কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শামীমা নূর পাপিয়া ফুলেফেঁপে উঠেছেন তাদের তালিকা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত এ নেত্রীর আস্তানায় যাতায়াতকারীদেরও তালিকা হচ্ছে।
সাভারের আশুলিয়ায় শুক্রবার একটি মাদ্রাসা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাপিয়ার প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পাপিয়ার সঙ্গে যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। যারাই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ পার পাবে না।
ইতিমধ্যেই একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে জানিয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর কয়েকজনের ওপর নজরদারি চলছে। এদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতানেত্রী রয়েছেন। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকা এক কর্মকর্তার নামও রয়েছে ওই তালিকায়। নানা পর্যায়ে পাপিয়াকে সহায়তা করা সরকারি কর্মকর্তারাও আসছেন তালিকায়। সিগন্যাল মিললেই তাদের ডেকে অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন করা হবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গ্রেফতার করার আগেই পাপিয়ার নানা অপকর্মের বিষয় নিয়ে কাজ করছেন র্যাবের এমন একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছে এক সংসদ সদস্যের হাত ধরে। আর তার অপরাধ জগতে বিস্তার ঘটেছে জেলার আরেক এমপির প্রশ্রয়ে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের বড় বড় কাজ মোটা অঙ্কের কমিশনের ভিত্তিতে পাইয়ে দেয়ার বিষয়ে দেন-দরবার করতেন পাপিয়া ও তার স্বামী। যাকে যে কায়দায় ম্যানেজ করা যায়, সেটা ব্যবহার করতেন পাপিয়া। কেউ প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিলে তাকে কৌশলে প্রতারণার জালে বন্দি করতেন।
পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিকসংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী যুগান্তরকে বলেন, তিনি যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এবং যুব মহিলা লীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নাম বলেছেন। সব অভিযোগ যাচাই করা যায়নি।
সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাপিয়া নিজে বাঁচার জন্যও উপর মহলের সংশ্লিষ্টতার কথা বলতে পারেন। তাই তার দেয়া তথ্য যাচাই করতে এরই মধ্যে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। যেসব রাজনৈতিক নেতা, আমলা বা ব্যবসায়ীর নাম এসেছে মামলার প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে এর মধ্যেই পাপিয়া ও তার স্বামী এবং দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার দেশ ছেড়ে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে র্যাব পাপিয়া ও তার স্বামীসহ চারজনকে আটক করে। পরে তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর থানায় তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। র্যাবের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, প্রথম থেকেই পাপিয়ার এসব অপকর্মের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে র্যাবের একটি টিম কাজ করছিল।