হাইমচর চরভাঙ্গায় বিল্লাল বেপারীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দুদের জমি হারানোর আশঙ্কা!

  • আপডেট: ০৬:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২
  • ৪০
স্টাফ রিপোর্টারঃ চাঁদপুরে হাইমচরের আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরভাঙ্গা গ্রামে জনৈক বিল্লাল বেপারী নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি হারানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধশত পরিবার। আর এই ষড়যন্ত্রের মাষ্টার মাইন্ড স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার। অতচ তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে চরম হিন্দু সম্প্রদায় বিদ্বেষী বিল্লাল বেপারীকে তুরুপের তাশ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

নীবির অনুসন্ধানে উঠে আসে এসব ভয়াবহ তথ্য। গেলো ১১ ফেব্রুয়ারী হাইমচরে সরকারি প্রকল্পের খাল খননে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহে বাঁধা দেয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা এমন অভিযোগ আনেন বিল্লাল বেপারী গং। আর ওই অভিযোগে ৪ হাজার একর কৃষিজমিতে পানির জন্য ফসল আবাদ করতে না পেরে খালটি পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেও অভিযোগ আনা হয়। যা ছিলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অসহায় হিন্দুদের জমি দখলের অপচেষ্টার নীল নকশা অংশ মাত্র।

সরজমিনে চরভাঙ্গা গ্রামের ঘটনাস্থলের জমি ঘুরে দেখা যায়, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাজন, মল্লিক ও বংশি এই ৩টি বাড়ী মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত হিন্দু পরিবার ওই গ্রামে বসবাস করছে। যারা নিজেদের জমিতে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের তেমন লেখাপড়া ও জমির মাফঝোঁক সম্পর্কে খুব ভালো অভিজ্ঞতা নেই। প্রায় ৩ বছর আগে এই জমি দখলের নীল নকশা শুরু করেন অভিযুক্ত বিল্লাল বেপারী। তিনি তার দূরের জমিতে পানি সেচ দিতে নালা করে পানি নিতে হবে বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের জানায়। কিন্তু আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির উপর দিয়ে ছোট পরিসরে ১টি নালা কেটে ফেলেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিল্লাল বেপারী এবার পুরো জমি দখলের স্বপ্ন দেখেন। আর বিল্লাল বেপারীর এ কাজে সায় দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাষ্টার। তারা দুজনে মিলে জমি দখলের নীল নকশায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েক’শ সাধারণ কৃষককে জমি প্রাঙ্গণে এনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গেলো কিছুদিন পূর্বে ব্যাক্তি প্রভাব কাজে লাগিয়ে মাস্টার মাইন্ড জলিল মাষ্টারের দিক-নির্দেশনায় বিল্লাল বেপারী হিন্দুদের পুরো জমির ওপর দিয়ে বিশালভাবে রাতের আঁধারে খাল খনন শুরু করেন। আর পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে নিজ দখলিয় জমির ওপর দিয়ে এই অন্যায় যেন হিন্দুদের চোখের সামনে হতে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও ভয়ে কিছুই যেন তারা করতে পারছিলেন না। আর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে বিল্লাল বেপারী রাতের আধারে কয়েক’শ শ্রমিক নিয়ে সরকারি প্রকল্পে খাল করা হচ্ছে এমন হিউমার ছড়িয়ে অসহায় হিন্দুদের প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ওপর দিয়ে নালাটি কেটে খালে পরিণত করেন। আর ঐ কাজটি করার সময় হিন্দুদের বেশ কয়েকজনের ওপর তখন বিল্লাল বেপারীর ভাষ্য ছিলো ‘তোগো হিন্দুদের যে এই খাল খননে বাঁধা দিতে আসবি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবো’। ‘আম কাঠ পাশে রাখছি, তোদেরকে এখানেই জ্বালিয়ে দিয়ে পুঁতে ফেলবো’।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে প্রশাসন ও সুধীমহল যেন সংখ্যালঘু হিসেবে হিন্দুদের ওপর এমন অত্যাচার ঠেকাতে পাশে দাঁড়াতে না আসে। সেই কুট কৌশলময় খেলা খেলে দিলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাষ্টার।

