হাজীগঞ্জে ছেলের মৃতদেহ কবর দিতে পিতার বাঁধা, স্ত্রী সন্তান চাই সম্পদের ন্যায্য হিস্যা

  • আপডেট: ০৯:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৩৯

ঘরের দরজার সামনে খাটিয়াতে পড়ে আছে কামালের ‍মৃতদেহ।

মো. জহির হোসেন:
হাজীগঞ্জে ঔরসজাত সন্তান কামাল পাটওয়ারীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে বাঁধা দিচ্ছে বাবা আবদুল কাদের। একই ঘটনায় স্বামীর লাশ দাফনের আগেই স্ত্রী ও সন্তানের ন্যায্য পাওনা চাচ্ছে মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি। স্ত্রী সন্তানরাও বাবার লাশ দাফনে বাঁধা দিচ্ছে এ ঘটনায় এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

কামাল পাটওয়ারী (৫৫) সোমবার দুপর ১২টার দিকে ভাড়া বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ১৭ ও ১২ বছর বয়সি ২টি পুত্র সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে।

মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি জানান, প্রায় ২৩ বছর পূর্বে আমার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের মাতৈন পাটওয়ারী বাড়ীর আবদুল কাদের পাটওয়ারীর ছেলে কামাল পাটওয়ারীর। আমি কালো হওয়ায় আমার শশুর-শাশুড়ী আমাকে কামালের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেইনি। তারা আমার উপর বিভিন্ন সময় প্রচণ্ড নির্যাতন করতেন। বিশেষ করে আমার শাশুড়ী ও ননদদের অত্যাচারে আমি ছিলাম অতিষ্ঠ। তবে আমার স্বামী সব সময়কে আমাকে ধৈর্য্য ধরার কথা বলতেন।

এক পর্যায়ে ২০০০ সালের দিকে আমার পরিবার টাকা খরচ করে কামালকে বিদেশ পাঠায়। কামাল বিদেশ যাওয়ার পর সব টাকা বাবার নামেই পাঠাতে তবুও বাবা-মা ও বোনদের মন জয় করতে পারেনি। এক পর্যায়ে কামাল অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসে। সেই সময় কামালকে তার পরিবারের কেউ কোন চিকিৎসা করাইনি। এক পর্যায়ে তাকে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপির সহযোগিতায় ঢাকায় চিকিৎসা করায়। চিকিৎসারত অবস্থায় কামাল মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফন করার জন্য বাড়ীতে আনি। কিন্তু আমার শশুর কামালকে তার সন্তান নয়, বলে পারিবারিক কবর স্থানে দাফনে বাঁধা দেই। আমরাও আমার স্বামী ও সন্তানের ন্যায্য দাবী স্বামীর মৃতদেহ দাফনের পূর্বেই বুঝে পেতে চাই।

এ দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেও মৃত কামালের পিতা আবদুল কাদেরের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বিল্ডিংয়ের দরজা জানালা বন্ধ করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতরে অবস্থান করেন।

মৃত কামালের ভাই স্বপন বলেন, কামাল প্রসঙ্গে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।

পাটওয়ারী বাড়ীর নুরুল আলম পাটওয়ারীসহ বাড়ীর সকল লোকই মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়। তারা জানান, আবদুল কাদের খুবই ধূর্তপ্রকৃতির লোক।

এক পর্যায়ে এলাকাবাসি ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল কাদেরের ঘরে হামলার করার চেষ্টা করে। পরে বাড়ীর লোকজনের সহযোগিতায় উত্তেজিত গ্রামবাসিকে বাঁধা প্রদান করা হয়।

 স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন, হাজীগঞ্জ থানার এসআই নাজিমউদ্দিন ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন বলে মুঠোফোনে জানান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানান, কামালের স্ত্রী ও সন্তানের দাবীর প্রেক্ষিতে তাদেরকে থাকার জন্য কামালের ক্রয়কৃত সোয়া ৯ শতাংস জমি স্ত্রী বা তার ছেলেদের নামে দেয়া হবে। এই মর্মে রাতেই একটি স্ট্যাম্প করার কথা থাকলেও মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদের স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেনি। পরে মৌখিকভাবে কামালের স্ত্রী ও সন্তানদের তাদের ন্যায্য জমি দিতে রাজি হওয়ায় রাত ১২টার দিকে জানাযা শেষে কামালের মৃতদে দাফন করা হয়।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

সর্বাধিক পঠিত

স্বামীর ঋণের টাকা নিয়ে ২ সন্তান রেখে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে উধাও গৃহবধু

