মনিরুল ইসলাম মনির :
চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় সহস্রাধিক কিন্ডারগার্টেনে এখন চলছে পাঠ্যবইয়ের জমজমাট বাণিজ্য। উপঢৌকন, নগদ টাকাসহ নানা উপহার সামগ্রী নিয়ে এসব কিন্ডারগার্টেনে নিম্নমানের বই পাঠ্য করা হচ্ছে। আর এসব বই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্ডারগার্টেনগুলো যেসব লাইব্রেরি বা বই কোম্পানি নির্ধারণ করে দেবে সেসব লাইব্রেরি থেকে উচ্চ মূল্যে বই কিনতে হবে। নয়তো ওই কিন্ডারগার্টেনে পড়ানো হয় না। এতে কোমলমতি শিশু বইয়ের বোঝায় মানসিক চাপে ভোগে।
বছরের শুরুতেই জেলার হাজারো কিন্ডারগার্টেনে বিভিন্ন লাইব্রেরির মালিক ও কোম্পানির প্রতিনিধি গিয়ে তাদের নিম্নমানের বই পাঠ্য করানোর জন্য নগদ টাকা কিংবা উপহার দিয়ে থাকেন। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা টাকা কিংবা উপহার নিয়ে এসব বই পাঠ্য করেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থী অনুপাতে টাকার অংক কমবেশি হয়। এর পরই শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হলেই তাদেরকে একটি বইয়ের স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয়। নির্ধারিত লাইব্রেরি থেকে এসব বই কিনতে হয় উচ্চ মূল্য দিয়ে। যেসব বই ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা মূল্য। সেসব বই কিনতে বাধ্য করা হয় ৭০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় পর্যন্ত।
ফলে বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা এসব বই শিশুদের কিনে দেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে অনেক অখ্যাত কুখ্যাত লেখকের বইও পাঠ্য করা হয় টাকার বিনিময়ে। প্লে থেকে নার্সারি কিংবা ক্লাস ওয়ানে শিশুদের ৭ থেকে ১০টি বই পড়তে হয়। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ছাত্ররাই পড়ে মাত্র ৩টি বই। জেলার ১৫ থেকে ২০টি লাইব্রেরির মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি লাইব্রেরিতেই এসব পাঠ্যবই পাওয়া যায়। কারণ তারাই পূর্বে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে গিয়ে নগদ টাকা কিংবা উপহার দিয়ে বই পাঠ্য সিলেকশন করেছেন। এছাড়া এসব বই পড়াতে প্রাইভেট শিক্ষকদের কাছে পাঠাতে হয়। ৪ থেকে ৭ বছরের শিশু সকাল থেকে স্কুল এবং প্রাইভেট পড়তে গিয়ে শারীরিকভাবে ও মানসিক পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছে। অনেকেই ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে।
চাঁদপুর জেলার এসব কিন্ডারগার্টেনে মানসম্মত লেখাপড়া না থাকলেও আছে শিক্ষার্থীর পিঠে বইয়ের বোঝা। এসব প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো ভালো শিক্ষক। যারা শিক্ষক তাদেরও প্রশিক্ষণ নেই। নেই ভালো কোনো বেতন-ভাতা। ফলে বাধ্য হয়েই কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক দিয়ে কিন্ডারগার্টেন চালাতে হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাগণ এসব প্রতিষ্ঠান দেখভালও করেন না। কারণ এগুলো যারা প্রতিষ্ঠা করেন তারাই এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের নামকাওয়াস্তে একটি কমিটি থাকে। তাই তাদের ইচ্ছায়ই সব চলে।
তাই এসব কিন্ডারগার্টেন আইনের আওতায় এনে একটি নীতিমালা কিংবা গাইডলাইনের মাধ্যমে চালানো এবং মানসম্মত ও শিশুদের সহনশীল বই পাঠ্য করার বিষয়েও তদারকির দাবি জানিয়েছেন চাঁদপুরের সচেতন অভিভাবকরা। নাম না প্রকাশ করে মতলব উত্তর উপজেলা সদরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীর এক অভিভাবক বলেন, মুখ দেখে মুগডাল। বড় কর্মকর্তা কিংবা বড় নেতা হলে তার ছেলে-মেয়েরা ভালো নম্বর পায়। যোগাযোগ কিংবা তদবির না থাকলে ভালো লিখেও ভালো নম্বর পায় না শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ভুঁঞা বলেন, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের বই দেয়া এবং সমাপনী পরীক্ষা নেয়া ছাড়া আর আমাদের কোনো তদারকি নেই। এগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, কিন্ডারগার্টেনের নজরদারির আওতায় আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে পত্র দেয়া হয়েছে।
শিরোনাম:
চাঁদপুরে কিন্ডারগার্টেনে পাঠ্যবইয়ের বাণিজ্য
Tag :
সর্বাধিক পঠিত