নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরিদগঞ্জ॥
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়ার গাড়ী ভাংচুর, চালককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে রক্তাক্ত জখম, নগদ ১০ লাখ টাকা ছিনতাই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খাজে আহমেদ মজুমদার, মহিউদ্দিন রিমন ও আয়াত উল্যাহ মাসুদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান জামান।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ওই মামলার ১৪ আসামী জামিনের জন্য আসলে আদালত ১১ জনের জামিন মঞ্জুর করেন এবং উল্লেখিত ৩ জনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কোর্ট পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, আদালতের আদেশের পরে ৩ আসামীর মধ্যে ১নং আসামী খাজে আহমেদ অসুস্থ্য দাবী করে তার আইনজীবী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিকেলে চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার মোশারফ ইউসুফ আসামী খাজে আহমেদ মজুমদারকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে ২৯ জানুয়ারি সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিআরডিবি কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হয়। ওই সভায় অংশ গ্রহন করেন সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়া। ঠিক ওই সময় এমপির গাড়ী নিয়ে বাহিরে অবস্থান করেন গাড়ীর চালক মো. কাদির বেপারী (২৭)। ঠিক ওই মুহুর্তে সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী ৩০-৪০জন গাড়ীর সামনে এসে শামছুল হক ভুঁইয়াকে উদ্দেশ্যে করে বিভিন্ন কুটুক্তি করে এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গাড়ীটি ভাংচুর করে। বাধা দিতে গেলে চালক কাদিরকে তারা মারধর করে রক্তাক্ত জখম এবং গুরুতর আহত করে। সংঘর্ষের সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৯০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে এবং হামলায় বর্ধিত সভাস্থল উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি চত্ত্বর ভাংচুরের শিকার হয়।
চিকিৎসা শেষে আহত চালক কাদির বাদী হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ থানায় ১৬ জনের নাম নির্দিষ্ট করে এবং অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা নং-২৫/২/২০১৯। জিআর মামল নাং-৬৭/১৯। মামলার ধারাগুলো হচ্ছে-৪৩/৪৮/৪৯/২৩/২৪/৩০৭/৩৭৯/৪২৭/৫০৬/৩৪পিসি।
মামলার বিবরণ থেকে আরো জানা যায়, ১নং আসামী খাজে আহমেদ মজুমদার গাড়ীর চালক কাদির বেপারীকে ঘটনার সময় কিরিচ দিয়ে মাথার ডান পাশে কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপরে খাজে আহমেদ চালকের বুকে লাথি মেরে এবং গলায় পাড়া দিয়ে শ^াসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টার করে। ওই সময় ঘটনাস্থলে থাকা মামলার ১নং সাক্ষী ওই অবস্থা থেকে চালককে উদ্ধার করে।
মামলাটি চলমান অবস্থায় তদন্তের দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) চাঁদপুরের পুলিশ পরিদর্শক মীর মাহবুবুর রহমান। তিনি মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
উল্লেখ্য, ১নং আসামী খাজে আহমেদ মজুমদার মাদকসেবন করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মাদকের সাথে জড়িত প্রমাণ হওয়ার কারণে তাকে ইতোমধ্যে উপজেলার দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ বাতিল করেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কুমিল্লা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।