হাজীগঞ্জের মামুন ও মতলবের শিল্পীসহ র‌্যাবের হাতে ৮ নারী পাচারকারী আটক

  • আপডেট: ০৬:৫১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৭

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার শাহাবুদ্দিন (৩৭), নোয়াখালী জেলার সেনবাগের হৃদয় আহম্মেদ ওরফে কুদ্দুস (৩৫), চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার মামুন (২৪), মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার স্বপন হোসেন (২০), চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের শিপন (২২), মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের রিজভী হোসেন ওরফে অপু (২৭), পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মুসা ওরফে জীবন (২৮) ও চাঁদপুর জেলার মতলবের শিল্পি আক্তার (২৭)। গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ড্যান্স বারে সুন্দরী তরুণীদের পাচার করে আসছে।

এ সময় র‌্যাব সদস্যরা তাদের কাছ থেকে পাচারের জন্য সংগ্রহ করা দুই তরুণীকে উদ্ধারসহ ৩৯টি পাসপোর্ট, ৬৬টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ১৮টি বিমানের টিকেটের ফটোকপি, ৩৬টি ভিসার ফটোকপি, ১টি কম্পিউটার এবং ১৯টি মোবাইল জব্দ করে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে র‌্যাব-১১’র সদর দপ্তরে মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন (পিপিএম-বার) সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদেরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আলেপ উদ্দিন জানান, রবিবার (২৬ জানুয়ারি) র‌্যাব-১১’র একটি আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কামারাঙ্গীর চর ও মুগদা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এই চক্রের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি ও অসাধু ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে। এই নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবার, পোশাক শিল্প এবং ব্রোকেন ফ্যামেলির সুন্দরী তরুণীদের প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে থাকে।

তাদের প্রাথমিক টার্গেটের পর তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি সরাসরি ঢাকায় অথবা আশপাশের কোনো রেস্টুরেন্টে অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক মাইক্রোবাসে সাক্ষাৎ করে।

চূড়ান্ত নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে এবং ট্রাভেল এজেন্ট মালিকদের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তরুণীদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। বিদেশে পাচার করা তরুণীরা এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদেরকে নেশা জাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতো। ওই তরুণীদের মধ্যে কাউকে যদি কোনো খদ্দের পছন্দ করতেন তাহলে বারের মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো মোড়ের শাহ চন্দ্রপুরী রেস্টুরেন্ট থেকে এই চক্রের অনিক হোসেন (৩১), মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০), মো. আক্তার হোসেন (৪০), মো. আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭), আ. হান্নান (৫২) এবং মো. আকাশ (২৯) নামের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১১।

এ সময় বিদেশ পাচারের জন্য জড়ো করা ৪ তরুণীকে উদ্ধারসহ ৭০টি পাসপোর্ট, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমানের টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর এবং একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস ও নগদ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছিল। এ ধারাবাহিকতায় এবং গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুসারে ২৬ জানুয়ারি অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত এই আটজন এ মামলার পলাতক আসামি।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে কেবল নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫ থেকে ৭০০ সুন্দরী তরুণীকে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সূত্র। তরুণীরা এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে হোটেলে নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। তারা নিজ ইচ্ছেয় বাইরে যেতে পারতো না। প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদেরকে নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতো। বাধ্য করা হতো যৌন কাজে।

সারা দেশেই এই চক্রের অসংখ্য সদস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা ড্যান্স ক্লাবের প্রশিক্ষক ও ছাত্রদের মাধ্যমে সুন্দরী তরুণীদের ফেলতো ফাঁদে। বিদেশ যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্র তথা বিদেশে অবস্থানরত ড্যান্স বার মালিকের কাছ থেকে মাথাপিছু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কমিশন পেত স্থানীয় ড্যান্স ক্লাবের প্রশিক্ষক বা ছাত্ররা।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

গুপ্টিতে আদালতের আদেশ অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় ওয়াল নির্মাণ করায় ফরিদগঞ্জ থানা রিসিভার গ্রহণ করে

