আজ হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল

  • আপডেট: ০৫:০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ ৮ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল চাঁদপুর জেলা শহর ও হাজীগঞ্জ উপজেলা। লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হবার পর তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা জেলায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর।

মিত্রবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধারা সড়কপথে হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালান। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান পাকসেনাদের নিয়ে চাঁদপুর থেকে পলায়ন করেন।

হাজীগঞ্জে ৩৬ ঘণ্টায়ে এবং বড় স্টেশন এলাকায় তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত হয়। চাঁদপুর থানার সম্মুখে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জীবন কানাই চক্রবর্তী জানান, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। ৮ এপ্রিল ১৯৭১ বিকেলে প্রায় ৮০০ পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর আসে। শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে।

ওই দিন রাতেই চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নাম্বার সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়। হামলা দেখে পাকহানাদার বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ভোরে শহরে প্রবেশ করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল খান ভলান্টিয়ার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।

মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী দেলোয়ার আহমেদ জানান, চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনী মক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের মেরে মেঘনা নদীতে ফেলে দিত। এ সময় পাকসেনারা চাঁদপুরসহ আশপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করে বড় স্টেশন এলাকায় মেঘনা নদীতে ফেলেছে। জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সামনে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। হাজীগঞ্জ নাছিরকোর্টেও ১১ জন শহীদের কবরসহ স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

২০১৩ সালে মোলহেড এলাকায় চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয় রক্তধারা। তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ অঙ্গীকার। প্রতি ১৯৯২ সাল থেকে চাঁদপুরে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পাশাপাশি চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে। এদিকে চাঁদপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিজয় মেলায় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ সন্ধ্যায় চাঁদপুরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। জেলা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার ষ্টেয়ারিং কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে মুক্ত দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও থাকবে প্রদীপ প্রজ্বলন, , সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।

দিবসটি যথাযথ পালনের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য অহবান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরন ও মহাসচিব হারুন আল রশিদ।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর

আজ হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল

আপডেট: ০৫:০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ ৮ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকহানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল চাঁদপুর জেলা শহর ও হাজীগঞ্জ উপজেলা। লাকসাম ও মুদাফ্ফরগঞ্জ মুক্ত হবার পর তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা জেলায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর।

মিত্রবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধারা সড়কপথে হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালান। যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তান ৩৯ অস্থায়ী ডিভিশনের কমান্ডিং অফিসার মেজর জেনারেল রহিম খান পাকসেনাদের নিয়ে চাঁদপুর থেকে পলায়ন করেন।

হাজীগঞ্জে ৩৬ ঘণ্টায়ে এবং বড় স্টেশন এলাকায় তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত হয়। চাঁদপুর থানার সম্মুখে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম চাঁদপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জীবন কানাই চক্রবর্তী জানান, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণের সূচনা করে। ৮ এপ্রিল ১৯৭১ বিকেলে প্রায় ৮০০ পাকসেনার একটি বহর চাঁদপুর আসে। শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে।

ওই দিন রাতেই চাঁদপুরে অবস্থানরত ২ নাম্বার সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে পাকহানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায়। হামলা দেখে পাকহানাদার বাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ভোরে শহরে প্রবেশ করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল খান ভলান্টিয়ার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।

মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী দেলোয়ার আহমেদ জানান, চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড এলাকায় হানাদার বাহিনী মক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের মেরে মেঘনা নদীতে ফেলে দিত। এ সময় পাকসেনারা চাঁদপুরসহ আশপাশের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করে বড় স্টেশন এলাকায় মেঘনা নদীতে ফেলেছে। জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সামনে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। হাজীগঞ্জ নাছিরকোর্টেও ১১ জন শহীদের কবরসহ স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

২০১৩ সালে মোলহেড এলাকায় চাঁদপুর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয় রক্তধারা। তৈরি করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ অঙ্গীকার। প্রতি ১৯৯২ সাল থেকে চাঁদপুরে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পাশাপাশি চাঁদপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে। এদিকে চাঁদপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে বিজয় মেলায় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ সন্ধ্যায় চাঁদপুরের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। জেলা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার ষ্টেয়ারিং কমিটির সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে মুক্ত দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও থাকবে প্রদীপ প্রজ্বলন, , সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান।

দিবসটি যথাযথ পালনের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য অহবান জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার চেয়ারম্যান অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরন ও মহাসচিব হারুন আল রশিদ।