তিনি তার ব্যক্তি প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পাশের গ্রামের কয়েক’শ লোককে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে সামনে না এসে একটি সাজানো গোছানো ব্যাণার দিয়ে ‘হাইমচরে সরকারি প্রকল্পের খাল খননে বাঁধা’ উল্লেখ করে মানববন্ধন করিয়েছেন। উদ্দ্যেশ্যে, তিনি পাশের গ্রামের কৃষকদের সমর্থন পেলেন এবং হিন্দুদের জমি দখলের মূল নীল নকশা আড়াল করতে অনেকটা সফল হলেন। যেখানে আধুনিক যুগে কয়েকটি সেচ পাম্প দিয়েই পানি পাওয়ার সমস্যা সমাধান করা যায়। সেখানে তিনি সেটি না করে হঠাৎ করেই ইরি বোরো ধান করতে সেচ সুবিধা দিচ্ছেন ও পাশের গ্রামের মানুষকে পানি বন্ধি থেকে বাঁচাতে এমনটি করেছেন জানান দিয়ে মানবতার ফেরিয়ালা সাঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দুদের এই জমি দখলের পায়তার আব্দুল জলিল মাষ্টারের পূর্ব পরিকল্পিত। আর তাই সব বাদ দিয়ে তিনি এই জমিগুলো বেছে নিয়ে পূর্বে নির্বাচিত থাকাকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের জমির রাস্তার পাশে ১টি ছোট কালভার্ট নির্মাণ করেন। আর সেটাই এখন দাবা ঘোড়ার আড়াই চাল হিসেবে মানুষের সামনে তিনি তুলে ধরতে চাচ্ছেন।

৩ মার্চ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সেই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাষ্টারের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে এ বিষয়ে কিছু না বললেও অফ ক্যামেরায় বলেন, আমি নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকাকালীন বিল্লাল বেপারী নিজ উদ্যোগে কৃষকদের নিয়ে হিন্দুদের জমিতে ওই কাজটি করে ফেলেছেন। হিন্দুদের সাথে কোন রকম আলোচনা না করে এই কাজটি করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কি ভূমিকা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে আব্দুল জলিল মাষ্টার সাংবাদিকদের বলেন, পাশের গ্রামের কৃষকদের সুবিধার্থে এটি করা হয়েছে। এটা না হলে পাশের গ্রামের মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পরবে। সব বিষয়ে আলোচনার কি আছে? অমানবিক কিছু হলে প্রয়োজনে হিন্দুদের এ বিষয়টি নিয়ে কোর্টে যাবো, দেখবো কে কি করতে পারে।

অতচ এই আব্দুল জলিল মাষ্টারকে রক্ষকের ভূমিকায় পেতে হিন্দুদের যেন চোখভরা জল ছাড়া এখন আর কিছুই নেই।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাকলী রানী, ববিতা মজুমদার, মনি মজুমদার, পিন্টু মহাজন, আলো রানী, তাপস মজুমদারসহ আরো অনেকে বলেন, বিল্লাল বেপারী এখানকার স্থানীয় নয়। তিনি থাকেন গন্ডামারায়। প্রায়ই তিনি চরভাঙ্গায় আসেন এবং আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়কে গালমন্দ করেন। তিনি দলবল নিয়ে আমাদের জমির ওপর দিয়ে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নালা কাটার কথা বলে খাল কেটে ফেলেছেন। এতে আমাদের কৃষি জমি পুরো নষ্ট করেছেন এবং পাশের গ্রামের লোকজন এনে উল্টো আমাদেরকে প্রতিপক্ষ করে ফাঁসাতে মানববন্ধনের নাটক সাজিয়ে নিজেকে আড়াল করছেন। আমরা আমাদের জমিতে খাল দেখতে চাই না। আমরা দ্রুত আমাদের জমিতে করা খাল ভরাট করে দিতে প্রশাসনসহ সুধীমহলের সহযোগিতা এবং বিল্লাল বেপারী ও জড়িতদের শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে বিল্লাল বেপারী মুঠোফোনে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। এটা কে করেছে আমি জানিও না। তবে খাল করাটা কৃষকদের জন্য জরুরী ছিলো।