হাজীগঞ্জের মামুন ও মতলবের শিল্পীসহ র‌্যাবের হাতে ৮ নারী পাচারকারী আটক

আপডেট: ০৬:৫১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২০

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার শাহাবুদ্দিন (৩৭), নোয়াখালী জেলার সেনবাগের হৃদয় আহম্মেদ ওরফে কুদ্দুস (৩৫), চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার মামুন (২৪), মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার স্বপন হোসেন (২০), চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের শিপন (২২), মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজংয়ের রিজভী হোসেন ওরফে অপু (২৭), পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মুসা ওরফে জীবন (২৮) ও চাঁদপুর জেলার মতলবের শিল্পি আক্তার (২৭)। গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ড্যান্স বারে সুন্দরী তরুণীদের পাচার করে আসছে।

এ সময় র‌্যাব সদস্যরা তাদের কাছ থেকে পাচারের জন্য সংগ্রহ করা দুই তরুণীকে উদ্ধারসহ ৩৯টি পাসপোর্ট, ৬৬টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ১৮টি বিমানের টিকেটের ফটোকপি, ৩৬টি ভিসার ফটোকপি, ১টি কম্পিউটার এবং ১৯টি মোবাইল জব্দ করে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে র‌্যাব-১১’র সদর দপ্তরে মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন (পিপিএম-বার) সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদেরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আলেপ উদ্দিন জানান, রবিবার (২৬ জানুয়ারি) র‌্যাব-১১’র একটি আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কামারাঙ্গীর চর ও মুগদা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। এই চক্রের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি ও অসাধু ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে। এই নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবার, পোশাক শিল্প এবং ব্রোকেন ফ্যামেলির সুন্দরী তরুণীদের প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে থাকে।

তাদের প্রাথমিক টার্গেটের পর তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি সরাসরি ঢাকায় অথবা আশপাশের কোনো রেস্টুরেন্টে অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক মাইক্রোবাসে সাক্ষাৎ করে।

চূড়ান্ত নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকে এবং ট্রাভেল এজেন্ট মালিকদের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তরুণীদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। বিদেশে পাচার করা তরুণীরা এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদেরকে নেশা জাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতো। ওই তরুণীদের মধ্যে কাউকে যদি কোনো খদ্দের পছন্দ করতেন তাহলে বারের মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো মোড়ের শাহ চন্দ্রপুরী রেস্টুরেন্ট থেকে এই চক্রের অনিক হোসেন (৩১), মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০), মো. আক্তার হোসেন (৪০), মো. আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭), আ. হান্নান (৫২) এবং মো. আকাশ (২৯) নামের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১১।

এ সময় বিদেশ পাচারের জন্য জড়ো করা ৪ তরুণীকে উদ্ধারসহ ৭০টি পাসপোর্ট, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমানের টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর এবং একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস ও নগদ ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছিল। এ ধারাবাহিকতায় এবং গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুসারে ২৬ জানুয়ারি অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃত এই আটজন এ মামলার পলাতক আসামি।

এদিকে একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে কেবল নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫ থেকে ৭০০ সুন্দরী তরুণীকে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব সূত্র। তরুণীরা এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গে পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে হোটেলে নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দি করে রাখতো। তারা নিজ ইচ্ছেয় বাইরে যেতে পারতো না। প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদেরকে নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হতো। বাধ্য করা হতো যৌন কাজে।

সারা দেশেই এই চক্রের অসংখ্য সদস্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা ড্যান্স ক্লাবের প্রশিক্ষক ও ছাত্রদের মাধ্যমে সুন্দরী তরুণীদের ফেলতো ফাঁদে। বিদেশ যাওয়ার জন্য রাজি করিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্র তথা বিদেশে অবস্থানরত ড্যান্স বার মালিকের কাছ থেকে মাথাপিছু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে কমিশন পেত স্থানীয় ড্যান্স ক্লাবের প্রশিক্ষক বা ছাত্ররা।