• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২০

গাজীপুরে মা ও ২ মেয়েকে গণধর্ষণ ও গলাকেটে হত্যার ঘটনায় র‌্যাবের হাতে আটক ৫

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

গত ২৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মা’সহ একই পরিবারের চারজন যথাক্রমে স্মৃতি ফাতেমা (৩৮), তাঁর মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), হাওয়ারিন (১৩) এবং ছেলে ফাদিল (৮) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গত ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখ গৃহবধূর শ্বশুর আবুল হোসেন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন যার নম্বর-২৮, তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২০। ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড।

জানা যায়, নিহতরা মোঃ রেজোয়ান হোসেন কাজল (৪৫) এর পরিবারের সদস্য। মোঃ রেজওয়ান হোসেন কাজল দীর্ঘদিন যাবৎ মালয়েশিয়ায় চাকুরীরত রয়েছেন। তিনি প্রবাসে থাকাকালীন আনুমানিক ১৮/১৯ বছর পূর্বে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমা (৩৮) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। রেজওয়ান হোসেন কাজলের পৈতৃক বাড়ী ময়মনসিংহের পাগলা থানার গোলাবাড়ি গ্রামে। আনুমানিক ১৫ বছর পূর্বে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন আবদার এলাকায় সে ও তার ছোট ভাই আরিফ একত্রে ৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে পাশাপাশি অবস্থান করছেন। কাজল একটি দোতলা বাড়ী নির্মাণ করে। বাড়ীটির ২য় তলায় স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমা (৩৮), তার মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬) ও হাওয়ারিন (১৩) এবং ছেলে ফাদিল (৮)সহ বসবাস করে আসছিল। তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা স্থানীয় এইচএকে একাডেমিতে দশম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট মেয়ে হাওয়ারিন স্থানীয় ব্রাইট ক্যাডেট মাদ্রাসার ছাত্রী এবং প্রতিবন্ধী পুত্র ফাদিল স্থানীয় আব্দুল করিম একাডেমিতে নার্সারির ছাত্র ছিল।

বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউন থাকা অবস্থায় একই পরিবারের মা, দুই মেয়ে ও প্রতিবন্ধী পুত্রসহ মোট ৪ জন’কেই নির্মমভাবে হত্যাকান্ড ধর্ষনের ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনাটি মিডিয়াতে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখ দুপুর ০১০০ ঘটিকা হতে ২৯ এপ্রিল সকাল ০৮০০ ঘটিকা পর্যন্ত গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-১ আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে (১) মোঃ কাজিম উদ্দিন (৫০), পিতাঃ মৃত আরছোপ আলী, গ্রামঃ আবদার, থানাঃ শ্রীপুর, জেলাঃ গাজীপুর; (২) মোঃ হানিফ (৩২), পিতাঃ মৃত আঃ খালেক, গ্রামঃ গাবি, থানাঃ ধর্মপাশা, জেলাঃ সুনামগঞ্জ; (৩) মোঃ বশির (২৬), পিতাঃ মৃত আলাল উদ্দিন, গ্রামঃ আবদার, থানাঃ শ্রীপুর, জেলাঃ গাজীপুর; (৪) মোঃ হেলাল (৩০), পিতাঃ মৃত হবি উদ্দিন, গ্রামঃ ফকিরপাড়া (আউয়াল নগর), থানাঃ ত্রিশাল, জেলাঃ ময়মনসিংহ এবং (৫) মোঃ এলাহি মিয়া (৩৫), পিতাঃ মোঃ আজিদ উল্লাহ, গ্রামঃ কাঠালবাড়ী, থানাঃ দোয়ারা বাজার, জেলাঃ সুনামগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিমের বাড়ী থেকে লুটকৃত মালামাল ও আসামীদের পরিধেয় বস্ত্র (রক্তমাখা) যথাক্রমে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ০১টি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, ০১টি জিন্স প্যান্ট, ০৩টি লুঙ্গি এবং ০১টি আংটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার স্বীকার করে।

গ্রেফতাকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা সবাই মাদক সেবী। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মোঃ কাজিম উদ্দিন (৫০) পেশায় রিকশা চালক; মোঃ হানিফ (৩২) পেশায় শ্রমিক; মোঃ বশির (২৬) পেশায় অটো রিকশা চালক; মোঃ হেলাল (৩০) পেশায় ভাঙ্গারী বিক্রেতা এবং মোঃ এলাহি মিয়া (৩৫) পেশায় শ্রমিক। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধের সাথে জড়িত। সকলেই জুয়াড়ী এবং ভিকটিমের বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মাদক সেবন ও আড্ডা দিত। এছাড়া ভিকটিমদের তারা নানাভাবে হয়রানী করত। গ্রেফতারকৃত কাজিমের ছেলে পারভেজ আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ীর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকত্রী কর্তৃক ধৃত হয়েছিল। সে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামী বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত ও তাদের অন্যান্য সঙ্গী সাথিরা উক্ত বাড়ীর সামনে কেরামবোর্ড খেলার নামে ভিকটিমদের ইভটিজিংও করত।

গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার কয়েকদিন আগে জানতে পারে যে, কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০/২২ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে এমনি একটি ধারনার বশবর্তী হয়ে ঘটনার ৫/৭ দিন আগে গ্রেফতারকৃত কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়ে কাজলের বাড়ীতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। অতঃপর অন্য আসামী বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে। এদের দলে কাজিম এর ছেলে পারভেজও অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে জানায়। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, তাদের আয়ের মাধ্যমে নেশা ও জুয়ার টাকা সংকুলান হচ্ছিল না বিধায় তারা এ অপরাধ সংগঠনে যুক্ত হয়।

গ্রেফতারকৃতরা পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখ আনুমানিক ০০.৩০ ঘটিকায় উক্ত বাড়ীর পিছনের এলাকায় জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ীর পিছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পিছনের গেট দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে।

গ্রেফতাকৃতরা জানায়, কাজিম এবং হেলাল সহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমা’কে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানায়। অতঃপর ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া টাকা (৩০ হাজার) বের করে দেয়। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বর্ণালংকারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামী বশির, হানিফ ও এলাহি সহ আরও একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া আসামী বশির সহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিন’কে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। আসামী পারভেজও বর্ণিত হত্যাকান্ড ও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করে। ধৃত আসামীরা তাদের আরও কয়েকজন সক্রিয় সহযোগির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলাকেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। তবে, সর্বশেষে প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকে হত্যা করা নিয়ে আসামীদের ভিতর দ্বীধা-দ্বন্ধ ও সংশয় তৈরী হয়। কিন্তু কোন প্রকার স্বাক্ষী যেন না থাকে সে জন্য প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিল’কেও হত্যা করা হয়। লুন্ঠনকৃত মালামাল ও টাকা কাজিম নিয়ে নেয় এবং সুবিধাজনক সময়ে পরস্পরকে বন্টন করবে বলে বাকীদের জানায়।

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

error: Content is protected !!