দক্ষিণের ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের মাছ ঘাট, তার পরেও কমছেনা দাম

  • আপডেট: ০৯:৪৯:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩
  • ৪৬

ছবি-নতুনেরকথা।

মহিউদ্দিন আল আজাদ: বরিশাল, ভোলা, মনপুরা, নোয়াখালি ও হাতিয়া থেকে ট্রলার ও ট্রাকে ভরে প্রচুর ইলিশ আসছে দেশের বৃহত্তর মাছের ব্যবসায়ীকপ্রাণ কেন্দ্র চাঁদপুরে। তার পরেও কমছেনা ইলিশ মাছের দাম।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার মোহনায় জেলেদের জালে ইলিশের তেমন দেখা না মিললেও সাগরের মোহনায় কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন আকারের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে প্রচুর ইলিশ আসছে চাঁদপুরের মৎস্য আড়ৎগুলোতে। ইলিশ আসায় মাছঘাটে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে।

সরেজমিনে শনিবার দুপরে মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ক্রেতা আর বিক্রেতার হাঁক-ডাকে উৎসবমূখর। কিছুক্ষণ পরপর ট্রাকে ও ট্রলারে করে ঘাটে মাছ আসছে। আড়তে তোলার পর মাছগুলো বিভিন্ন আড়তের মালিকরা নিলাম তুলছে। আড়তদারেরা ছোট, বড় ও তাজা মাছ আলাদা করে স্তূপ করার পর ডাক তুলছেন। এ সময় স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের মাছ বিক্রেতা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইলিশ মাছ সরবরাহকারীরা নিলামে অংশ নিয়ে ইলিশ কিনছেন।

বর্তমানে বাজারে সাগরের মোহনার ছোট ইলিশ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মন দরে কেনাবেচা চলছে। আর চাঁদপুরের তাজা ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় ইলিশের প্রতি মন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

আড়তদার মিজানুর রহমান কালু বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে ইলিশের তেমন দেখা না মিললেও গত তিন-চার দিন ধরে নোয়াখালী, ভোলা ও বরিশাল থেকে ট্রলার ও ট্রাকে করে ইলিশ আসছে। মৌসুম অনুপাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকেরও কম ইলিশ এসেছে। যার অধিকাংশই আকারে ছোট। তবে চাঁদপুর অঞ্চলের জেলেদের জালে কিছু বড় ইলিশ ধরা পড়েছে। বড় ইলিশের দামও একটু বেশি। এরপরও এসব ইলিশ পেয়ে স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতারা খুশি।

মাছঘাটের ইলিশ মাছ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, চাঁদপুরের মাছঘাটে অধিকাংশ ক্রেতারা চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার তাজা ইলিশ কিনতে আসেন। কিন্তু সেভাবে তাজা ইলিশের সরবরাহ নেই। এখন অধিকাংশ ইলিশই সাগর মোহনার। আকারেও ছোট। চাঁদপুরের তাজা বড় ইলিশের দাম অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে সাগরের মোহনার ছোট ইলিশ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মন দরে কেনাবেচা চলছে। আর চাঁদপুরের তাজা ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি সাইজের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা এবং এর বড়গুলো সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রয় করা হয়।

হাজীগঞ্জ থেকে পদ্মার তাজা ইলিশ কিনতে এসেছেন জহিরুল ইসলাম লিটন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সব সময় চাঁদপুরের লোকাল ইলিশ মাছই কিনি। কিন্তু এবার ইলিশের অনেক দাম। তারপরও দেড় কেজি ওজনের ৫টি এবং এক কেজির তিনটি ইলিশসহ কিছু ৭শ-৮শ গ্রামের ওজনের কিছু ইলিশ মাছ কিনেছি। তবে অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে মাছের দাম বেশি হলেও মাছ তাজা পেয়েছি।’

চাঁদপুর মৎস্য ও বনিক সমবায় সমিতি লি. এর সাধারন সম্পাদক হাজী মো. সবে বরাত সরকার জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টি হওয়ার কারণে জেলেরা আগের চাইতে ইলিশ কিছুটা বেশি পাচ্ছেন। বুধবার ঘাটে ইলিশ আমদানি হয়েছে ১৫০ মণ। আজকে আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০০মণ। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ গতকাল আমদানি হয়েছে ১৫মণ। আজকে আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০মণ। আশা করছি নদীতে পানি ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ইলিশের আমদানি আরো বাড়বে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারি মানিক জমাদার জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে চাঁদপুরের কোন ইলিশের আমদানি ছিল। আড়তদার এক প্রকার বসে বসে সময় কাটিয়েছে। এতে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। যদিও পরিমাণে অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। মৌসুমের এখনো দুই মাস বাকি আছে। সামনের দিনগুলোতে তাঁরা ভালো ইলিশ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। ভালো ইলিশ এলে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে এবার চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ একে বারেই কম। এগুলোকে বলা হয় লোক ইলিশ। বিভিন্ন জেলা থেকে পদ্মার ইলিশ কিনতে ক্রেতা আছে। কিন্তু পদ্মা-মেঘনার ইলিশ না পেয়ে তারা দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ কিনে নেয়।
এ ব্যবসায়ী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশও যদি তাজা থাকে তবে পদ্মা-মেঘনার মতোই সুস্বাদু হয়।

চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, গত ১০ দিন আগেও ইলিশের সরবরাহ খুবই কম ছিল। দামও ছিল চড়া। গত দুইদিন ইলিশের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে দামও কমেছে। আমরা মাছঘাটের ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বৃষ্টি ও নদীতে পানির স্রোত বৃদ্ধি হওয়ার কারণে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

‘ম্যানেজ করে’ এক সাথে দুই স্বামীর সংসার করছিলেন জান্নাতুল!