কারো জমি না বলে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা কি আইনসম্মত কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারি প্রকল্পের খাল। তাই কাউকে জিগ্গেস করার প্রয়োজন মনে করিনি। বিষয়টি চেয়ারম্যানের নলেজে দিয়েই এ খালটি করা হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর তদন্ত সাপেক্ষে সুবিচার পেতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি হাইমচর থানাতেও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইমচর থানার ওসি মাহবুব মোল্লা জানান, ইউএনও অফিসে তাদের দেয়া অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি এবং এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সকল বিষয় পর্যালোচনা করে আমাদের তদন্তাধীন রয়েছে।

এদিকে এটি সরকারি প্রকল্পের খাল পুনঃখনন কাজ কিনা? জানতে চাইলে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি আমি অবগত আছি এবং কিছুদিন আগেই সরজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানে নতুন করে খাল পুনঃখননে কোন সরকারি প্রকল্পই দেয়া হয়নি। জমির মাঝখান দিয়ে অনেকটা গভীর করে মাটি কাটায় জমির দু’পাশ ভেঙ্গে পড়ছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও প্রশস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিল্লাল বেপারী এমন কাজ কেন করলো? তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। কেননা সরকারি প্রকল্প হলে তা করার জন্য অবশ্যই আমাদের লোক থাকবে। আইনত কোন ব্যক্তি বিশেষ কোনভাবেই অন্যের জমির ওপর না বলে এভাবে খাল কাটতে পারেনা। এসময় ন্যায় প্রতিষ্ঠায় হাইমচর উপজেলা প্রশাসন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

‘ম্যানেজ করে’ এক সাথে দুই স্বামীর সংসার করছিলেন জান্নাতুল!

হাইমচর চরভাঙ্গায় বিল্লাল বেপারীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দুদের জমি হারানোর আশঙ্কা!

আপডেট: ০৬:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০২২
স্টাফ রিপোর্টারঃ চাঁদপুরে হাইমচরের আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চরভাঙ্গা গ্রামে জনৈক বিল্লাল বেপারী নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ জমি হারানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধশত পরিবার। আর এই ষড়যন্ত্রের মাষ্টার মাইন্ড স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার। অতচ তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে চরম হিন্দু সম্প্রদায় বিদ্বেষী বিল্লাল বেপারীকে তুরুপের তাশ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

নীবির অনুসন্ধানে উঠে আসে এসব ভয়াবহ তথ্য। গেলো ১১ ফেব্রুয়ারী হাইমচরে সরকারি প্রকল্পের খাল খননে বাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহে বাঁধা দেয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা এমন অভিযোগ আনেন বিল্লাল বেপারী গং। আর ওই অভিযোগে ৪ হাজার একর কৃষিজমিতে পানির জন্য ফসল আবাদ করতে না পেরে খালটি পুনরুদ্ধারে মাঠে নেমেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা বলেও অভিযোগ আনা হয়। যা ছিলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অসহায় হিন্দুদের জমি দখলের অপচেষ্টার নীল নকশা অংশ মাত্র।

