মতলবে তিন শিশুর মৃত্যু নিয়ে বাঁধছে রহস্যের জাল ॥ জানাযা সম্পন্ন

  • আপডেট: ০৪:৪২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯
  • ৩১
লাশের অধিকতর পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা ও চট্রগামে নমুনা প্রেরণ

মতলব প্রতিনিধি:

মতলব পৌরসভার পূর্ব কলাদী জামে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে উদ্বার হওয়া তিন শিশুর মৃত্যু নিয়ে বেঁধেছে রহস্যের জাল। স্থানীয়দের মতে তাদেরকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠেছে। এদিকে ওই তিন শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিতে কালক্ষেপণ করার অভিযোগে কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলমকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত রিফাত ঘটনার দিন সকালে মসজিদে এসে অবস্থান করে। তারপর সে গোসল ও ওযু করে জুম’আর নামাজের আযান দেয়। অরপদিকে মসজিদের ইমাম তার ছেলেকে ও নিজে গোসল করে নামাজের যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তখন ইমাম তার ছেলে ও রিফাতকে কক্ষে দেখে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং সমজিদে থাকা মুসল্লি কাশেম সরকারকে মাইকের ব্যাটারীর সংযোগ দিতে বলেন। কিন্তু কাশেম কিভাবে ব্যাটারীর লাইন দিতে হয় জানেন না বলে জানালে, ইমাম সাহেব রিফাতকে ডাক দিয়ে মাইকের সংযোগ দিতে বলেন। আর এই সময় থেকে ইমাম জুম’আর নামাজ ও মিলাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মসজিদের ভিতরে ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদে মুয়াজ্জিন না থাকায় ইমাম সাহেব উপজেলার দাসের বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শামীমের মাধ্যমে রিফাতকে মুয়াজ্জিনের কাজের জন্য নিয়ে আসেন। এই বিষয়ে মসজিদ কমিটির সহ সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক দেওয়ানের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ আমাদের মসজিদে মুয়াজ্জিন প্রয়োজন বলে ইমাম সাহেব বলেন। গতকাল (শুক্রবার) রিফাত যে জুম’আর নামাজের আযান দিয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে কমিটি ও মুসল্লীদের কথা ছিলো,‘মুয়াজ্জিন নিয়োগ করা হবে এমন একজনকে যিনি ইমামের অনুপস্থিতিতে নামাজও পড়াতে পারেন।’

ইমাম জামাল উদ্দিন বলেন, মাওলানা শামীমের মাধ্যমে রিফাত এই মসজিদে আসে এবং জুম’আর নামাজের আযানও দেয়। তারপর তাকে ও আমার ছেলেকে আমার কক্ষে দেখে মসজিদে প্রবেশ করি। কিন্তু ওই ছেলে (ইব্রাহিম) কী করে আমার রুমে প্রবেশ করেছে তা আমার জানা নেই।

জামাল উদ্দিন আরো বলেন, আমি যে কক্ষে ছিলাম সেখানে কোন ব্যাটারীর পানি নেই। আমি জগে কল থেকে পানি এনে নিজে খাই এবং বাকি অর্ধেকের বেশি পানি জগ ভর্তি ছিল। এছাড়া ওই দুই শিশুর সাথে আমার ছেলের যোগাযোগ ছিল বলে যে তথ্য বের হয়েছে তা ভুল। আমি দুই মাস আগে এই মসজিদে নিয়োগ পাই, এর আগে চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া এলাকায় পীরবাদশা শাহী মসজিদে দশ বছর ইমামতী করেছি।

এদিকে আরো জানা যায়, রিফাত ও ইব্রাহিম যে মাদ্রাসায়া পড়ালেখা করতো সেখান থেকে ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রিফাত বাড়িতে চলে যায় এবং ইব্রাহিম সকালে বাড়িতে যাবে বলে ছুটি নেয় বলে জানান মাদ্রাসর পরিচালক মাওলানা আফছার উদ্দিন। কিন্তু ওই মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত রিফাত মাদ্রাসার পরিচালকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের সংসারের সন্তান এবং ইব্রাহিম ওই মাদ্রাসায় দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অবস্থান করেছিল।

থানা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে, তবে মৃতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। আজ (শুক্রবার) রাতেই ঢাকা থেকে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ক্রামইসিন এনালাইসিস দল ও পিবিআই প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শ করে নমুনা নিয়ে গেছেন। লাশগুলোর ময়নাতদন্তের পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে রহস্যের জট খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

থানার ওসি স্বপন কুমার আইচ বলেন, ময়নাদতন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্থান্তর করা হয়েছে। এদিকে ময়নাতদন্তের লাশ পাঠানো গাফিলতির জন্য এক কনস্টেবলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন।সেই অনুযায়ী তদন্তকাজ চলছে।
ময়নাতদন্তের বিষয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুজাদ্দৌলা রুবেল বলেন, আমি লাশের জন্য সকাল ৯টা থেকেই অপেক্ষা করি। কিন্তু লাশ এসে পৌঁছায় পৌনে ১১টায়।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না, মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা ও চট্রগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ভাঙ্গারপাড় বালুর মাঠে সবস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে রিফাত ও ইব্রাহিমের নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং রিফাতের দ্বিতীয় নামাজের জানাযা নিজ বাড়ি উত্তর নলুয়া গোরস্থান জামে মসজিদে এবং ইব্রাহিমের দ্বিতীয় নামাজের জানাযা তার নিজ বাড়ি উপজেলার নাটশাল পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আব্দুল্লাহ আল নোমানের লাশ তার পৈত্রিক বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার কালাই মুদাফাত গ্রামে দাফন করা হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

