ইতালিতে ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে করোনা, ২৪ ঘন্টায় নিহত ১৯৬

  • আপডেট: ০৫:১৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০
  • ২৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

চীনের পর করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে। দেশটিতে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে চীনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালি। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা চীনে কমলেও ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩১৩ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ১০ হাজার ৫৯০ জন। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৬২ জন, যা চীনের পর সর্বোচ্চ।

করোনাভাইরাসের কারণে ইতালি এক ভুতুড়ে জনপদে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। হোটেল-রেস্তোরাঁ ফাঁকা। স্টেডিয়াম খালি। কোনো পর্যটক নেই। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশটির ছয় কোটি মানুষ। থমকে গেছে গোটা ইতালি। যানবাহন আগের মতো চলাচল না করায় বেড়ে গেছে যাত্রী দুর্ভোগ।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোসেপ কন্তে জরুরি খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধের দোকান ব্যতীত সমগ্র ইতালিতে সব ধরনের দোকানপাট, বার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সফরের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কন্তে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন, তাদের সুরক্ষার জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দেশজুড়ে স্কুল, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব এবং অন্য ভেন্যু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই। পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪ প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও তা বাড়িয়ে পুরো দেশেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

সরকারের ডিক্রিতে রেড জোন দেয়া হয়েছে ইতালির কয়েকটি প্রদেশ। এর মধ্যে মোডেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো এবং উরবিনো, ভেনিস, পাডুয়া, ট্র্যাভিসো, আস্তি, আলেসান্দ্রিয়া, নোভারা, ভারবানো, কুসিও অসসোলা ও ভেরসেল্লি। এসব এলাকা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সরকার বলছে, এই রেড জোনের আইন কেউ অমান্য করলে ২০৬ ইউরো জরিমানা, অন্যথায় তিন মাসের জেল দেয়া হবে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা, মসজিদ আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় করোনাভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১১ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, গত দুই সপ্তাহে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভাইরাসের আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যে বিদেশিদের যাবতীয় ভিসা বাতিল করেছে ভারত।

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বিশেষ কারণ ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনো বিদেশি। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই বিধিনিষেধ। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনীতিক, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেইপ্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৪ দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে পৃথিবীজুড়েই। এতে বিশ্বজুড়ে নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৩ জন। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৯ জন। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে এক হাজার ৪৬৪ জন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

জাতীয়তাবাদী (বিএনপির) রিকশা, ভ্যান, অটো চালক দলের চাঁদপুর জেলা কমিটির অনুমোদন

ইতালিতে ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে করোনা, ২৪ ঘন্টায় নিহত ১৯৬

আপডেট: ০৫:১৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

চীনের পর করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইতালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে। দেশটিতে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে চীনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ইতালি। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা চীনে কমলেও ইতালিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। একদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩১৩ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ১০ হাজার ৫৯০ জন। দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৬২ জন, যা চীনের পর সর্বোচ্চ।

করোনাভাইরাসের কারণে ইতালি এক ভুতুড়ে জনপদে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় কোনো মানুষ নেই। হোটেল-রেস্তোরাঁ ফাঁকা। স্টেডিয়াম খালি। কোনো পর্যটক নেই। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশটির ছয় কোটি মানুষ। থমকে গেছে গোটা ইতালি। যানবাহন আগের মতো চলাচল না করায় বেড়ে গেছে যাত্রী দুর্ভোগ।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোসেপ কন্তে জরুরি খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধের দোকান ব্যতীত সমগ্র ইতালিতে সব ধরনের দোকানপাট, বার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছেন। ভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী কন্তে লোকজনকে বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সফরের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী কন্তে বলেন, এখন আর সময় নেই। যারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন, তাদের সুরক্ষার জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

দেশজুড়ে স্কুল, জিমনেশিয়াম, জাদুঘর, নাইটক্লাব এবং অন্য ভেন্যু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের নাগরিকদের স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই। পুরো দেশজুড়েই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে দেশটির ১৪ প্রদেশে ৮ মার্চ থেকে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করা হলেও তা বাড়িয়ে পুরো দেশেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

সরকারের ডিক্রিতে রেড জোন দেয়া হয়েছে ইতালির কয়েকটি প্রদেশ। এর মধ্যে মোডেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো এবং উরবিনো, ভেনিস, পাডুয়া, ট্র্যাভিসো, আস্তি, আলেসান্দ্রিয়া, নোভারা, ভারবানো, কুসিও অসসোলা ও ভেরসেল্লি। এসব এলাকা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সরকার বলছে, এই রেড জোনের আইন কেউ অমান্য করলে ২০৬ ইউরো জরিমানা, অন্যথায় তিন মাসের জেল দেয়া হবে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সিনেমা, মসজিদ আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় করোনাভাইরাসকে মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১১ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, গত দুই সপ্তাহে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভাইরাসের আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণা করার কিছুক্ষণের মধ্যে বিদেশিদের যাবতীয় ভিসা বাতিল করেছে ভারত।

শুক্রবার মধ্যরাত থেকে বিশেষ কারণ ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে পারবেন না কোনো বিদেশি। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এই বিধিনিষেধ। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনীতিক, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পের ভিসা এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়বে না।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেইপ্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৪ দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।

চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে পৃথিবীজুড়েই। এতে বিশ্বজুড়ে নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৩ জন। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৯ জন। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে এক হাজার ৪৬৪ জন।