• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ২২ জানুয়ারি, ২০২০

চা’র সাথে ঘুমের ট্যাবলেট পান করিয়ে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে একাই খুন করার দাবী ফারুকের

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ:
হাজীগঞ্জে দোকানের ভিতর থেকে স্কুল ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মুল পরিকল্পনাকারীসহ ৯জনকে আটক করেছে পুলিশ। হত্যার প্রধান আসামী ফারুককে মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ থেকে আটক করেছে পিবিআই।
এদিকে মঙ্গলবার দুপরে পুলিশ ও পিবিআই’র যৌথ অভিযানে মামলার প্রধান আসামী ফারুকের ঘর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করেছে। আটক ফারুক ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক পিবিআইকে জানিয়েছে রিয়াদকে হত্যার পূর্বে চায়ের সাথে ৫টি ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে রিয়াদকে হত্যা করা হয়েছে বলে পিবিআইকে জানান ফারুক। তবে এর সাথে আর কারা কারা জড়িত আছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পিবিআই ও ডিবি। গতকাল বুধবার চাঁদপুরের ডিবি ওসি মুঠো ফোনে জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক ফারুক জানান, সে একাই রিয়াদকে খুন করেছে। এর সাথে অন্য কেউ জড়িত নাই। তিনি আরো জানান, ঘাতক ফারুককে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী দেয়ার জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
রবিবার সকালে (১৯ জানুয়ারী) পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গাইন বাড়ীর ফরিদ হোসেনের দোকান থেকে মারুফ হোসেন রিয়াদ (১৬) নামে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে। নিহত রিয়াদ আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং স্কুলের পাশ^বর্তী গাইন বাড়ীর ফারুক হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় নিহত রিয়াদের বাবা ফারুক হোসেন আপন ভাই, ভাইয়ের ছেলেসহ ৫জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে হাজীগঞ্জ থানায় ওই দিনে মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এজাহারভুক্ত ৪জনসহ মোট ৯জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে নিহত রিয়াদের আপন চাচাও রয়েছে।
আটককৃতরা হলো মকিমাবাদ গ্রামের জালাল উদ্দিন হাজী বাড়ীর মুকবুলের ছেলে রাকিব (২২), হানিফের ছেলে রাব্বী (২১), মোস্তফার ছেলে সাকিব (২০) ও আবদুল মালেকের ছেলে রাকিব (২১), আবুল কাশেম, দোকানের মালিক ফরিদ হোসেন, চাচা শাকিল (১৮) ও সুইপার নুরুল আমিন ।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ থেকে আটক করা হয়েছে মামলার ১নম্বর আসামী ফারুকককে। পিবিআইর কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। ফারুকই হলো রিয়াদ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। তাকে জিজ্ঞাসাবেদ অনেক ঘটনা জানতে বেরিয়ে আসবে বলে জানান নিহত রিয়াদের বাবা।
নিহত রিয়াদের লাশের সুরতহাল তৈরীকারী পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রিয়াদকে নিশৃসংশভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার গলায় ৪টি পেটের মধ্যে ৩টি ধারালো চুরির আঘাত পাওয়া গেছে। তার পেটের নাড়ি-ভুড়িও চুরির আঘাতে বের হয়েগেছে।
তিনি জানান, ঘাতকরা রিয়াদের হত্যা নিশ্চিত হবার পর টয়লেটের ট্যাংকিতে গুম করে রাখার চেষ্টা করে খুনিরা। আর এ জন্য দুইটি টয়লেট পরিষ্কার করে নুরুল আমিন। আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় শনিবার দিবাগত রাত ১১টার পর ফুটেজে থাকা রাকিব-১, রাকিব-২, রাব্বী, সাকিব ও কাশেমকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। সিসি ফুটেজে মোট ৫জনকে দেখা গেছে। বাকীদের ধরার জন্য অভিযান করছে পুলিশ।
এ ঘটনার পর থেকে ফরিদের দোকানে থাকা কর্মচারী ফারুক হোসেন (২৮) পলাতক রয়েছে। ফারুক পাশ্ববর্তী কচুয়া উপজেলার ৫নং ইউনিয়নের মালছোঁয়া গ্রামের বাসিন্দা। সে দোকানের মালিক সিঙ্গারা বিক্রেতা ফরিদের ভায়রা।
হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি জানান, দোকানের মালিক ফরিদ হোসেনসহ ৮জনকে আটক করা হয়েছে। সবাইকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
নিহত রিয়াদের মা রোজিনা বেগম বলেন, ফারুকের সাথে একটি মোবাইল নম্বর নিয়ে হট্টগোলের কথা জানতে পেরেছি। এছাড়া রিয়াদের চাচা শাকিল (১৮) সে আমার বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাতে আমরা রাজি হইনি। এ নিয়ে শাকিলের সাথে আমার ছেলে দ্বন্দ্ব-সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই মাস আগে একটি ব্যাসলাইটকে কেন্দ্র করে রিয়াদকে ছুরিঘাত আঘাত করে শাকিল। তখন হাসপাতালে নিয়ে সেলাই দেয়া হয়। থানায় একটি অভিযোগও দেয়া আছে।
রিয়াদের বাবা ফারুক মিয়া বলেন, আমার চাচাতো ভাই শাকিলের সাথে আমার ছেলের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সে তার পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। এ নিয়ে থানায় বসে শালিসের মাধ্যমে একটি স্টাম্প হয়েছে। তারা আমার ছেলেকে হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। সপ্তাহখানেক আগে আমার নতুন বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয় কে বা কারা। আমার সাথে কিসের শত্রুতা। আমার ছেলেকেও খুন করলো। সকাল থেকে শাকিল ও ফারুক পলাতক রয়েছে।
দোকানের মালিকের স্ত্রী শাহিদা বেগম বলেন, ফারুকের সাথে রিয়াদের আগে বন্ধুত্ব ছিল। ইতোমধ্যে একটু খারাপ সম্পর্ক দেখেছি। দোকানটি ফারুক পরিচালনা করতো। প্রতিদিন বিকালেই দোকানটি বন্ধ করা হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর জাহেদুল আজহার আলম বেপারী বলেন, সকালে দোকানের মালিক ফরিদ দোকানের কর্মচারী ফারুককে ঘুম থেকে জাগাতে এসে দেখে বন্ধ। পরে সার্টার ভেঙ্গে দেখে রিয়াদের লাশ। বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ খবর দিয়েছি।
হাজীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিতি। আটক আসামীদের ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড এনে জিজ্ঞাসাবাদে আসল ঘটনা জানাযাবে।
চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম ও হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম লিপন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে এককভাবে খুনের ঘটনা ফারুক করেছে বলে ডিবি পুলিশ ও পিবিআইর কাছে দায় স্বীকার করেছে। সে অনুযায়ী তার ১৬৪ হয়েছে। হাজীগঞ্জ থানায় আটক ৮ জনের ভাগ্যে কি হবে তা নিয়ে এখনো ধোয়াশা কাটছেনা। আটক প্রধান আসামী ফারুকের তথ্য যাছাই বাছাই করছে ডিবি পুলিশ। যদি ফারুক একাই খুন করে থাকে তাহলে মুক্তি পেতে পারে আটক নিরিহ আটজন। এমন আভাসই পাওয়া গেছে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সাথে কথা বলে। তবে সিসি টিভি ফুটেজে যে ৫জন ছিল তারা কেন রাতের বেলায় স্কুলে প্রবেশ করেছে অজানা রইয়ে গেলো সে তথ্য।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • হাজীগঞ্জ এর আরও খবর
error: Content is protected !!