সম্মানীত সুধী, আস্সালামু আলাইকুম।
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের ন্যায়, বাংলাদেশেও আমরা সবাই কম বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। এরই মধ্যে আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ:) ওয়াক্ফ এস্টেট হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স দরিদ্রদের মাঝে সাধ্যমত নগদ অর্থ প্রদান ছাড়াও যৎ সামান্য হলেও খাদ্য সামগ্রী বিতরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।
বিগত সময়ে দেশের উপর স্বল্প সময়ের জন্য ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বণ্যা, খরা, ঝড়-টর্নেডোতে লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যাওয়া জনপদ এর দুর্যোগ মোকাবেলায়-সরকার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠাণের পাশাপাশি অত্র ওয়াক্ফ এস্টেট জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াক্বীফ আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ:) তার সময় কালীন এ’ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে “লঙ্গর খানা” খুলে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনন্য ত্যাগের উত্তরসূরী হিসেবে আজ আরো কিছু না করতে পারার কারণে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
যেহেতু, আমরা কোটি কোটি টাকার সম্পদ সম্পত্তি দান করেছি এবং মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছি। যার মাধ্যমে বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষের নামাজ ও নামাজের প্রাসঙ্গীক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে, প্রাণ পণ চেষ্টা করে টেকসই উন্নয়ন করে যাচ্ছি। চলমান দুর্যোগে ব্যাপকভাকে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রয়োজন মনে করছি। যদিও চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু বাস্তবে, আপাতত : তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
যেহেতু,
অত্র এস্টেট কর্তৃক পরিচালিত ধর্মকর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা, বিনিয়োগ কর্মসংস্থান এবং সামাজিক ও মানবিক দান অনুদান কার্যক্রমকে যথাযথ মানে উন্নীত করে দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই করার লক্ষ্যে, বিগত দিনের উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি বর্তমানে বিজনেস পার্ক- ট্রেড সেন্টার, হযরত মকিমউদ্দিন শপিং সেন্টার এর নির্মাণকাজ শুরু করেছিলাম। উক্ত কাজ করতে গিয়ে-
১। পজিশন সেলামী বাবদ প্রাপ্ত টাকা,
২। মসজিদ কমপ্লেক্স তথা ওয়াক্ফ এস্টেট এর বিগত দিনের সকল টাকা;
৩। আমার মেধা-শ্রমে উপার্জিত ব্যক্তিগত টাকা; এমনকি-
৪। আমার বসত বাড়ী ব্যাংকের নিকট বন্ধক রেখে গৃহীত টাকা।
উল্লেখিত ভাবে অর্থের যোগান পূর্বক বিজনেস পার্ক ট্রেড সেন্টারের নির্মাণ কাজ করতে হচ্ছে। যেহেতু মানসম্পন্ন ভাবে নির্মাণ কাজ সম্পাদন না করতে পারলে , সম্মানীত ব্যবসায়ীগণ যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। তারা দীর্ঘকালীন ব্যবসা বাণিজ্যে যেন, ভাল থেকে আরো ভাল করতে পারেন,
সে সকল সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম মাথায় নিয়ে প্রয়োজন মোতাবেক ঋণ, ধার-কর্য করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। একটা কথা বলা প্রয়োজন নির্মাণ কাজে ঋণ গ্রহণ করলেও এস্টেট পরিচালনায় অসুবিধা ছিল না;
যেহেতু, চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আমার মান-সম্মান, ইজ্জত বাজী রেখে, কঠোর পরিশ্রম ও সাধণার মধ্য দিয়ে অর্থের যোগন পূর্বক উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে অত্র এস্টেটের আর্র্থিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।
