• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর, ২০২১
সর্বশেষ আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২১

শান্তি এবং উন্নয়নের স্বার্থে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য্য-ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]
অধ্যক্ষ ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী

মো. জহির হোসেন॥

গত বুধবার (১৩ অক্টোবর) হাজীগঞ্জ বাজারে সংঘর্ষ ও ৪ জন নিহতের ঘটনায় শুক্রবার হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে জুময়ার নামাজ শেষে হাজীগঞ্জ বাজারে যেনো কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা পুনারায় না ঘটে এজন্য হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা, হাজীগঞ্জ আহমাদীয়া কামিল মাদরাসার কর্মকর্তা, হাজীগঞ্জ কওমী মাদরাসার কর্মকর্তা ও পাটওয়ারীর বাড়ীর লোকজনদের দিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতাওয়াল্লি ও হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, শিক্ষাগকেষক ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী।

সু-শৃঙ্খলভাবে শুক্রবার জুময়ার নামাজ শেষে তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, হাজীগঞ্জের শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য যে ভূমিকা রাখা দরকার, আমরা হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কর্তৃপক্ষ, আহমাদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেটের পক্ষ থেকে সেই ভূমিকা পালন করেছি। এ জন্য হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের পেশ ইমাম এবং খতিব আব্দুর রউফ সাহেবের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এবং তার পাশাপাশি আলীয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, মসজিদ কমপ্লেক্স, আহমাদ আলী পাটওয়ারীর পরিবারবর্গসহ সবাই সর্বাত্মক ভাবে সহযোগিতা করে আজকের এই হাজীগঞ্জের ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষে যে ভূমিকা মসজিদ কমপ্লেক্স থেকে রাখা হয়েছে। এ জন্য আমি কমপ্লেক্সের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি প্রশাসনের বিশেষ করে এই কমপ্লেক্সের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার।

তিনিও সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন, এবং হাজীগঞ্জ থানার ওসি সাহেব তিনিও খোঁজ খবর নিয়েছেন। আমাদের সাথে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং হাজীগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি রুহিদাস বনিক, সাধারণ সম্পাদক প্রাণ কৃষ্ণ সাহা’সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা দায়িত্বশীল রয়েছেন, তাদের সাথেও শুক্রবার সকাল থেকে যোগাযোগ রক্ষা করেছি। যেনো হাজীগঞ্জের রাজনৈতিক সম্প্রতি, অর্থনৈতিক সম্প্রীতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সম্প্রীতিসহ সকল সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য আমরা সকলে একযোগে কাজ করলে হাজীগঞ্জে আর কোন দূর্ঘটনা ঘটবে না। আমার বিশ^াস সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হাজীগঞ্জে আরো শান্ত রাখতে পারবো। আমি হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তির সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম মহোদয়ের সাথেও যোগাযোগ করেছি। এমপি মহোদয়ও এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বড় মসজিদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ওনার প্রতিও আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। চাঁদপুরের ডিসি মহোদয়, এসপি মহোদয় ওনারা সকলে হাজীগঞ্জের সম্প্রীতি রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। এ জন্য আমি মুসল্লি ভাইদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।

ড. আলমগীর কবির পাটওয়ারী বলেন, হাজীগঞ্জের আপামর জনসাধারণ যারা আছেন যে যে সম্প্রদায়ের থাকুন না কেন হাজীগঞ্জের সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই সম্প্রীতি অব্যাহত রাখার লক্ষে যে সেকরিপ্রাইজ করা দরকার দেশ মাতৃকার বৃহত্তর কল্যাণে আমরা দেশের জন্য, এলাকার জন্য কাজ করবো। আমাদের রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে, মানুষের কল্যাণের জন্য। যে রাজনীতি মানুষকে ভীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদির মধ্যে নিবেদিত করে আমরা এ রাজনীতি হাজীগঞ্জে চাই না।

তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন যে, আমারা শান্তি চাই, আর শান্তির লক্ষ্যে প্রয়োজন সম্প্রীতি। সম্প্রীতি গড়ার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য হচ্ছে পরিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতি ধরে রাখা। সম্প্রীতি ধরে রাখতে পারলে দুনিয়া আখেরাতের শান্তির পাশাপাশি দেশ মাতৃকার সকল স্তরের উন্নয়ন সম্ভাব। কাজই বর্তমান উদ্ভত পরিস্থিতির আলোকে যে কোন অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখা অপরিহার্য্য।

তিনি বলেন, গত ১৩/১০/২০২১ তারিখ বুধবার কুমিল্লা নানুয়া দিঘির পাড় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের পুজার মন্ডপে মুর্তির পায়ের উপর পবিত্র
কালামে পাক রাখার প্রতিবাদে সাম্প্রদায়িক বিরোধ চরমভাবে দেখা দেয়।

তারই ধারাবাহিকতায় হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারে আনুমানিক রাত সাড়ে আটটার দিকে পশ্চিম বাজার থেকে কলেজ রোড পর্যন্ত সহিংসতা ছাড়িয়ে পড়ে। সহিংসতার এক পর্যায়ে ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এতে হাজীগঞ্জের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়।

এমতাবস্থায় পারিপার্শিক অবস্থা অনেক থমথমে এবং উত্তেজনাপূর্ন। এরই মধ্যে ১৫/১০/২০২১ পবিত্র শুক্রবার। জুময়াবার হাজার হাজার মুসুল্লী এখানে সমবেত হয়ে জুময়ার জামাত আদায় করে থাকেন। সম্মানীত মুসল্লীগন সাধারনত অপেক্ষায় থাকেন- জুমায়ার খুতবায়, পরিস্থিতির আলোকে ইমাম সাহেব হুজুর কি বলেন। অধিকাংশ সময় হুজুরের বয়ানের উপর মুসুল্লীগন আবেগ আপ্লুত হয়ে অনেক সময় প্রতিবাদী হয়ে পড়েন। অনেক সময় মুসুল্লীগন রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। যদিও বিগত দিনে তেমন কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় নি।

আমরা হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স আহমাদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেট কোন অবস্থাতেই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় চুপ থাকতে পারি না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি পেশ ইমামও খতিব কুমিল্লা এবং হাজীগঞ্জে লাশ পড়ার ঘটনার উপর খুতবার বয়ানে বক্তব্য প্রদান করেন, আবেগ আপ্লুত হয়ে বক্তব্য দেন এবং কান্নাকাটি করে দোয়া করেন, তা হলে ব্যাপক ভাবে হিন্দু সম্প্রদায় বিরোধী মিছিল মিটিংসহ আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। এবং তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। যা সামাল দিতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটবে। জানমালের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হাজীগঞ্জের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে। শান্তি সম্প্রতির লক্ষ্যে আমাদের সকলকে উদ্যেগী হতে হবে। কোন অবস্থাতেই বিন্দুমাত্র অবহেলা করা যাবে না। অবহেলা করলে সহিংসতার রেশ শুধু হাজীগঞ্জেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

যা’ হাজীগঞ্জ তথা চাঁদপুরই শুধু নয় দেশের গন্ডী ছাড়িয়ে আন্তজাতিক পর্যায়ে দেশের ভাব মূর্তী নষ্ট হওয়ার মত আশঙ্কাকে নিয়ন্ত্রনে রাখা আবশ্যক। সে লক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদেরকেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।

এ’মর্মে আমি ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী মোতওয়াল্লী ও সচিব হিসেবে সিদ্ধান্ত প্রদান করি যে, হাজীগঞ্জের সামাজিক সম্প্রীতি , রাজনৈতিক ও সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে, হাজীগঞ্জকে জান-মালের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর স্বার্থে, জেলাবাসী তথা দেশের ভাব মূর্তী রক্ষার স্বার্থে, কুমিল্লায় অনাকাঙ্খিত ভাবে পুজা মন্ডপের ঘটনা এবং হাজীগঞ্জের ৪ জনের মৃত্যুর ঘটনাটির কারনে, আর যেন কেউ সহিংসতার সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

জুমায়ার সময় উপস্থিত সম্মানীত মুসুল্লীগন নামাজের পর যেন জটলা ধরতে না পারে গ্রুপিং সৃষ্টি না করতে পারে। একাত্রিত হয়ে মিছিল বের করতে না পারে। সে বিষয়ে তৎপর থাকার জন্য সকল স্টাফ কর্মচারীদেরকে নিয়ে শৃঙ্খলার লক্ষ্যে স্বেচ্ছা সেবক কমিটি গঠন করা হয়।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • সারা দেশ এর আরও খবর
error: Content is protected !!