দক্ষিণের ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের মাছ ঘাট, তার পরেও কমছেনা দাম

আপডেট: ০৯:৪৯:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩

মহিউদ্দিন আল আজাদ: বরিশাল, ভোলা, মনপুরা, নোয়াখালি ও হাতিয়া থেকে ট্রলার ও ট্রাকে ভরে প্রচুর ইলিশ আসছে দেশের বৃহত্তর মাছের ব্যবসায়ীকপ্রাণ কেন্দ্র চাঁদপুরে। তার পরেও কমছেনা ইলিশ মাছের দাম।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার মোহনায় জেলেদের জালে ইলিশের তেমন দেখা না মিললেও সাগরের মোহনায় কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন আকারের প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ফলে প্রচুর ইলিশ আসছে চাঁদপুরের মৎস্য আড়ৎগুলোতে। ইলিশ আসায় মাছঘাটে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে।

সরেজমিনে শনিবার দুপরে মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে ক্রেতা আর বিক্রেতার হাঁক-ডাকে উৎসবমূখর। কিছুক্ষণ পরপর ট্রাকে ও ট্রলারে করে ঘাটে মাছ আসছে। আড়তে তোলার পর মাছগুলো বিভিন্ন আড়তের মালিকরা নিলাম তুলছে। আড়তদারেরা ছোট, বড় ও তাজা মাছ আলাদা করে স্তূপ করার পর ডাক তুলছেন। এ সময় স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের মাছ বিক্রেতা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইলিশ মাছ সরবরাহকারীরা নিলামে অংশ নিয়ে ইলিশ কিনছেন।

বর্তমানে বাজারে সাগরের মোহনার ছোট ইলিশ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মন দরে কেনাবেচা চলছে। আর চাঁদপুরের তাজা ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় ইলিশের প্রতি মন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

আড়তদার মিজানুর রহমান কালু বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে ইলিশের তেমন দেখা না মিললেও গত তিন-চার দিন ধরে নোয়াখালী, ভোলা ও বরিশাল থেকে ট্রলার ও ট্রাকে করে ইলিশ আসছে। মৌসুম অনুপাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকেরও কম ইলিশ এসেছে। যার অধিকাংশই আকারে ছোট। তবে চাঁদপুর অঞ্চলের জেলেদের জালে কিছু বড় ইলিশ ধরা পড়েছে। বড় ইলিশের দামও একটু বেশি। এরপরও এসব ইলিশ পেয়ে স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতারা খুশি।

মাছঘাটের ইলিশ মাছ বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, চাঁদপুরের মাছঘাটে অধিকাংশ ক্রেতারা চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার তাজা ইলিশ কিনতে আসেন। কিন্তু সেভাবে তাজা ইলিশের সরবরাহ নেই। এখন অধিকাংশ ইলিশই সাগর মোহনার। আকারেও ছোট। চাঁদপুরের তাজা বড় ইলিশের দাম অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে সাগরের মোহনার ছোট ইলিশ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মন দরে কেনাবেচা চলছে। আর চাঁদপুরের তাজা ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি সাইজের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা এবং এর বড়গুলো সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার পর্যন্ত প্রতি কেজি বিক্রয় করা হয়।

হাজীগঞ্জ থেকে পদ্মার তাজা ইলিশ কিনতে এসেছেন জহিরুল ইসলাম লিটন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সব সময় চাঁদপুরের লোকাল ইলিশ মাছই কিনি। কিন্তু এবার ইলিশের অনেক দাম। তারপরও দেড় কেজি ওজনের ৫টি এবং এক কেজির তিনটি ইলিশসহ কিছু ৭শ-৮শ গ্রামের ওজনের কিছু ইলিশ মাছ কিনেছি। তবে অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে মাছের দাম বেশি হলেও মাছ তাজা পেয়েছি।’

চাঁদপুর মৎস্য ও বনিক সমবায় সমিতি লি. এর সাধারন সম্পাদক হাজী মো. সবে বরাত সরকার জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টি হওয়ার কারণে জেলেরা আগের চাইতে ইলিশ কিছুটা বেশি পাচ্ছেন। বুধবার ঘাটে ইলিশ আমদানি হয়েছে ১৫০ মণ। আজকে আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০০মণ। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ গতকাল আমদানি হয়েছে ১৫মণ। আজকে আমদানি হয়েছে প্রায় ৩০মণ। আশা করছি নদীতে পানি ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ইলিশের আমদানি আরো বাড়বে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারি মানিক জমাদার জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে চাঁদপুরের কোন ইলিশের আমদানি ছিল। আড়তদার এক প্রকার বসে বসে সময় কাটিয়েছে। এতে তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে কয়েক দিন ধরে ইলিশ আসতে শুরু করেছে। যদিও পরিমাণে অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। মৌসুমের এখনো দুই মাস বাকি আছে। সামনের দিনগুলোতে তাঁরা ভালো ইলিশ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। ভালো ইলিশ এলে ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে এবার চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ একে বারেই কম। এগুলোকে বলা হয় লোক ইলিশ। বিভিন্ন জেলা থেকে পদ্মার ইলিশ কিনতে ক্রেতা আছে। কিন্তু পদ্মা-মেঘনার ইলিশ না পেয়ে তারা দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ কিনে নেয়।
এ ব্যবসায়ী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশও যদি তাজা থাকে তবে পদ্মা-মেঘনার মতোই সুস্বাদু হয়।

চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, গত ১০ দিন আগেও ইলিশের সরবরাহ খুবই কম ছিল। দামও ছিল চড়া। গত দুইদিন ইলিশের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে দামও কমেছে। আমরা মাছঘাটের ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বৃষ্টি ও নদীতে পানির স্রোত বৃদ্ধি হওয়ার কারণে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করছে।