উগ্র সাম্প্রদায়ীকতা কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই: শিক্ষামন্ত্রী

  • আপডেট: ০৯:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১
  • ৩৩

মো. জহির হোসেন:

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।

তিন বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির দেশ এখানে হাজার হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে বস-বাস করছে। এ ভূখন্ডে নানান সময়ে নানান ধরণের মানুষ এসেছে এবং যার যার ধর্ম-কর্ম তারা পালন করেছে। হাজীগঞ্জে যে সাম্প্রদয়ীক হামলার ঘটনা ঘটেছে তা খুবই ন্যাক্কর জনক ঘটনা। এমন ধরণের ঘটনা আর যেনো না ঘটে সে দিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদীয়ক হামলার ঘটনা ঘটেনা তা কিন্তু নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কিন্তু ঘটছে। উগ্র সাম্প্রদায়ীকতা কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সকল ধর্মেই উগ্রতা রয়েছে। আমরা দেখি আমাদের পাশের দেশে মিয়ানমার। তারা খুই শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্ত সেই মিয়ানমারে কিভাবে সাম্প্রদায়ীকতা বিষ ছড়িয়ে মুসলমানদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। একইভাবে ভারতেও কখনো কখনো ঘটে। পশ্চিমাবিশে^ও বোমার হামলার মতো ঘটনা ঘটে।

দীপু মনি বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন কোন সাম্প্রদায়ীক হামলার ঘটনা ঘটে তখন একটা শব্দ শোনা যায়, মুসলিম জঙ্গীবাদ বা ইসলামী জঙ্গীবাদ কিন্তু জঙ্গী সব ধর্মেই আছে। যখন খ্রিস্টান ধর্মের জঙ্গী ধরা হয় তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খ্রিস্টান জঙ্গী বলে।

তিনি আরো বলেন, ইসলাম ধর্মের যারা বদনাম করছে, ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে তাদের আমরা প্রতিহত করতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে উগ্রবাদের কোন স্থান নেই। মদিনার সনদ অনুযায়ী আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকতে হবে। বিদায় হজে¦র ভাষণ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যদি মুসলমান হয়। তাহলে আমাদের কোরআন হাদিস অনুযায়ী অবশ্যই চলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরআন আমাদের শিখিয়েছে, মানুষকে সম্মান করতে হবে, মানুষের প্রতি সদয় হতে হবে। ধর্ম নিয়ে কোন কোন জবরদস্তি নেই তাহলে কোথায় লেখা আছে, অমুসলিমদের উপসানলয়ে হামলা করতে হবে, তাদেরকে মারতে হবে। কোথও লেখা নেই। যদি কোন একজন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তাহলে সে গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো। এ বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান কামাল, দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনিম হাসান, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. নাসির উদ্দিন সরোয়ার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, একই সংগঠনের ট্রাস্টি অংকুর জীৎ সাহা নব ও সচিব ডাঃ দীলিপ কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাঈন উদ্দিন, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম।

সভাপতিত্ব করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার।

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বক্তব্যে বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন ফিতনা-পাছাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চাইতেও কঠিন অপরাধ। আরেক জায়গায় আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, তোমরা কাউকে মন্দ বল না। আল্লাহকে ছাড়া যদি কারো আরোদনা করে তাদেরকেও মন্দ বলা যাবে না। এটি আল্লাহ তায়’ালার নির্দেশনা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের সম্প্রীতি সম্পর্কে অনেক শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। যারা মদিনার সনদ পড়েছেন, তারা বুঝতে পারবেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তারপরেও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি তখন অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেই সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি কখনো ধর্মকে কারো উপর চাপিয়ে দেননি, অর্থাৎ ধর্মগ্রহন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেননি।

ফরিদুল হক খান বলেন, আল্লাহ রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, হে আমার উম্মতগণ তোমরা দিন বা ধর্মের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। অতীতে অনেক জাতি এই কারণে ধ্বংস হয়েগেছে।

সুজিত রায় নন্দী বক্তব্যে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটি অশুভ শক্তি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি চায় না। আমাদেরকে আজ সেই অশুভ শক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সত্য ও সুন্দরের বিজয়কে নিশ্চিত করব। আর আমাদের আজকের শপথ হউক, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে সোচ্চার হতে হবে-সেহলী পারভীন

উগ্র সাম্প্রদায়ীকতা কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই: শিক্ষামন্ত্রী

আপডেট: ০৯:৪৯:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১

মো. জহির হোসেন:

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর-৩ (সদর-হাইমচর) আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।

তিন বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির দেশ এখানে হাজার হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ শান্তিতে বস-বাস করছে। এ ভূখন্ডে নানান সময়ে নানান ধরণের মানুষ এসেছে এবং যার যার ধর্ম-কর্ম তারা পালন করেছে। হাজীগঞ্জে যে সাম্প্রদয়ীক হামলার ঘটনা ঘটেছে তা খুবই ন্যাক্কর জনক ঘটনা। এমন ধরণের ঘটনা আর যেনো না ঘটে সে দিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদীয়ক হামলার ঘটনা ঘটেনা তা কিন্তু নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই কিন্তু ঘটছে। উগ্র সাম্প্রদায়ীকতা কোন ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সকল ধর্মেই উগ্রতা রয়েছে। আমরা দেখি আমাদের পাশের দেশে মিয়ানমার। তারা খুই শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্ত সেই মিয়ানমারে কিভাবে সাম্প্রদায়ীকতা বিষ ছড়িয়ে মুসলমানদের নির্মমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। একইভাবে ভারতেও কখনো কখনো ঘটে। পশ্চিমাবিশে^ও বোমার হামলার মতো ঘটনা ঘটে।

দীপু মনি বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন কোন সাম্প্রদায়ীক হামলার ঘটনা ঘটে তখন একটা শব্দ শোনা যায়, মুসলিম জঙ্গীবাদ বা ইসলামী জঙ্গীবাদ কিন্তু জঙ্গী সব ধর্মেই আছে। যখন খ্রিস্টান ধর্মের জঙ্গী ধরা হয় তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম খ্রিস্টান জঙ্গী বলে।

তিনি আরো বলেন, ইসলাম ধর্মের যারা বদনাম করছে, ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মের অপব্যাখ্যা করছে তাদের আমরা প্রতিহত করতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে উগ্রবাদের কোন স্থান নেই। মদিনার সনদ অনুযায়ী আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকতে হবে। বিদায় হজে¦র ভাষণ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যদি মুসলমান হয়। তাহলে আমাদের কোরআন হাদিস অনুযায়ী অবশ্যই চলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, পবিত্র কোরআন আমাদের শিখিয়েছে, মানুষকে সম্মান করতে হবে, মানুষের প্রতি সদয় হতে হবে। ধর্ম নিয়ে কোন কোন জবরদস্তি নেই তাহলে কোথায় লেখা আছে, অমুসলিমদের উপসানলয়ে হামলা করতে হবে, তাদেরকে মারতে হবে। কোথও লেখা নেই। যদি কোন একজন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তাহলে সে গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো। এ বিষয়গুলো চিন্তা করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান কামাল, দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুনিম হাসান, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. নাসির উদ্দিন সরোয়ার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল, একই সংগঠনের ট্রাস্টি অংকুর জীৎ সাহা নব ও সচিব ডাঃ দীলিপ কুমার ঘোষ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাঈন উদ্দিন, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম।

সভাপতিত্ব করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার।

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বক্তব্যে বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন ফিতনা-পাছাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চাইতেও কঠিন অপরাধ। আরেক জায়গায় আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, তোমরা কাউকে মন্দ বল না। আল্লাহকে ছাড়া যদি কারো আরোদনা করে তাদেরকেও মন্দ বলা যাবে না। এটি আল্লাহ তায়’ালার নির্দেশনা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের সম্প্রীতি সম্পর্কে অনেক শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। যারা মদিনার সনদ পড়েছেন, তারা বুঝতে পারবেন। তিনি মক্কা বিজয়ের সময় অনেক কষ্ট পেয়েছেন। তারপরেও তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি তখন অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবেই সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ পরিচালনা করেছিলেন। তিনি কখনো ধর্মকে কারো উপর চাপিয়ে দেননি, অর্থাৎ ধর্মগ্রহন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেননি।

ফরিদুল হক খান বলেন, আল্লাহ রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, হে আমার উম্মতগণ তোমরা দিন বা ধর্মের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। অতীতে অনেক জাতি এই কারণে ধ্বংস হয়েগেছে।

সুজিত রায় নন্দী বক্তব্যে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। একটি অশুভ শক্তি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি চায় না। আমাদেরকে আজ সেই অশুভ শক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সত্য ও সুন্দরের বিজয়কে নিশ্চিত করব। আর আমাদের আজকের শপথ হউক, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।