বসন্ত ছুঁয়েছে ভালোবাসাকে

  • আপডেট: ০৩:১৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২০

অনলাইন ডেস্ক:

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। কাকতালীয়ভাবে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ফাল্গুনের এই প্রথম দিন এ বছর কিছুটা অন্যরকমও বটে। চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন; মৃত্যুকে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে মানবসেবাই যে পরম ভালোবাসার প্রতীক তা দেখিয়ে গিয়েছেন; সেই মানবসেবা ও ভালোবাসাকে ঘিরেই।

ষড়ঋতুর এই দেশে বাঙালিপ্রাণ বিশেষ আবেদনে প্রতি বছর এই বসন্তের অপেক্ষায় থাকে। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত এলেও গাছে গাছে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারদিক। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা চলে অবিরত।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। এবার বাংলা বর্ষপঞ্জির পহেলা ফাল্গুন ও ইংরেজি মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলেছে এক সুতোয়। ফলে এক দিনে দুটি উৎসব পালন করছে এদেশের তরুণ-তরুণীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ হৃদয়ে লেগেছে দোলা। সব কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

আবাল-বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী বসন্ত উন্মাদনায় আজ মেতে উঠেছে। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্তবরণে চলবে ধুম আয়োজন। শীত চলে যাবে রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বাসন্তী ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে শীতের জরা-জীর্ণতা।

বসন্তকে সামনে রেখে গ্রামবাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকবে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তী রঙেই। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও। এদিকে, দিনটিকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি।

এদিকে আজ পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’।  ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত।  এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।  মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডদণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

মানবসেবাই যেখানে ভালোবাসার প্রতীক সে অর্থে এই ভালোবাসা প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকের। যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির।

এই দিনটিকে ঘিরে মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে শুভেচ্ছা বিনিময়। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজ দিনভর চলবে আনন্দ। প্রতি বছরের মতো এবারেও জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা শহরে বিভিন্ন মঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।  রয়েছে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, সূচনা সংগীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠিপাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে উৎসবের আয়োজন করেছে। দিনভর এ আয়োজন চলবে সগৌরবে।  হলুদ শাড়ি, হাতে গাঁদাফুল, তরুণীরা ঘর থেকে বের হবে। বন্ধু-বান্ধবী ও প্রিয়জনের সঙ্গে মাতবে আড্ডায়। দিনটি শুক্রবার হওয়াতে একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণও তাদের পদচারণায় মুখর হবে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

গুপ্টিতে আদালতের আদেশ অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় ওয়াল নির্মাণ করায় ফরিদগঞ্জ থানা রিসিভার গ্রহণ করে

বসন্ত ছুঁয়েছে ভালোবাসাকে

আপডেট: ০৩:১৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

আজ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। কাকতালীয়ভাবে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ফাল্গুনের এই প্রথম দিন এ বছর কিছুটা অন্যরকমও বটে। চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন; মৃত্যুকে আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে মানবসেবাই যে পরম ভালোবাসার প্রতীক তা দেখিয়ে গিয়েছেন; সেই মানবসেবা ও ভালোবাসাকে ঘিরেই।

ষড়ঋতুর এই দেশে বাঙালিপ্রাণ বিশেষ আবেদনে প্রতি বছর এই বসন্তের অপেক্ষায় থাকে। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত এলেও গাছে গাছে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারদিক। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা চলে অবিরত।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন করা হয়। এবার বাংলা বর্ষপঞ্জির পহেলা ফাল্গুন ও ইংরেজি মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিলেছে এক সুতোয়। ফলে এক দিনে দুটি উৎসব পালন করছে এদেশের তরুণ-তরুণীসহ সর্বস্তরের মানুষ।

বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ হৃদয়ে লেগেছে দোলা। সব কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

আবাল-বৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী বসন্ত উন্মাদনায় আজ মেতে উঠেছে। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্তবরণে চলবে ধুম আয়োজন। শীত চলে যাবে রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। বাসন্তী ফুলের পরশ আর সৌরভে কেটে যাবে শীতের জরা-জীর্ণতা।

বসন্তকে সামনে রেখে গ্রামবাংলায় মেলা, সার্কাসসহ নানা বাঙালি আয়োজনের সমারোহ থাকবে। ভালোবাসার মানুষেরা মন রাঙাবে বাসন্তী রঙেই। শীতের সঙ্গে তুলনা করে চলে বসন্তকালের পিঠা উৎসবও। এদিকে, দিনটিকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি।

এদিকে আজ পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অর্থাৎ ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’।  ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত।  এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।  মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডদণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

মানবসেবাই যেখানে ভালোবাসার প্রতীক সে অর্থে এই ভালোবাসা প্রত্যেকের জন্য প্রত্যেকের। যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির।

এই দিনটিকে ঘিরে মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে শুভেচ্ছা বিনিময়। বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজ দিনভর চলবে আনন্দ। প্রতি বছরের মতো এবারেও জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ঢাকা শহরে বিভিন্ন মঞ্চে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।  রয়েছে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, সূচনা সংগীত, ভালোবাসার স্মৃতিচারণ, কবিতা আবৃত্তি, গান, ভালোবাসার চিঠিপাঠ এবং ভালোবাসার দাবিনামা উপস্থাপনসহ আরও নানা কর্মসূচি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পকলা একাডেমিসহ দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোতে উৎসবের আয়োজন করেছে। দিনভর এ আয়োজন চলবে সগৌরবে।  হলুদ শাড়ি, হাতে গাঁদাফুল, তরুণীরা ঘর থেকে বের হবে। বন্ধু-বান্ধবী ও প্রিয়জনের সঙ্গে মাতবে আড্ডায়। দিনটি শুক্রবার হওয়াতে একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণও তাদের পদচারণায় মুখর হবে। এ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে।