেহের বিষয়টা তো এখন বলাটা কঠিন। কারণ, আমরা তো সত্যিকারভাবেই আসলে জানি না, কে এই কাজটি করেছে। আমি তো মনে করি যে, আমরা সবাই সন্দেহের মধ্যেই আছি। আমরা পুলিশকে সেভাবেই বলেছি, আপনারা সবাইকেই ইনক্লুড করবেন, যাতে আমরা তথ্যটা জানতে পারি, উদ্ধার করতে পারি।’

সচিব বলেন, ‘বৃহস্পতিবার একটা লকারের একটা ড্রয়ার থেকে কিছু ফাইল মিসিং হয়েছে, এটা জানার পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অফিসারদের সেখানে পাঠাই। পরে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, মিসিং হয়েছে। এটা শোনার পর আমি স্পটে গিয়েছি। আমাদের অতিরিক্ত সচিবরা আমার সঙ্গে ছিলেন। ’

আলী নূর বলেন, ‘ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পর আমি পুলিশকে খবর দিলাম। এডিসিসহ আরও দুজন কর্মকর্তা আমাদের এখানে আসছেন। তারা বিষয়গুলো দেখেছেন। দেখার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে মন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করি, ক্যাবিনেট সচিব মহোদয়কে অবহিত করি এবং পুলিশকে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

সচিব আরও বলেন, ‘এর বাইরে সিআইডিকে অনুরোধ করি, বিষয়টা টেক আপ করার জন্য, যাতে আমাদের যে বিষয়টা ঘটে গেছে, এটাতো আমাদের উদ্ধার করতে হবে, যেভাবেই হোক। যারা এর সাথে জড়িত, এটা খুঁজে বের করতে হবে, কীভাবে হলো, কখন হলো। এটাই ছিল আমাদের মূল বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, প্রকৃত ঘটনাটা যেন আমরা জানতে পারি।’

এ ঘটনায় চার সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘সেই কমিটিও কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই একটি তথ্য জানতে পারবো, কারা কীভাবে কাজটি করেছে এবং কেন করেছে।’

করোনাকালে নানাকাণ্ডে আলোচিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঘটেছে তুঘলকি কাণ্ড। রাতের অন্ধকারে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গায়েব হয়ে গেছে ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি। নিচতলার ২৯ নাম্বার কক্ষে বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ঘটে এ ঘটনা।

পরের দিন বৃহসপতিবার (২৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হলে রোববার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে তদন্তে নামে সিআইডি। সংস্থাটির ক্রাইম সিন ইউনিট ২৯ নম্বর কক্ষের প্রতিটি অংশে তল্লাশি চালায়।

জানা যায়, বুধবার রাতে এ কক্ষের লকারে তালাবন্দি করে ফাইলগুলো রেখে যান কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তালা খুলে দেখতে পান ফাইলগুলো গায়েব। এ লকারের চাবি থাকে আরেক কম্পিউটার অপারেটর আয়েশার কাছেও।

কম্পিউটার অপারেটর আশেয়া আক্তার জানান, যাওয়ার আগে ফাইলগুলো রাখা হয়েছে, তখন তিনি দেখেন ১৭টা ফাইল-ই ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় সে আসে (জোসেফ)। বেলা ১২টার সময় একটা পত্র নিষ্পত্তির জন্য কেবিনেট খোলেন তখন দেখেতে পান ১৭টা ফাইল নেই। যুগ্ম সচিব প্রশাসন অধি শাখা ক্রয় সংগ্রহ ২, ক্রয় সংগ্রহ অধিশাখা এছাড়াও বিভিন্ন শাখার লোক এখানে বসে একটা রুমের ভেতর। এর আগে একটা ফাইল হারিয়ে ছিল লকডাকউনের আগস্টের মাসের ৮ তারিখে।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি বলে জানান সিআইডির এসপি মো. কামরুজ্জামান।

তিনি আরও বলেন, এখনো কোনো মামলা হয়নি জিডি হয়েছে। ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে আর ছায়া তদন্তের অংশ হিসেবে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এটা তদন্তের একটা অংশ। পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।