• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২০

২ মাস পর
আজ মধ্য রাত থেকে পদ্মা মেঘনায় ইলিশ ধরতে নামবে জেলেরা
অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]
চাঁদপুরের হাইমচরে নদীর মাঝে জালসহ নৌকা নোঙ্গর করে অপেক্ষা করছে একটি ইলিশ ধরার নৌকা।

মো.মহিউদ্দিন আল আজাদ॥

২ মাস বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় ইলিশ শিকারে নামবে জেলেরা। জাটকা সংরক্ষণে দুই মাসের সময়সীমা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে। শুক্রবার পুরোদমে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় জাল পড়বে জেলেদের। জেলেদের জালে ধরা দেবে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। আবারও জমজমাট হয়ে উঠবে দীর্ঘ ২ মাস ঝিমিয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুরের মাছ ঘাট।

দীর্ঘ দুই মাস অলস সময় কাটানোর পর নদীতে মাছ ধরতে নদীতে নামছে সরকারের তালিকভূক্ত প্রায় ৫২ হাজার জেলে। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি জাটকা রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় এবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।

জাটকা সংরক্ষণের জন্য সরকার গত দুই মাস চাঁদপুরসহ দেশের আরো কয়েক স্থানে অভয়াশ্রম ঘোষনা করে। এ সময় নদীতে যে কোন ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিলো। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রস্তুত।

জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ কি:মি: এলাকায় সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। যার ৬০ কিলোমিটার পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৫২ হাজার ১শ ৮৯জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে।

এ সময় সরকার জেলেদের চাউলসহ নানান সহায়তা দিয়ে থাকে। সহায়তার মধ্যে থাকে ছাগল, সেলাই মেশিন ও ৪০ কেজি চাউল। এবার সরকারি সহায়তার চাল নিয়েও জেলেদের নানা অভিযোগ ছিল। তাদের অভিযোগ, প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার নিয়ম থাকলেও চাল পেয়েছে ৩২-৩৫ কেজি। আর চালের বিষয় জেলেদের এমন অভিযোগ স্বীকার করে একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান তার সীমাবদ্ধতার কথা। তিনি বলেন, অনেক জেলের নাম তালিকায় উঠেনাই তাদেরকে কিছু চাউল দিতে হয়। আবার প্রত্যেক বস্তায় চাউল ১/২ কেজি কম হয়। এগুলো কি আমরা ভর্তূকি দেবো।

চাঁদপুরের বেশীর ভাগ জেলেই দাদন নিয়ে জাল ও নৌকা কিনে থাকে। এজন্য তারা সব সময় মহাজানের কাছে আটক থাকে। ফলে মাছের পরিপূর্ণ সিজনে তারা ইলিশ পেলেও ভালো দাম পায়না। দাদন নেয়া ব্যক্তির কাছেই মাছ বিক্রয় করতে হয়।
এদিকে দু’মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাধাহীনভাবে নদীতে মাছ ধরতে পারবে তাই জেলেদের মনে কর্মদ্দীপনা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে তারা সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে। বুধবার দুপরে দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামত কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
এ বছর জেলেদের ধারণা নদীতে খুব একটা ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে মনে হয় না। তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করে করোনা ভাইরাসের কারণে নদীতে পুলিশের টহল জোরদার ছিলোনা। ফলে প্রতিদিনই জাটকা নিধনের উৎসব ছিল।

চাঁদপুর সদরের হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে কামাল হোসেন। নদীতে মাছ ধরছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে জাল-নৌকা যা আছে তা নিজের পুঁজিতে নয়। মহাজনের কাছ থেকে ধার-দেনায়। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে না নামলেও পরিবারে নেমে আসা অভাব অনটনের দুষ্ট ক্ষত তার পিঠে চাবুক মারছে।

কেবল বিল্লাল নয়, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাপাড়ের জেলেরা দুই মাসের জন্য পেশা হারিয়ে দুর্ভোগে ছিলেন। তবে অভিযোগ যাই হোক, আবারো নদীতে মাছ শিকারে যাবেন তারা। সেই জন্য জাল বুনন আর নৌকা প্রস্তুতে ব্যস্ত এখন জেলের দল।

জাটকা সংরক্ষণ হলে ইলিশ বড় হবে। তাই দুই মাসের জন্য ছয়টি অভয়াশ্রমে সবধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এতে বাদ যায়নি চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাও। ফলে মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস বন্ধ থাকার পর, ১ মে শুক্রবার আবারো এই জনপদের অর্ধ লক্ষাধিক জেলের জাল পড়বে নদীতে।

হাইমচরের কাটাখালিতেও জেলে আমির গাজী মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, রাতেই তারা নদীতে নামবেন বলে জানান। এ জেলে বলেন, অনেক কষ্টে ছিলাম গত দুই মাস। সরকারি যে চাল পেয়েছি তা দিয়ে মাত্র ১০ দিন চলেছে। তারপর যে অন্য কাজ করে আয় করব সেই পরিস্থিতিও ছিল না। কারণ, করোনা আতঙ্কে অর্ধাহারে অনাহারে ঘরেই কেটেছিল। এতে পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে কষ্টের সীমা ছিল না।

জহিরউদ্দিন নামে আরেক জেলে বলেন, গতবারের মতো এবারো প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করি। তবে জাটকা নিধন আমাদের সেই স্বপ্ন নষ্ট করে দেবে হয়তো!

জহির উদ্দিন আরো বলেন, তার ইউনিয়নে ১৯০০ জেলের মধ্যে ১৩ জনের নামে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে মোট ১৯০০ জেলের মধ্যে বরাদ্দ চাল বিতরণ করতে গিয়ে অন্যদের কম দিতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতি হয়েছে চাঁদপুরে সরকারি তালিকায় থাকা প্রায় ৫২ হাজার জেলে পরিবারের।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী জানান, জাটকা সংরক্ষণে অন্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা নমনীয় ভূমিকা নিতে হয়েছে জেলা টাস্কফোর্সকে। কারণ, করোনা পরিস্থিতির কারণে মানবিক আচরণ করতে হয়েছে জেলেদের। তাই একই সঙ্গে যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে তাদের লঘুদ- দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই সময় প্রায় ১৬.০৮৩ মেট্রিক টন জাটকা ০.২২১ মেট্রিক টন অন্যান্য মাছ এবং ২’শ ২৯৪.৩৩০ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৫৮ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা, এ ছাড়াও ৬২জন জেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলেদের জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা এবং ৭৫জন জেলের জেল দেয়া হয়েছে।

ইলিশ গবেষক, বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে তাদের গবেষণার ফলে যা তথ্য উপাত্ত মিলেছে-তাতে আশা করা যাচ্ছে, বিগত বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি পরিমাণ ইলিশ আহরণ করতে পারবে জেলেরা। ফলে গত বছরের ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন ছাড়িয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিকটনে উন্নীত হবে।

এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, শুধু ইলিশই নয়, দেশে নদ-নদীতে সবধরনের সামুদ্রিক মাছ বৃদ্ধি পাবে। পাঙ্গাস, লাল চৌওয়া, চিংড়ি, বাইলা এসব মাছ বৃদ্ধি পাবে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • চাঁদপুর সদর এর আরও খবর
error: Content is protected !!