Notuner Kotha

স্বস্তির বৃষ্টিতে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি

ছবি-নতুনেরকথা।

কথায় আছে, কারও পৌষমাস তো কারও সর্বনাশ। গত কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহে যখন জনজীবন দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনি হাজীগঞ্জে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে বৃষ্টি। যদিও মুষল ধারে বৃষ্টি হয়নি, তারপরেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে এই স্বস্তির বৃষ্টির কারণেই মাথায় হাত মাছ চাষিদের। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) যেসব এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে, সেসব এলাকার মাছ চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছেন।

এ দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয় এবং বেলা সাড়ে তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্নস্থানে এ বৃষ্টি পড়ছে। তবে কোথাও মুষল ধারে বৃষ্টি হয়নি। এতে অতিরিক্ত গরম ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ফলে পুকুরে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের সংকট। আর পানিতে অক্সিজেন না পেয়ে হাঁসফাঁস করে পানির উপরিভাগে ভাসতে শুরু করে মাছ। ফলে অনেক মাছ মরতে থাকে। তাই মাছগুলো ধরে ফেলে চাষিরা।

হাজীগঞ্জ বাজারস্থ পৌর হকার্স মার্কেটের মাছের আড়ৎ ও মাছ বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বাজারে শুধু মাছ আর মাছ এবং আড়ৎদারদের হাঁক-ডাক। কিছুক্ষণ পর পর সিএনজিচালিত স্কুটার, অটোরিক্সা ও মিশুকে করে আড়তে মাছ নিয়ে আসছেন চাষিসহ তাদের প্রতিনিধিরা। আর চাহিদার অতিরিক্ত মাছ আসতে থাকায় হঠাৎ করে দাম পড়ে গেছে। অর্থ্যাৎ বাজার মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি মাছের দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।

সাধারণত অন্যান্য দিনে ২-৩ কেজি ওজনের কাতল মাছের দাম ৩০০-৪০০ টাকা হলেও এদিন ২০০-২২০ টাকা, এক থেকে দেড় থেকে কেজি ওজনের রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা হলেও এদিন ১৫০-২০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ ১৭০-২৫০ টাকা হলেও এ দিন ১২০-১৫০ টাকা, এক থেকে দেড় কেজির কার্প মাছ ১৮০-২৫০ টাকা হলেও এদিন মাত্র ১২০-১৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া এক থেকে দেড়-দুই কেজি ওজনের বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ ১৫০-২২০ টাকা হলে এদিন ১০০-১১৫ টাকা, এক থেকে দেড়-২ কেজি ওজনের মৃগেল মাছ ১৫০-২৩০টাকা হলেও এদিন ১০০-১৩০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছের কেজি গড়ে ১২০-২০০ টাকা হলেও এদিন মাত্র ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই ভাবে অন্যান্য মাছও কম দরে বিক্রি হয়েছে।

এ দিকে মাছ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উপকৃত হয়েছেন ক্রেতা সাধারণ। কম দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে এমন খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে, মাছ বাজারে ভীড় করতে থাকেন ক্রেতারা। এক একজন ক্রেতা ২ কেজি থেকে ৫ কেজি, ১০ কেজি এমনকি ২০ কেজি মাছ ক্রয় করতে দেখা গেছে। বাজারে যেমন মাছ এসেছে, ঠিক তেমনিভাবে বিক্রিও হয়েছে। এদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটার আগেই বাজারের এক-তৃতীয়াংশ মাছ বিক্রি হয়ে যায়।

মো. শাহজাহান মিজি, মো. আব্দুল জব্বার ও ফজল মিয়াসহ কয়েকজন মাছ চাষির সাথে কথা হলে তারা জানান, এদিন সকাল সাড়ে দশটায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। আর এর কিছুক্ষণ পরেই পুকুরের মাছ ভেসে উঠতে শুরু করে। তারা বলেন, মাছগুলো আধা-মরা হয়ে পুকুরের এদিক-ওদিক ছুটতে শুরু করে। তারপর বাধ্য হয়ে মাছগুলো ধরে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসি। কিন্তু বাজারে এসে আমাদের মাথায় হাত।

তারা আরো বলেন, মাছগুলো ধরতে যেমন বাধ্য হই, তেমনি কম দামে বিক্রি করতেও বাধ্য হই। কারণ, বাজারে এতো বেশি মাছ এসেছে। যা কম দামে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিল না।

চাহিদার অতিরিক্ত মাছ বাজারে আসায় কম দামে বিক্রি হয়েছে উল্লেখ করে আড়ৎদার আকতার হোসেন দুলাল বলেন, এক সপ্তাহে বাজারে যে মাছ আসতো, আজকে (একদিন) তার চেয়ে বেশি এসেছে। তাই কম দামে বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে পুকুরে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। আর অক্সিজেন সংকটে মাছগুলো পানির উপরিভাগে উঠে এসে হাঁসফাঁস শুরু করে। তিনি বলেন, যদি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি না হয়ে মুষলধারে বৃষ্টি হতো, তাহলে হয়তো এমনটি হতো না। এতে চাষিরাও ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতো।