শরীফুল ইসলাম:
রাতভর বাতিজ¦লা চাঁদপুরের ক্লাবগুলো এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। ক্লাবগুলোতে চলে আসা জুয়া-মাদসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কঠোর নজরদারী চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ আছে, চাঁদপুর শহর এলাকায় বেশ কয়েকটি ক্লাবে নিয়মিত বসে জুয়া ও মাদকের আসর। এর সঙ্গে জড়িত চাঁদপুরের বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রভাবশালীরা ব্যক্তিরা।
ক্যাসিনো, জুয়া, মাদক, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই এ ব্যবস্থা নিল চাঁদপুরের স্থানীয় প্রশাসন। গত শনিবার মধ্যরাতে চাঁদপুরের বাবুরহাট একাদশ ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ৯ জুয়াড়িকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, চাঁদপুর শহরের বেশ কয়েকটি ক্লাবেই সন্ধ্যার পর থেকে রাতভর বসে জমজমাট জুয়ার আসর। সঙ্গে থাকে মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যও।
জেলার চাঁদপুর ক্লাব, শহরের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, নতুন বাজার ক্রীড়াচক্র, আবাহনী স্পোর্টিং ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব, আউটার স্টেডিয়ামের সোনালী অতীত ক্লাব, পুরাণবাজারের ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাব, পূর্ব শ্রীরামদী ক্লাব, বাবুরহাট একাদশ ক্লাবে নিয়মিতই বসতো জুয়ার আসর। প্রতিরাতে ক্লাবগুলোতে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাতি জ্বলতে দেখা গেলেও গত দু’ দিন যাবৎ বাতি জ¦লা বন্ধ রয়েছে বাতিগুলোতে।
কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদপুর শহরে জুয়ার সবচে বড় আসর বসে চাঁদপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে। সেখানে জসিম নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা ভবন ভাড়া নিয়েছে। সেখানে লাখ লাখ টাকার ‘কাটাকাটি’ খেলা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ক্লাবগুলোতে নিজেরা ‘টুকটাক বাজি’ খেলেন বলে কেউ কেউ দাবি করেন।
জুয়াসহ অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধে প্রশাসনের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, এটি আরও আগেই বন্ধ করা দরকার ছিল। তিনি বলেন, চাঁদপুর ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানে জুয়া খেলা যদি হয়ে থাকে তাহলে এটি মানা যায় না। এই ক্লাবের ভেতরে অফিসারদের সাথে জেলার নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত প্রভাবশালীরাও যাচ্ছে। তিনি বলেন, এছাড়া জাতির গর্ব মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতিষ্ঠান মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনের মতো একটি জায়গায় বসে কেউ জুয়া খেলবে এটিও মেনে নেয়া যায় না। এখানে একাধিকবার পুলিশ হানা দিয়েছিল। তারপরও কিভাবে এখানে জুয়া চলে বুঝি না।
এ ব্যাপারে সনাক-চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, যেহেতু এটি অন্যায়-অনৈতিক এধরনের কাজ আগে বন্ধ করা হলো না কেন? তারপরও এখন যেহেতু এধরনের কাজ বন্ধ করা হয়েছে-এটি যেন সব সময় বন্ধ থাকে। এটি যেন লোক দেখানো না হয়। তিনি বলেন, শুধু ক্লাবভিত্তিক জুয়াই নয়, ক্রিকেট নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় ইন্টারনেট ও মোবাইলে জুয়া চলছে। এটির দিকেও গুরুত্ব সহকারে নজর দেয়া উচিত।
চাঁদপুরের নবাগত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি জানতাম না। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ক্লাবের বিষয়ে খবর পেয়েছি। এরপর থেকে এসব ক্লাবের প্রতি নজরদারি রাখছি যেন এ ধরনের কর্মকান্ড না চলতে পারে। এক্ষেত্রে যেসব নিয়ম-কানুন আছে অর্থাৎ অনুমতি আছে কি না সেটিও দেখে কাজ করছি। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকান্ডের জন্য কোন ক্লাবের অনুমতি নেই। আমরা কোথাও জুয়া বা অবৈধ কর্মকা-ের খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সকল প্রকার অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছি। এটিতো স্বাভাবিক যে, সরকারের অনুমোদন নেই এমন কোন কার্যক্রম আমরা চলতে দিতে পারি না। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর ক্লাবে অনুমতির বাইরে কোন কার্যক্রম না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু চাঁদপুর ক্লাবই নয়, এখানকার আরও কয়েকটি ক্লাবকেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুরের পুরাণবাজার ভাই ভাই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল বলেন, আমাদের ক্লাবে কোন জুয়া চলে না। আমরা ক্লাবের মাঠে ইসলামী মহাসম্মেলন করি। আমরা ফুটবল, ব্যাডমিন্টন ছাড়া কোন কিছুই করি না। টাকার জন্য আমাদের ক্লাব ঘর ভাড়া দিতে হয় না। আমাদের মেম্বাররাই চাঁদা দিয়ে ক্লাব চালায়। আমরা অনৈতিক কোন কাজের সাথে জড়িত নেই।
চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে আমার আমলে পুলিশ আসেনি। তিনি বলেন, আমি এসব বিষয় জানার পর সব বের করে দিয়েছি। রুমে ডাবল তালা দিয়েছি। এসব এখন আমাদের এখানে চলে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ, ঢাকা অফিস : ২০৫/৩ ফকিরাপুল, ঢাকা। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : নতুনেরকথা
Copyright © 2024 Notuner Kotha. All rights reserved.