• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২০

হাজীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীরের মৃত্যু ও ডাক্তারদের অবহেলা নিয়ে ফেইসবুকে মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

আমাদের হাজীগঞ্জের ব্যবসায়ী

তারেক রিপনের দুলাভাই চাটখিল কলেজে সাবেক জি এস জাহাঙ্গীর আলমের জ্বর, শ্বাস কষ্ট রোগের মৃত্যুর গল্পটি শুনুন।

রোগী কে এবং কি করেন ? ——
আমার বোন জামাই, আমার দুলাভাই। তিনি ব্যবসা করতেন চাঁদপুরে। ১০ দিন আগে উনার জ্বর এবং সাথে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

প্রথমে কাকে দেখালেন? ——
লোকাল ডাক্তার উনাকে ঢাকা নিয়ে যেতে বললো এবং সে দিনই তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হলো। কিন্ত লোকাল ডাক্তার কোনো রোগের কথা বলেননি।

স্থানীয় ডাক্তারের সমাধান না পেয়ে আসলেন কোথায় ? ——
পারিবারিক-ভাবে আমরা সচেতন বলে প্রথমেই উনাকে নিয়ে গেলাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। রাত তখন ৮টা। সেখানকার ডাক্তার উনার ফাইল দেখতে চাইলেন এবং তাদেরকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন।

সেখানে কি হলো ? ——
২ ঘণ্টা পর ডিউটি অফিসার ফিরে এসে জানালে আমরা এ রোগী এখানে রাখতে পারবো না কারন উনার নিউমোনিয়া লক্ষণ।

কুর্মিটোলা যা করোনার জন্যে বিশেষায়িত হসপিটাল সেখান থেকে ফেরত নিয়ে কোথায় পাঠানো হলো ? ——
বললেন বক্ষব্যধি হাসপাতালে নিয়ে যান। কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাদেরকে বের করে দেয়া হলো। দুলাভাই তখনো খুব শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

বক্ষ-ব্যাধি হসপিটালে কি হলো ? ——
তারপর সেখান থেকে তাকে বক্ষব্যধিতে নেয়া হল কিন্ত করোনা রোগী বলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলো না, বললো এধরনের রোগী তারা নিচ্ছেনা।

বক্ষব্যধি থেকে কোথায় নেওয়া হলো? ——
সেখান থেকে নেয়া হলো ইবনে সিনা হাসপাতালে। তারা কোনো কথাই শুনলেন না।

ইবনে সিনা না নেওয়াতে কোথায় নেওয়া হলো ? ——
সেখান থেকে তাকে নেয়া হলো রেনেসাঁ নামে একটি ক্লিনিকে। সেখানও তারা গ্রহণ করলেন না। শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট শুনেই সবাই অপারগতার কথা বলে অনেকটা বের করে দিচ্ছে। রাত তখন ৪টা।

কোন হাসপাতাল চিকিৎসা না করাতে তারা বাসায় কি করলেন ? ——
সবাই হতাশ হয়ে উনাকে বাসায় নিয়ে গেলো। কোনো রকম রাত কাটানোর পর বাসায় একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার আর নেভ্যুলাইজারের ব্যবস্থা করা হলো। শ্বাসকষ্ট ব্যাপারটা কতোটা জটিল সেটা না বুজলেও মোটামুটি সবাই কিন্তু কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারেন।

বাসায় রোগীর শ্বাসকষ্ট সিরিয়াস হওয়ার পরে তারা কি করলেন ?——
যাই হোক ঘণ্টা তিনেক পর দুপুর ১টার দিকে একটা এম্বুলেন্সে কল করে উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো ইউনাইটেড হাসপাতালে। আমরা মূলত নিউমোনিয়া গোপন করে হার্টের সমস্যা বলে Appointment নিয়েছিলাম। না হলে হয়তো সেখানেও ঢুকতে পারতাম না।