সরজমিনে চরভাঙ্গা গ্রামের ঘটনাস্থলের জমি ঘুরে দেখা যায়, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাজন, মল্লিক ও বংশি এই ৩টি বাড়ী মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত হিন্দু পরিবার ওই গ্রামে বসবাস করছে। যারা নিজেদের জমিতে চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের তেমন লেখাপড়া ও জমির মাফঝোঁক সম্পর্কে খুব ভালো অভিজ্ঞতা নেই। প্রায় ৩ বছর আগে এই জমি দখলের নীল নকশা শুরু করেন অভিযুক্ত বিল্লাল বেপারী। তিনি তার দূরের জমিতে পানি সেচ দিতে নালা করে পানি নিতে হবে বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের জানায়। কিন্তু আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৯৫ শতাংশ জমির উপর দিয়ে ছোট পরিসরে ১টি নালা কেটে ফেলেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিল্লাল বেপারী এবার পুরো জমি দখলের স্বপ্ন দেখেন। আর বিল্লাল বেপারীর এ কাজে সায় দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাষ্টার। তারা দুজনে মিলে জমি দখলের নীল নকশায় পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েক’শ সাধারণ কৃষককে জমি প্রাঙ্গণে এনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গেলো কিছুদিন পূর্বে ব্যাক্তি প্রভাব কাজে লাগিয়ে মাস্টার মাইন্ড জলিল মাষ্টারের দিক-নির্দেশনায় বিল্লাল বেপারী হিন্দুদের পুরো জমির ওপর দিয়ে বিশালভাবে রাতের আঁধারে খাল খনন শুরু করেন। আর পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে নিজ দখলিয় জমির ওপর দিয়ে এই অন্যায় যেন হিন্দুদের চোখের সামনে হতে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও ভয়ে কিছুই যেন তারা করতে পারছিলেন না। আর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে বিল্লাল বেপারী রাতের আধারে কয়েক’শ শ্রমিক নিয়ে সরকারি প্রকল্পে খাল করা হচ্ছে এমন হিউমার ছড়িয়ে অসহায় হিন্দুদের প্রায় ৭০ শতাংশ জমির ওপর দিয়ে নালাটি কেটে খালে পরিণত করেন। আর ঐ কাজটি করার সময় হিন্দুদের বেশ কয়েকজনের ওপর তখন বিল্লাল বেপারীর ভাষ্য ছিলো ‘তোগো হিন্দুদের যে এই খাল খননে বাঁধা দিতে আসবি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবো’। ‘আম কাঠ পাশে রাখছি, তোদেরকে এখানেই জ্বালিয়ে দিয়ে পুঁতে ফেলবো’।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে প্রশাসন ও সুধীমহল যেন সংখ্যালঘু হিসেবে হিন্দুদের ওপর এমন অত্যাচার ঠেকাতে পাশে দাঁড়াতে না আসে। সেই কুট কৌশলময় খেলা খেলে দিলো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাষ্টার।

তিনি তার ব্যক্তি প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পাশের গ্রামের কয়েক’শ লোককে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে সামনে না এসে একটি সাজানো গোছানো ব্যাণার দিয়ে ‘হাইমচরে সরকারি প্রকল্পের খাল খননে বাঁধা’ উল্লেখ করে মানববন্ধন করিয়েছেন। উদ্দ্যেশ্যে, তিনি পাশের গ্রামের কৃষকদের সমর্থন পেলেন এবং হিন্দুদের জমি দখলের মূল নীল নকশা আড়াল করতে অনেকটা সফল হলেন। যেখানে আধুনিক যুগে কয়েকটি সেচ পাম্প দিয়েই পানি পাওয়ার সমস্যা সমাধান করা যায়। সেখানে তিনি সেটি না করে হঠাৎ করেই ইরি বোরো ধান করতে সেচ সুবিধা দিচ্ছেন ও পাশের গ্রামের মানুষকে পানি বন্ধি থেকে বাঁচাতে এমনটি করেছেন জানান দিয়ে মানবতার ফেরিয়ালা সাঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, হিন্দুদের এই জমি দখলের পায়তার আব্দুল জলিল মাষ্টারের পূর্ব পরিকল্পিত। আর তাই সব বাদ দিয়ে তিনি এই জমিগুলো বেছে নিয়ে পূর্বে নির্বাচিত থাকাকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের জমির রাস্তার পাশে ১টি ছোট কালভার্ট নির্মাণ করেন। আর সেটাই এখন দাবা ঘোড়ার আড়াই চাল হিসেবে মানুষের সামনে তিনি তুলে ধরতে চাচ্ছেন।

