আসামে কারফিউ ভেঙ্গে সড়কে লাখো জনতা, গুলিতে নিহত ৩

  • আপডেট: ০৩:০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৩

ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আসামের রাজধানী গোহাটিতে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামেন হাজারও জনতা। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত তিনজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

সকালে লোকজন কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসেন। আসামের ছাত্র সংগঠন এএএসইউ (অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন) ও কেএমএসএস (কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি) লোকজনকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানায়।

আন্দোলনকারীরা সড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সরকারদলীয় কয়েকজন মন্ত্রীর বাড়ি এবং রেল স্টেশনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গোহাটির লালুঙগাঁওয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যয়ে গুলি চালায় পুলিশ। এতে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের গোহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন এয়ারলাইন্স আসামে তাদের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। এদিকে গোহাটির পাশাপাশি শিলংয়েও কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর পিটিআই, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজারের।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সিএবি পাস হওয়ার পরপরই আসামের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পুরো রাজ্যকে অস্থির করে তোলে। প্রতিবাদ চলতে থাকায় আসাম ও প্রতিবেশী ত্রিপুরায় সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। গোহাটি ও ডিবরুগড়গামী বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়। হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নিতে থাকায় একপর্যায়ে আসামের চারটি এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। গোহাটিতে প্রতিটিতে ৭০ জন করে সেনাবাহিনীর দুটি দল মোতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি তিনসুকিয়া, ডিবরুগড় ও জোরহাট জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

বিক্ষোভের মুখে আসামের বৃহত্তম শহর গোহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। ডিবরুগড়ে প্রতিবাদকারীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাড়িতে চড়াও হওয়ার পর সেখানেও কারফিউ জারি হয়। প্রতিবাদকারীরা সানোয়ালের লক্ষ্মীনগরের বাড়িতে পাথর নিক্ষেপ করে। তারা আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দুলিয়াজানের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এছাড়া চাবুয়ায় বিজেপি বিধায়ক বিনোদ হাজারিকার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।

আসামজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে বৃহস্পতিবার সকালে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আসামের জনগণকে আশ্বস্ত করে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লেখেন, ‘আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’ মোদির এই টুইট বার্তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস। আসামের কিছু জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই ঘটনা টেনে কংগ্রেসের তরফ থেকে পাল্টা টুইটে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের অসমিয়া ভাই-বোনেরা আপনার এই আশ্বাসবার্তা পড়তে পারবেন না মোদিজি। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন, তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।’

বুধবার রাতে ডিবরুগড়ের চাবুয়ায় প্রতিবাদকারীরা একটি রেলস্টেশনে আগুল লাগিয়ে দেয়। তিনসুকিয়া জেলার পানিতোলা রেলস্টেশনও প্রতিবাদকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে বলে নর্থইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন। বুধবার থেকেই এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ারসহ বেশকিছু সংস্থা আসাম বিমানবন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব শাখার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ডিব্রুগড়ে ৯টি বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনো ট্যাক্সিও পাওয়া যাচ্ছে না।

ফলে গতকাল যারা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তারা এখনও যেতে পারেননি। ইন্ডিগো বৃহস্পতিবার তাদের ডিবরুগড়গামী ও সেখান থেকে ছেড়ে আসার কথা থাকা সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। স্পাইসজেটও গোহাটি ও ডিবরুগড়গামী ও সেখান থেকে ছেড়ে আসার কথা থাকা তাদের সব ফ্লাইট শুক্রবার পর্যন্ত বাতিল করেছে।

বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় বন্ধের ডাক দিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে এই রাজ্যটিতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে আসাম রাইফেলের ২১০ জন আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে রাজ্যটিতে সেনাবাহিনীর ১৪০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয় বলে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

এদিন কলকাতা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে যুব কংগ্রেস। এ সময় রাজ্য বিজেপির সদর দফতরের সামনে কংগ্রেস ও বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছুক্ষণ স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলে। পরে পরস্পরকে বোতল নিক্ষেপ এবং একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

হাজীগঞ্জে বাজার তদারকি অভিযানে ২ প্রতিষ্ঠানকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা

আসামে কারফিউ ভেঙ্গে সড়কে লাখো জনতা, গুলিতে নিহত ৩

আপডেট: ০৩:০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার আসামের রাজধানী গোহাটিতে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নামেন হাজারও জনতা। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে থামাতে গুলি চালায় পুলিশ। এতে অন্তত তিনজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। আহতদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

সকালে লোকজন কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসেন। আসামের ছাত্র সংগঠন এএএসইউ (অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন) ও কেএমএসএস (কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি) লোকজনকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানায়।

আন্দোলনকারীরা সড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সরকারদলীয় কয়েকজন মন্ত্রীর বাড়ি এবং রেল স্টেশনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গোহাটির লালুঙগাঁওয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যয়ে গুলি চালায় পুলিশ। এতে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের গোহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন এয়ারলাইন্স আসামে তাদের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। এদিকে গোহাটির পাশাপাশি শিলংয়েও কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর পিটিআই, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজারের।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সিএবি পাস হওয়ার পরপরই আসামের বিভিন্ন অংশে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পুরো রাজ্যকে অস্থির করে তোলে। প্রতিবাদ চলতে থাকায় আসাম ও প্রতিবেশী ত্রিপুরায় সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। গোহাটি ও ডিবরুগড়গামী বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়। হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে অংশ নিতে থাকায় একপর্যায়ে আসামের চারটি এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। গোহাটিতে প্রতিটিতে ৭০ জন করে সেনাবাহিনীর দুটি দল মোতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি তিনসুকিয়া, ডিবরুগড় ও জোরহাট জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

বিক্ষোভের মুখে আসামের বৃহত্তম শহর গোহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। ডিবরুগড়ে প্রতিবাদকারীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাড়িতে চড়াও হওয়ার পর সেখানেও কারফিউ জারি হয়। প্রতিবাদকারীরা সানোয়ালের লক্ষ্মীনগরের বাড়িতে পাথর নিক্ষেপ করে। তারা আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দুলিয়াজানের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এছাড়া চাবুয়ায় বিজেপি বিধায়ক বিনোদ হাজারিকার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে।

আসামজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে বৃহস্পতিবার সকালে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আসামের জনগণকে আশ্বস্ত করে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লেখেন, ‘আপনাদের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’ মোদির এই টুইট বার্তা নিয়ে খোঁচা দিয়েছে কংগ্রেস। আসামের কিছু জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই ঘটনা টেনে কংগ্রেসের তরফ থেকে পাল্টা টুইটে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের অসমিয়া ভাই-বোনেরা আপনার এই আশ্বাসবার্তা পড়তে পারবেন না মোদিজি। আপনি হয়তো ভুলে গেছেন, তাদের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।’

বুধবার রাতে ডিবরুগড়ের চাবুয়ায় প্রতিবাদকারীরা একটি রেলস্টেশনে আগুল লাগিয়ে দেয়। তিনসুকিয়া জেলার পানিতোলা রেলস্টেশনও প্রতিবাদকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে বলে নর্থইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন। বুধবার থেকেই এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ারসহ বেশকিছু সংস্থা আসাম বিমানবন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার উত্তর-পূর্ব শাখার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সঞ্জীব জিন্দল বলেন, ডিব্রুগড়ে ৯টি বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় কোনো ট্যাক্সিও পাওয়া যাচ্ছে না।

ফলে গতকাল যারা বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন, তারা এখনও যেতে পারেননি। ইন্ডিগো বৃহস্পতিবার তাদের ডিবরুগড়গামী ও সেখান থেকে ছেড়ে আসার কথা থাকা সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। স্পাইসজেটও গোহাটি ও ডিবরুগড়গামী ও সেখান থেকে ছেড়ে আসার কথা থাকা তাদের সব ফ্লাইট শুক্রবার পর্যন্ত বাতিল করেছে।

বৃহস্পতিবার ত্রিপুরায় বন্ধের ডাক দিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে এই রাজ্যটিতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে আসাম রাইফেলের ২১০ জন আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে রাজ্যটিতে সেনাবাহিনীর ১৪০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয় বলে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

এদিন কলকাতা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে যুব কংগ্রেস। এ সময় রাজ্য বিজেপির সদর দফতরের সামনে কংগ্রেস ও বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছুক্ষণ স্লোগান-পাল্টা স্লোগান চলে। পরে পরস্পরকে বোতল নিক্ষেপ এবং একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়।