শ্বাসকষ্টের তথ্য গোপন করে ইউনাইটেডে এডমিট করার পরে কি হল? ——
তার পর ডাক্তার উনার ফাইল দেখে বুজতে পারলেন এবং করোনা ভাইরাস ধারনা করলেন। বললেন করোনা রিলেটেড হাসপাতালে চলে যেতে।

—- খেয়াল করেন ইউনাইটেড কিন্তু তাদের একটা ডায়াগনোসিস দিয়েছে। জানিয়েছে করোনা হতে। সে কারনেই বের করে দিয়েছে—–

করোনা সন্দেহে ইউনাইটেড থেকে বের করে দেওয়ার পরে তারা কোথায় গেলেন ? ——
ফলে সেখান থেকে বের হয়েই উনাকে নিয়ে যাওয়া হলো কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে।

করোনার জন্যে বিশেষায়িত হসপিটাল কুয়েত মৈত্রী হসপিটালে শেষ পর্যন্ত এডমিট করাতে কি হল।
উনাকে রাখা হলো ২দিন। ৪৮ঘন্টা পর উনার রিপোর্ট আসলো নেগেটিভ, মানে তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত নন। তাকে রিলিজ দেয়া হলো।

করোনা নেগেটিভ আসার পরে রিলিজ দেওয়াতে তারা কি করলেন?——
এ অবস্থা আমাদের যার যার অবস্থান থাকে সকল ধরনের কার্ডিয়াক এবং নিউমোনিয়া রিলেটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মানবিক আবেদন করেও আমরা কারো মন গলাতে পারিনি। কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল থেকে আবারো নিয়ে যাওয়া হলো বাসায়।

আবার বিভিন্ন হসপিটালে ঘুরে ঘুরে রোগী চিকিৎসা করাতে না পেরে রোগীর কি হল? ——
বিগত ৫ দিন তিনি কিন্ত বিন্দুমাত্র ঘুমাতে পারেনি। ইতিমধ্যে উনার হাত পা ফুলে গেছে, ডায়াবেটিস চরম হাই, ফুসফুসে পানি জমে গেছে। ৭ দিনের মাথায় অনেককে দিয়ে তদবির করে ভর্তি করানে হলো হার্ট ইন্সটিটিউটে।

হার্ট ইন্সটিটিউটে কি হল এবং ডাক্তাররা কি বললেন ? ——
সেখানে নেই কোনো ডাক্তার। চরম অবহেল। যেখানে উনার দরকার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা, অক্সিজেন সেখানে চরম ঢিলেঢালা অবস্থা। নেই কোনো ডাক্তার। সবাই নাকি ছুটিতে। ২ দিন থাকার পর হঠাৎ ডাক্তার বললো আপনারা রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে যান। এ চিকিৎসায় সময় লাগবে। তারচেয়ে বাসায় থাকা ভালো। আমরা অনেক বলে কয়েও আর হাসপাতালে থাকার অনুমতি পেলাম না। না জানলাম উনার কি সমস্যা না জানলাম উনার চিকিৎসা পদ্ধতি।

নয় দিন হার্ট ইন্সটিটিউটে রেখে বাসায় পাঠানোর পরে কি হলো ?——
বাসায় নিয়ে আসা হলো নবম দিনের মাথায়। একদিন রাত ২ টায় চরম শ্বাস কষ্ট-শুরু হলে দুলাভাইয়ের। আবারও ব্যর্থ প্রচেষ্টার উদ্দেশ্যে এম্বুলেন্স কল করে হার্ট ইন্সটিটিউটের দিকে রওনা হলাম।

রোগী কিভাবে মারা গেল ? ——
সেখানে পৌঁছে জানলাম তিনি আর নেই। সবাইকে সকল ধরনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তার আর কোন শ্বাসকষ্টও হচ্ছে না।
তিনি মারা গেছেন। হা, ফাইনালি তিনি মারা গেছেন। এজন্য ফাইনালি বললাম কারন গত ১০দিন মানসিকভাবে তিনি প্রতিদিনই মারা গেছেন।

রোগীর স্বজনদের অনুভূতি কি ? ——
একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুনতো আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন বা সন্তান কেউ অসুস্থ আর আপনারা তাকে সাথে নিয়ে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল দৌড়ে বেড়াচ্ছেন অথচ কেউ আপনাদের ভর্তি করাচ্ছে না। তাহলে ঐ অসুস্থ মানুষটি কি জীবিত অবস্থায় মরে যাননি?

রোগীর আর্থিক অবস্থা কেমন ? ——
আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো। যেকোনো হাসপাতাল আমরা Effort করতে পারতাম।

রোগীর স্বজনরা কি মনে করেন, কেন রোগী মারা গেলেন ? ——
কোনো হাসপাতালের বারান্দাতেইতো আমরা পৌঁছাতে পারলাম না। বলতে পারেন বিনা চিকিৎসায় একজন লোক মারা গেলো। আমার দুলাভাই এর যদি বিন্দু মাত্র চিকিৎসার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারতাম তিনি মারা যেতেন না।

————————–———
করোনা নাকি করোনা নয় এইটা যাচাইয়ের কাজ ডাক্তারের। কিন্তু, যাদের করোনা সিম্পট্ম আছে, সেই সব রোগীর বাংলাদেশে কি অবস্থা হচ্ছে তার খুব ভালো উদাহরণ, তারেক রিপনের দুলাভাই চাটখিল কলেজে সাবেক জি এস জাহাঙ্গীর আলম।

একজন এলিট পরিবারের সদস্য হয়েও, যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হসপিটালে হসপিটালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় ভুল চিকিৎসায় মারা গেলেন একজন ব্যক্তি। আর যাদের সামর্থ্য নাই তাদের কি অবস্থা আন্তাজ করে নেবেন।

ডিনায়াল করা যায়, কিন্তু মানুষের মৃত্যু নিয়ে এই ডিনায়াল আর কত দিন ? মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর কত দিন ?

আমি বলছিনা, এই রোগী করোনা (যদিও ইউনাইটেড হসপিটাল বলেছে এবং করোনা বলেই বের করে দিয়েছে। নইলে ইউনাইটেডের মত বেনিয়ারা সাধে কাউকে রিলিজ করেনা। বিভিন্ন অজুহাতে তারা রোগীকে দীর্ঘ সময়ে রেখে দের তার অজস্র উদাহরণ আছে। কিন্তু এরা বের করে দিয়েছে, করোনা সন্দেহে। তার মানে রোগীর ডায়াগনোসিস হয় নাই তা নয়।)

আমরা জানি, করোনা এক্সপোনেনিসিয়ালি বাড়ে এবং পৃথিবীর সব দেশের মত আমাদেরও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা।

তাই, এই মুহূর্তে দরকার জরুরি ভিত্তিতে ভেন্টিলেটর এরেঞ্জ করা। সামাজিক মিডিয়াতে অসংখ্য লেখা আমি দেখছি ভলান্টিয়াররা প্রস্তত, এমআইটির এবং অন্যান্য গাইডলাইন অনুসারে ডিওআই পদ্ধতিতে ভেন্টিলেটর বানাতে প্রস্তুত। কিন্তু এই গুলো আর পাত্তা দেই না।
রাষ্ট্র যদি কেয়ার না করে , কে কি করবে।

এখনো প্রত্যেকটা হসপিটালে যদি আইসোলেশান ইউনিট করে, করোনার ট্রিট্মেন্টের ব্যবস্থা করা যায়। প্রতিটা হসপিটালে যদি ১০০ টা করে ভেন্টিলেটর সহ আইসিইউ থাকে অনেক রোগী বেচে যাবে।

দোহাই লাগে এখনো যদি এরা সচেতন হয় অন্তত কিছু মানুষের প্রাণ বাঁচবে।

এই একটা ঘটনা থেকে যদি আমরা না শিখি এক হাজারেও শিখবো না।

মন্তব্য ঃ কিছু এনোটেশান এবং সংক্ষেপণ করা হয়েছে। (ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত)

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • হাজীগঞ্জ এর আরও খবর
error: Content is protected !!