৩ মার্চ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সেই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাষ্টারের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে এ বিষয়ে কিছু না বললেও অফ ক্যামেরায় বলেন, আমি নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকাকালীন বিল্লাল বেপারী নিজ উদ্যোগে কৃষকদের নিয়ে হিন্দুদের জমিতে ওই কাজটি করে ফেলেছেন। হিন্দুদের সাথে কোন রকম আলোচনা না করে এই কাজটি করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কি ভূমিকা নিয়েছেন? এমন প্রশ্নে আব্দুল জলিল মাষ্টার সাংবাদিকদের বলেন, পাশের গ্রামের কৃষকদের সুবিধার্থে এটি করা হয়েছে। এটা না হলে পাশের গ্রামের মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পরবে। সব বিষয়ে আলোচনার কি আছে? অমানবিক কিছু হলে প্রয়োজনে হিন্দুদের এ বিষয়টি নিয়ে কোর্টে যাবো, দেখবো কে কি করতে পারে।

অতচ এই আব্দুল জলিল মাষ্টারকে রক্ষকের ভূমিকায় পেতে হিন্দুদের যেন চোখভরা জল ছাড়া এখন আর কিছুই নেই।

স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কাকলী রানী, ববিতা মজুমদার, মনি মজুমদার, পিন্টু মহাজন, আলো রানী, তাপস মজুমদারসহ আরো অনেকে বলেন, বিল্লাল বেপারী এখানকার স্থানীয় নয়। তিনি থাকেন গন্ডামারায়। প্রায়ই তিনি চরভাঙ্গায় আসেন এবং আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়কে গালমন্দ করেন। তিনি দলবল নিয়ে আমাদের জমির ওপর দিয়ে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নালা কাটার কথা বলে খাল কেটে ফেলেছেন। এতে আমাদের কৃষি জমি পুরো নষ্ট করেছেন এবং পাশের গ্রামের লোকজন এনে উল্টো আমাদেরকে প্রতিপক্ষ করে ফাঁসাতে মানববন্ধনের নাটক সাজিয়ে নিজেকে আড়াল করছেন। আমরা আমাদের জমিতে খাল দেখতে চাই না। আমরা দ্রুত আমাদের জমিতে করা খাল ভরাট করে দিতে প্রশাসনসহ সুধীমহলের সহযোগিতা এবং বিল্লাল বেপারী ও জড়িতদের শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে বিল্লাল বেপারী মুঠোফোনে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাইনি। এটা কে করেছে আমি জানিও না। তবে খাল করাটা কৃষকদের জন্য জরুরী ছিলো।

কারো জমি না বলে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা কি আইনসম্মত কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারি প্রকল্পের খাল। তাই কাউকে জিগ্গেস করার প্রয়োজন মনে করিনি। বিষয়টি চেয়ারম্যানের নলেজে দিয়েই এ খালটি করা হয়েছে।

এদিকে এ বিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর তদন্ত সাপেক্ষে সুবিচার পেতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি হাইমচর থানাতেও দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইমচর থানার ওসি মাহবুব মোল্লা জানান, ইউএনও অফিসে তাদের দেয়া অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি এবং এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সকল বিষয় পর্যালোচনা করে আমাদের তদন্তাধীন রয়েছে।

এদিকে এটি সরকারি প্রকল্পের খাল পুনঃখনন কাজ কিনা? জানতে চাইলে হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাই থোয়াইহলা চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি আমি অবগত আছি এবং কিছুদিন আগেই সরজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানে নতুন করে খাল পুনঃখননে কোন সরকারি প্রকল্পই দেয়া হয়নি। জমির মাঝখান দিয়ে অনেকটা গভীর করে মাটি কাটায় জমির দু’পাশ ভেঙ্গে পড়ছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও প্রশস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিল্লাল বেপারী এমন কাজ কেন করলো? তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। কেননা সরকারি প্রকল্প হলে তা করার জন্য অবশ্যই আমাদের লোক থাকবে। আইনত কোন ব্যক্তি বিশেষ কোনভাবেই অন্যের জমির ওপর না বলে এভাবে খাল কাটতে পারেনা। এসময় ন্যায় প্রতিষ্ঠায় হাইমচর উপজেলা প্রশাসন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।