অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডির হাতিরপুলে নিজ ফ্ল্যাট থেকে ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার হওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিক দুর্নীতিতে হাত পাকিয়েছেন অনেক আগেই।
চাকরি জীবনের শুরু থেকে তিনি ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তার অবৈধ আয়ের প্রধান উৎসের মধ্যে ছিল কারাগারে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, বন্দীদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অর্থ আদায়, কারাগারের উন্নয়নকাজের অর্থ আত্মসাৎ ও মাদক সিন্ডিকেট।
সিলেটে বদলি হওয়ার আগে চট্টগ্রাম কারাগারের ডিআইজি ছিলেন পার্থ গোপাল বণিক। সাবেক জেলার সোহেল রানা ও ডিআইজি-প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিকের নেতৃত্বে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার।
বিশেষ সাক্ষাৎ, হাসপাতাল ও ওয়ার্ডে বন্দীদের বিশেষ সুবিধা দেয়া, মাদক, ক্যান্টিন বাণিজ্যসহ নানাখাতে প্রতিদিন তাদের অবৈধ আয় ছিল লাখ লাখ টাকা। তদন্ত করে দুদক এর প্রমাণ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম কারাগারে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতো দুটি পক্ষ। একটির নেতৃত্ব দিতেন জেলার সোহেল রানা এবং অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন পার্থ বণিক ও জেল সুপার প্রশান্ত বণিক। যাদের প্রতিদিন আয় ছিল প্রায় ৪০ লাখ টাকা। যেখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ যেতে পার্থ বণিকের পকেটে।
এদিকে রোববার (২৮ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডির নর্থ রোডের (ভূতের গলি) ২৭-২৮১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান শুরু করে দুদক।
সংস্থাটির দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ জানান, প্রায় ২ ঘণ্টা পার্থর স্ত্রী চিকিৎসক রতন মনি সাহা নানা টালবাহানা করেন। প্রথমে মুঠোফোনে বলেন, তিনি বাসায় নেই।
মিরপুরে আছেন। সেখান থেকে ফিরতে ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে। অথচ সে সময় তিনি ফ্ল্যাটেই ছিলেন। অভিযানে ছিলেন দুদকের এমন এক কর্মকর্তা জানান, দুদক টিম বিকল্প পন্থায় ফ্ল্যাটে প্রবেশের কথা বললে রতন মনি সাহা নিজেই দরজা খুলে দেন।
তবে ততক্ষণে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে পার্থর আয় করা ৮০ লাখ টাকা ২টি ব্যাগে ভরে পাশের বাসার ছাদে ফেলে দেন তিনি। পরে তাকে নিয়েই ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।
পার্থ ও তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ৩০ লাখ টাকা পার্থর শাশুড়ি তাকে দিয়েছেন। আর বাকি ৫০ লাখ টাকা পার্থর বেতনের একটি অংশ। ওই টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে বাসায় রেখেছিলেন তিনি।
দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউসুফ জানান, ৪ হাজার ৬০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেছিলেন পার্থ। বর্তমানে সব মিলিয়ে তিনি পান ৬০ হাজার টাকার মতো।
তার বাসা থেকে যে টাকা উদ্ধার হয়েছে তা অবশ্যই ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা বলে দাবি করেন দুদক পরিচালক।
দুদক জানায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিককে গ্রে’ফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তার কর্মস্থল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ ও জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবহেলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পার্থকে নিয়ে তার ভূতের গলির ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়।
উদ্ধার করা হয় ৮০ লাখ টাকা। জব্দ করা হয় একটি প্রাইভেটকার। দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা এই অর্থ বাসায় রেখেছিলেন ডিআইজি প্রিজনস ।