হাজীগঞ্জে ছেলের মৃতদেহ কবর দিতে পিতার বাঁধা, স্ত্রী সন্তান চাই সম্পদের ন্যায্য হিস্যা

আপডেট: ০৯:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

মো. জহির হোসেন:
হাজীগঞ্জে ঔরসজাত সন্তান কামাল পাটওয়ারীকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করতে বাঁধা দিচ্ছে বাবা আবদুল কাদের। একই ঘটনায় স্বামীর লাশ দাফনের আগেই স্ত্রী ও সন্তানের ন্যায্য পাওনা চাচ্ছে মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি। স্ত্রী সন্তানরাও বাবার লাশ দাফনে বাঁধা দিচ্ছে এ ঘটনায় এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

কামাল পাটওয়ারী (৫৫) সোমবার দুপর ১২টার দিকে ভাড়া বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ১৭ ও ১২ বছর বয়সি ২টি পুত্র সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে।

মৃত কামাল পাটওয়ারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বিউটি জানান, প্রায় ২৩ বছর পূর্বে আমার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের মাতৈন পাটওয়ারী বাড়ীর আবদুল কাদের পাটওয়ারীর ছেলে কামাল পাটওয়ারীর। আমি কালো হওয়ায় আমার শশুর-শাশুড়ী আমাকে কামালের স্ত্রী হিসেবে মেনে নেইনি। তারা আমার উপর বিভিন্ন সময় প্রচণ্ড নির্যাতন করতেন। বিশেষ করে আমার শাশুড়ী ও ননদদের অত্যাচারে আমি ছিলাম অতিষ্ঠ। তবে আমার স্বামী সব সময়কে আমাকে ধৈর্য্য ধরার কথা বলতেন।

এক পর্যায়ে ২০০০ সালের দিকে আমার পরিবার টাকা খরচ করে কামালকে বিদেশ পাঠায়। কামাল বিদেশ যাওয়ার পর সব টাকা বাবার নামেই পাঠাতে তবুও বাবা-মা ও বোনদের মন জয় করতে পারেনি। এক পর্যায়ে কামাল অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসে। সেই সময় কামালকে তার পরিবারের কেউ কোন চিকিৎসা করাইনি। এক পর্যায়ে তাকে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপির সহযোগিতায় ঢাকায় চিকিৎসা করায়। চিকিৎসারত অবস্থায় কামাল মৃত্যুবরণ করলে লাশ দাফন করার জন্য বাড়ীতে আনি। কিন্তু আমার শশুর কামালকে তার সন্তান নয়, বলে পারিবারিক কবর স্থানে দাফনে বাঁধা দেই। আমরাও আমার স্বামী ও সন্তানের ন্যায্য দাবী স্বামীর মৃতদেহ দাফনের পূর্বেই বুঝে পেতে চাই।

এ দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করেও মৃত কামালের পিতা আবদুল কাদেরের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বিল্ডিংয়ের দরজা জানালা বন্ধ করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঘরের ভেতরে অবস্থান করেন।

মৃত কামালের ভাই স্বপন বলেন, কামাল প্রসঙ্গে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।

পাটওয়ারী বাড়ীর নুরুল আলম পাটওয়ারীসহ বাড়ীর সকল লোকই মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদেরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়। তারা জানান, আবদুল কাদের খুবই ধূর্তপ্রকৃতির লোক।

এক পর্যায়ে এলাকাবাসি ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল কাদেরের ঘরে হামলার করার চেষ্টা করে। পরে বাড়ীর লোকজনের সহযোগিতায় উত্তেজিত গ্রামবাসিকে বাঁধা প্রদান করা হয়।

 স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন, হাজীগঞ্জ থানার এসআই নাজিমউদ্দিন ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন বলে মুঠোফোনে জানান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন জানান, কামালের স্ত্রী ও সন্তানের দাবীর প্রেক্ষিতে তাদেরকে থাকার জন্য কামালের ক্রয়কৃত সোয়া ৯ শতাংস জমি স্ত্রী বা তার ছেলেদের নামে দেয়া হবে। এই মর্মে রাতেই একটি স্ট্যাম্প করার কথা থাকলেও মৃত কামালের বাবা আবদুল কাদের স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেনি। পরে মৌখিকভাবে কামালের স্ত্রী ও সন্তানদের তাদের ন্যায্য জমি দিতে রাজি হওয়ায় রাত ১২টার দিকে জানাযা শেষে কামালের মৃতদে দাফন করা হয়।