চাঁদপুর, ৩ জানুয়ারী, শুক্রবার॥
চাঁদপুরে ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে আলুর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রোপণকৃত আলু বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। ফলে একদিকে আলু উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্থ, অপরদিকে হাজার হাজার টাকা ধার দেনা করে লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকগণ হতাশ হয়ে পড়েছেন। এতে অকাল বৃষ্টিতে আলু চাষিদের স্বপ্ন বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় ৩ হাজার ৭শ’৯২ হেক্টর জমির আলু বীজ এখন পানির নীচে। যদি রবি সোমবার থেকে টানা রৌদ্র হয় তাহলে আলু বীজ কিছুটা রক্ষা হবে। তবে চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস জানান, অঝোর ধারায় বৃষ্টি বন্ধ হলেও ঘুড়ি, ঘুড়ি বৃষ্টি থাকবে আরো কয়েক দিন। এর পরেই আসবে শৈত্যপ্রবাহ। এতে আলু চাষিদের জন্য কোন সুখবর নেই।
চাঁদপুর জেলায় এবার (২০১৮-‘১৯) অর্থ বছরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২৪ হাজার ৫শ’ মেট্রেক টন। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৬ শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, চাঁদপুর সদরে এবার ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮শ’ মে. টন। মতলব উত্তরে ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭শ’ ম.টন ।
মতলব দক্ষিণে ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৩ হাজার ৫শ’ মে.টন । হাজীগঞ্জে ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫০ মে.টন । শাহারাস্তিতে ২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২৫ মে.টন।
কচুয়ায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৫শ’ মে.টন। ফরিদগঞ্জে ১৪০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ মে.টন। হাইমচরে ১২৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬২৫ মে.টন।
সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মতলব উত্তর উপজেলার নিচু এলাকা। সেখানে ৮শ’ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। পানির নিচে রয়েছে ৩’শ হেক্টর আলু বীজ।
এছাড়া চাঁদপুর জেলা সদরে ৩ শ’ হেক্টর জমির আলুবীজ পানির নীচে রয়েছে। এ বছর কচুয়া উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ করা হয়েছে।
অসময়ের বৃষ্টির পানি জমে রোপণকৃত আলুর বীজ ও প্রয়োগকৃত সার সবই বিনষ্ট হয়ে গেছে। কেবলমাত্র বীজই বিনষ্ট হয়েছে ৬ লাখ টাকা ওপর। এ ছাড়া ইরি বোরো ধানের বীজতলা, করলা, ধনিয়া, মূলা,লালশাক, মরিচ, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আলুর জমি থেকে পানি সরানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ২ দিনের টানা বৃষ্টিতে কৃষকের আলুর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পরপর ২ বছর আলু চাষে বৃষ্টির কারণে ধবস নেমেছিল। এ বছর আলু চাষে অধিক ফলন উৎপাদনের মাধ্যমে তা’ পুষিয়ে নেবার কথা ছিলো। কিন্তু তাতে বাগড়া দিলো অকালের বৃষ্টি।
চাঁদপুর সদরের মহামায়া গ্রামের কৃষক আলী আক্কাস জানান, আমি ২ কানি (২’শ ৪০ শতাংস) জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে ৮০ শতাংস নিচু জমি। বৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই ঘুম নেই। জমিনের লাইলে লাইলে আছি। যদি আল্লাহ রক্ষা করে। এ কৃষক আরো জানান, গত বছর আলুর ভালো ফলন হয়েছিল কিন্তু আলু মাঠে থাকতেই বৃষ্টিতে সর্বনাশ করে দেয়। তার পরেও লাভ হয়েছে।
চাঁদপুর খামার বাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আবদুর রশিদ জানান, এ বছর আলু চাষের প্রথম মৌসুমে ২/৩ দিন বৃষ্টি হওয়ায় আলু বীজ রোপন কিছুটা দেরী হয়েছে। কোথাও গাছের চারা উঠেছে কোথাও এখনো উঠেনি। আবার কোথাও কোথাও এখনো আলু বীজ রোপন করছে।
তিনি বলেন, অঝোর ধারা টানা বৃষ্টিতে কৃষকরা সমস্যায় পড়বে। তিনি পরামর্শদেন যদ্দুর সম্ভব, জমিতে পানি নিস্কাষণের ব্যবস্থা রাখা। বিশেষ করে যেসব আলু বীজের গাছ বড় হয়েছে তারা অবশ্যই সেচ ব্যবস্থা রাখতে হবে। যদি দ্রুত সময়ে বৃষ্টি চলে যায়, তাহলে ভালো। আর যদি বৃষ্টি আরো কয়েক দিন থাকে তাহলে কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ, ঢাকা অফিস : ২০৫/৩ ফকিরাপুল, ঢাকা। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত : নতুনেরকথা
Copyright © 2024 Notuner Kotha. All rights reserved.