Notuner Kotha

শিশুর সাথে স্কুলে ভর্তি হলেন মা !

কচুয়া প্রতিনিধি॥
চাঁদপুর জেলাধীন উপজেলার কচুয়ায় তাছলিমা বেগম নামে এক গৃহিণী তার ছেলের সাথে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এক বিড়ল দৃস্টান্ত স্থাপন করেছেন। মনীশিদের ভাষায় আমাদের এ সমাজে একটি প্রবাদ রয়েছে, শিক্ষা অর্জনে বয়সের কোনো বালাই নেই। অর্থাৎ শিক্ষা অর্জন করতে কার কোন বয়স লাগেনা। যে কোন বয়সে শিক্ষা বা পড়াশুনা করে তার লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা সম্বব।

শুধু প্রয়োজন রয়েছে ইচছা শক্তি ও মনোবল। তাই কবির ভাষায় একটি প্রবাদও আছে,একবার না পারিলে দেখ শতবার। যে একবার এক ক্লাসে পড়ে উর্ত্তীন হতে না পারলেও শতবার চেস্টা করেও পাশ করা বা উর্ত্তীন হওয়া সম্বব। আমরা বিগতদিনে শুনেছি,অনেকেই বেশী বয়সে তার সন্তাননের সাথে পড়া শুনা বা পরীক্ষার দেওয়ার খবর। কিন্ত একেবারে নিরক্ষর কোন মা’বা বাবা সন্তানের সাথে পড়াশুনার খবর শুনেনি। চাঁদপুরের কচুয়ায় ৪০ বছরের মায়ের সাথে তার শিশু সন্তান একই শ্রেনীতে পড়ে শিক্ষা অর্জন এই প্রথম কোন মায়ের।

তাই সেইরুপ জেলাধীন কচুয়া উপজেলার আকানিয়া গ্রামের রিক্সাচালক মোকাম্মদ গোলাম হোসেনের স্ত্রী তাছলিমা বেগম এক গৃহিনীর শিক্ষা অর্জনের প্রতি অধির আগ্রহ ও ইচছা শক্তির কারনে তার আগ্রহের কথা জানতে পেরে ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কচুয়া উপজেলার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরের উৎসাহ,মনবল জোগানো ও আর্থিক সহযোগিতায় আশ্বাসের ফলে এ বছর ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারী কচুয়া উপজেলার ৪৬নং আকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০ বৎসরের তাছলিমা বেগম তার শিশু পুত্র প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো: মাসুম হোসেনের সাথে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ায় এলাকায় এক আলোড়ন সৃস্টি করেছেন।

কচুয়া উপজেলা ও পুরো চাঁদপুরে ছড়িয়ে পড়েছে,৫ বছরের শিশুর সাথে ৫সন্তানের মায়ের শিক্ষা অর্জন করার খবরটি। এ জন্যে গতবুধবার তার ছেলে মাসুমের সাথে আকানিয়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মা ও ছেলে একই ক্লাসের প্রথম শ্রেণির নতুন বই সংগ্রহ করেন।

উপজেলার সদর দক্ষিন ইউনিয়নের আকানিয়া গ্রামের রিক্সাচালক মো: গোলাম হোসেনের স্ত্রী তাছলিমা বেগমের কম বয়সে বিয়ে হওয়ার কারনে তার পক্ষে শিক্ষা অর্জন করার ইচছা থাকলেও লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। জীবনের প্রথমেই লেখাপড়া শিখে সে সু-গৃহিনী ও সমাজসেবা মূলক কাজ করার স্বপ্ন দেখছে। তাই সে স্বপ্নকে সে আজও লালন করছে। লেখাপড়া না শিখে নিরক্ষর থাকার চেয়ে পড়ালেখা করাই উত্তম বলে তাছলিমা জানান।

এ বয়সে অর্থাৎ ৪০ বছর বয়সেম তাছলিমা বেগম তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে চান বলে জানান। তিনি আরো জানান,আমার ইচছা রয়েছে,আমি এ বয়সে (তাসলিমা বেগম) শিক্ষা অর্জন করে বিড়ল দৃস্টান্ত স্থাপন করতে চাই কচুয়া উপজেলায়। এ জন্য বিধাতার কাছে চাই জ্ঞান শক্তি ও আপনাদের সকলের দোয়া ও সাহায্য সহযোগিতা। খবর নিয়ে জানা গেছে, তাছলিমা এখন তার পুত্রের সাথে নিয়মিত পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়েদুর রহমান জানান, ১লা জানুয়ারী বই বিতরণী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ কালে তাসলিমা বেগম লেখাপড়া শিখতে তার গভীর আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। এ আগ্রহের প্রতি সাড়া দিয়ে চেয়ারম্যান তার হাতে প্রথম শ্রেণির বই তুলে দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায় তাকেও শ্রেণি কক্ষে বসে পড়াশুনা করার সুযোগ প্রদানের জন্য আমাকে পরামর্শ দেন।

ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির বলেন, তাসলিমা বেগম পড়াশুনা করতে খুবই আগ্রহী। তাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায় তাকেও শিক্ষাদানের জন্য প্রধান শিক্ষককে বলেছি। তাসলিমা বেগম ও তার সন্তান মাসুম যতদুর পর্যন্ত পড়াশুনা করতে চায় ওই পর্যন্ত পড়াশুনার খরচাদি আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছি। আমি তাদের পড়াশুনার খোঁজ-খবর রাখছি।