সে প্রেক্ষিতে-
অত্র এস্টেটের আয়ের উৎস হচ্ছে-
১। প্রায় চারশত দোকানের ভাড়া (গড়ে মাসে ১৩ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা আয়)
২। সিন্দুক থেকে প্রাপ্ত দান বাবদ (গড়ে মাসে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা আয়)
উল্লেখিত, ২টি আয়ের উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে, অত্র এস্টেটের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ব্যায় বর্তমান মানে, পরিচালিত হতে কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। কিন্তু করোনার কারণে বর্তমানে উভয় খাতের আয় বন্ধ। যার প্রেক্ষিতে অত্র এস্টেটের ষ্টাফ কর্মচারীদের বেতন চালানো বর্তমানে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদি এ’ দুর্যোগেও কিছু বেতন-ভাতা চালাতে হয়, তবে ব্যাংক লোন এর টাকা নিয়ে অথবা যে কোন ভাবে আরো ধার কর্য করেই চালাতে হবে। এ’ মুহুর্তে সংকটটি এমন যে, ষ্টাফ কর্মচারীদেরকে চালানোর মত অবস্থা নেই! বর্তমান দুর্যোগে এমনি সংকটাপন্ন অবস্থা, যা কেউ কোন দিন ভাবতেও পারে নি। করোনা সকল চিন্তা, চেতনা ধ্যান-ধারণাকে গুড়িয়ে দিয়েছে, অবাক বিস্ময়ে সারা বিশ^ হতবাক।
করোনা ভাইরাসের এ’ দুর্যোগ, অতীতে ঘটে যাওয়া বণ্যা, টর্নেডোর মত ক্ষণস্থায়ী স্বল্প মেয়াদী নয়। এ’ দুর্যোগের প্রভাব অনেক দীর্ঘ মেয়াদী। যা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের মানবিক, সামাজিক বিপর্যয়সহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ দুর্যোগ অতীতের ন্যায়, মোটেই নয়।
বর্তমান বিপর্যয়ে ছোট, বড় আমরা সকলে যার যার পর্র্যায়ে অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। ক্ষতিগ্রস্থের গতি-পথ দীর্ঘ মেয়াদী হলে, এ ক্ষতির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা’ আল্লাহ’ই ভাল জানেন। আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা নিয়ে আমরা যেন, অপবাদ-অপপ্রচার, মিথ্যাচার না করি, গুজব না ছড়াই, কারো সম্মানে আঘাত না করি। কারো সম্মানে আঘাত করে, কেউ বড় হতে পারে না। যার সম্মানবোধ আছে, সে অন্যের সম্মান লালন করে। আমরা যেন অনুমাণ নির্ভর কথা না বলি। সাধ্যমত পরস্পরকে সহযোগিতা করি।
প্রসঙ্গত যদি বলি- আল্লাহর মেহেরবানীতে আমি অনেক লোকের চাকরি দিয়েছি। শত শত লোকের কর্মসংস্থাণের ব্যবস্থা করেছি। আর্তমানবতায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রতিষ্ঠান, সংঘ-সংগঠনের সাথেও দুর্যোগকালীন সময়ে আমার কষ্টার্জিত ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে সীমিত আকারে হলেও সকল দুর্যোগে জনগণের পাশে সাধ্যমত দাঁড়িয়েছি। সামাজিক কার্যক্রম ও কল্যাণে আমি, অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। আজও বৈশি^ক মহামারিজণিত দুর্যোগের কারণে সাধ্যমত সামান্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছি। কিন্তু দুর্যোগের তূলনায় বর্তমানে তেমন সহযোগিতা করতে পারিনি বলে আমি আন্তরিক ভাবে দু:খিত।
সকল আলোচনা সমালোচনার উর্ধ্বে থেকে আমরা যেন- আল্লাহকে ভয় করি। সে লক্ষ্যে- আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞাণের দ্বারা, কোভিড-১৯ ভেকসিন বা প্রতিশেধক আবিস্কারের মাধ্যমে, যদি করোনা মুক্ত বিশ্ব গড়ে উঠে, বিশ্ব নতুন ভাবে, নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে, তবেই সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে আবার হাসি ফুটে উঠবে। আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন, হেফাজত করুন- আমিন॥
ড. মো. আলমগীর কবির পাটওয়ারী।