আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। সব মিলিয়ে এক পুলিশ সদস্যসহ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩ হয়েছে জানিয়েছেন দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক এম এস রনধাওয়া। খবর আনন্দবাজারের।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, দুই দিনের এ সংঘর্ষে আহত হয়ে দেড় শতাধিক মানুষ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাই মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এদিকে হতাহতের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল চলমান সহিংসতাকে ‘অত্যন্ত পীড়াদায়ক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে জানায়, সোমবারে লাগা ওই সংঘর্ষে মঙ্গলবারও দিনভর উত্তপ্ত ছিল উত্তরপূর্ব দিল্লি। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং গাড়ি ভাঙচুরসহ ব্যাপক সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত এক পুলিশসহ ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক শিশুসহ ১৫০ জন আহত হয়েছেন। আহত ৪৮ পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এনডিটিভি আরো জানায়, সংঘর্ষ চলাকালীন ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাগতমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছিল। উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বিল্ডিং থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গিয়েছে। রাস্তায় অসংখ্য ইটের টুকরো, লাঠি এবং ভাঙা কাঁচের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বুধবারের সিবিএসই বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। দুই দিনের এই সংঘর্সে দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেছেন ভুক্তোভোগীরা।
এ বিষয়ে অনিল মিত্তাল নামে এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাকর। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। গত দুই দিনে দিল্লির সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৫০ জন আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ থামাতে পঞ্চাশের মতো পুলিশও আহত হয়েছেন। দিল্লির কারাওয়াল নগর, মাউজপুর, ভজনপুরা, বিজয় পার্ক ও যমুনা বিহারে এ সংঘর্ষ ঘটেছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের ওপর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের পরপরই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের মাঠে নামতে দেখা গেছে। এদিন কাঁদানে গ্যাস ছড়িয়ে ও লাঠিচার্জ করে চাঁদবাগ ও ভজনপুরা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে।
দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ৬ হাজার ৭০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যা রোববার ছিল ২ হাজার জনে। এরপরও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মঙ্গলবার বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুপুরে ওই বৈঠকে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ পুলিশ প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা। বৈঠকে সেনা নামানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনই প্রয়োজন না হলেও সেনা নামানোর রাস্তাও খোলা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গুজবে কান না দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
দিল্লির মেট্রো কর্তৃপক্ষ জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবরপুর, গোকুলপুরি, জোহরি এনক্লেভ ও শিব বিহার স্টেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করে বড় ধরনের জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।