মতলবে তিন শিশুর মৃত্যু নিয়ে বাঁধছে রহস্যের জাল ॥ জানাযা সম্পন্ন

আপডেট: ০৪:৪২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯
লাশের অধিকতর পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা ও চট্রগামে নমুনা প্রেরণ

মতলব প্রতিনিধি:

মতলব পৌরসভার পূর্ব কলাদী জামে মসজিদের ইমামের কক্ষ থেকে উদ্বার হওয়া তিন শিশুর মৃত্যু নিয়ে বেঁধেছে রহস্যের জাল। স্থানীয়দের মতে তাদেরকে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠেছে। এদিকে ওই তিন শিশুর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিতে কালক্ষেপণ করার অভিযোগে কনস্টেবল জাহাঙ্গীর আলমকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত রিফাত ঘটনার দিন সকালে মসজিদে এসে অবস্থান করে। তারপর সে গোসল ও ওযু করে জুম’আর নামাজের আযান দেয়। অরপদিকে মসজিদের ইমাম তার ছেলেকে ও নিজে গোসল করে নামাজের যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তখন ইমাম তার ছেলে ও রিফাতকে কক্ষে দেখে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং সমজিদে থাকা মুসল্লি কাশেম সরকারকে মাইকের ব্যাটারীর সংযোগ দিতে বলেন। কিন্তু কাশেম কিভাবে ব্যাটারীর লাইন দিতে হয় জানেন না বলে জানালে, ইমাম সাহেব রিফাতকে ডাক দিয়ে মাইকের সংযোগ দিতে বলেন। আর এই সময় থেকে ইমাম জুম’আর নামাজ ও মিলাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মসজিদের ভিতরে ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদে মুয়াজ্জিন না থাকায় ইমাম সাহেব উপজেলার দাসের বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শামীমের মাধ্যমে রিফাতকে মুয়াজ্জিনের কাজের জন্য নিয়ে আসেন। এই বিষয়ে মসজিদ কমিটির সহ সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক দেওয়ানের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ আমাদের মসজিদে মুয়াজ্জিন প্রয়োজন বলে ইমাম সাহেব বলেন। গতকাল (শুক্রবার) রিফাত যে জুম’আর নামাজের আযান দিয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে কমিটি ও মুসল্লীদের কথা ছিলো,‘মুয়াজ্জিন নিয়োগ করা হবে এমন একজনকে যিনি ইমামের অনুপস্থিতিতে নামাজও পড়াতে পারেন।’

ইমাম জামাল উদ্দিন বলেন, মাওলানা শামীমের মাধ্যমে রিফাত এই মসজিদে আসে এবং জুম’আর নামাজের আযানও দেয়। তারপর তাকে ও আমার ছেলেকে আমার কক্ষে দেখে মসজিদে প্রবেশ করি। কিন্তু ওই ছেলে (ইব্রাহিম) কী করে আমার রুমে প্রবেশ করেছে তা আমার জানা নেই।

জামাল উদ্দিন আরো বলেন, আমি যে কক্ষে ছিলাম সেখানে কোন ব্যাটারীর পানি নেই। আমি জগে কল থেকে পানি এনে নিজে খাই এবং বাকি অর্ধেকের বেশি পানি জগ ভর্তি ছিল। এছাড়া ওই দুই শিশুর সাথে আমার ছেলের যোগাযোগ ছিল বলে যে তথ্য বের হয়েছে তা ভুল। আমি দুই মাস আগে এই মসজিদে নিয়োগ পাই, এর আগে চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া এলাকায় পীরবাদশা শাহী মসজিদে দশ বছর ইমামতী করেছি।

এদিকে আরো জানা যায়, রিফাত ও ইব্রাহিম যে মাদ্রাসায়া পড়ালেখা করতো সেখান থেকে ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রিফাত বাড়িতে চলে যায় এবং ইব্রাহিম সকালে বাড়িতে যাবে বলে ছুটি নেয় বলে জানান মাদ্রাসর পরিচালক মাওলানা আফছার উদ্দিন। কিন্তু ওই মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত রিফাত মাদ্রাসার পরিচালকের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের সংসারের সন্তান এবং ইব্রাহিম ওই মাদ্রাসায় দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অবস্থান করেছিল।

থানা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে, তবে মৃতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কোন মামলা দায়ের করা হয়নি। আজ (শুক্রবার) রাতেই ঢাকা থেকে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ক্রামইসিন এনালাইসিস দল ও পিবিআই প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শ করে নমুনা নিয়ে গেছেন। লাশগুলোর ময়নাতদন্তের পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে রহস্যের জট খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

থানার ওসি স্বপন কুমার আইচ বলেন, ময়নাদতন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্থান্তর করা হয়েছে। এদিকে ময়নাতদন্তের লাশ পাঠানো গাফিলতির জন্য এক কনস্টেবলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন।সেই অনুযায়ী তদন্তকাজ চলছে।
ময়নাতদন্তের বিষয়ে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুজাদ্দৌলা রুবেল বলেন, আমি লাশের জন্য সকাল ৯টা থেকেই অপেক্ষা করি। কিন্তু লাশ এসে পৌঁছায় পৌনে ১১টায়।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না, মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা ও চট্রগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ভাঙ্গারপাড় বালুর মাঠে সবস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে রিফাত ও ইব্রাহিমের নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং রিফাতের দ্বিতীয় নামাজের জানাযা নিজ বাড়ি উত্তর নলুয়া গোরস্থান জামে মসজিদে এবং ইব্রাহিমের দ্বিতীয় নামাজের জানাযা তার নিজ বাড়ি উপজেলার নাটশাল পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আব্দুল্লাহ আল নোমানের লাশ তার পৈত্রিক বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার কালাই মুদাফাত গ্রামে দাফন করা হবে।