ফরিদগঞ্জে ইউপি সদস্য বাচ্চুর বিচার বানিজ্য

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

নূরুল ইসলাম ফরহাদ :

ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাচ্চুর চলছে রমরমা বিচার বাণিজ্য। তার এ বিচার বাণিজ্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ৫/৬ মাসের মধ্যে বিচার-শালিস নিয়ের বাণিজ্যের পসরা সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে আসছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো প্রার্থী বাচ্চু’র পাঁচ লাখ টাকা উত্তোলন করতেই বিচার-শালিস বাণিজ্য করছেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়।

১৪ নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য বাচ্চু এলাকায় সালিশি বানিজ্যের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের আলোকে এলাকায় পরিদর্শনে গেলে তার বিরুদ্ধে ভয়ংকরসব তথ্য উঠে আসে। নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ৫/৬ মাসের মাথায় তার অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৮নং ওয়ার্ডের হর্নি দূর্গাপুর গ্রামের ভূঁইয়া বাড়িতে একটি সালিশে বাদী ও বিবাদির ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে মেম্বার বাচ্চু।

ঘটনার বিবরণে জানাযায়, তাজুল ইসলা ভূঁইয়ার ছেলে শুকুর আহম্মেদ (১৭) এর সাথে বাহারাইন প্রবাসী মামুন ভূঁইয়ার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী লাকী বেগম (২৬) এর সাথে অবৈধ যৌন মেলামেশার দৃশ্য লোকজন দেখে পেলে। মামুন ভূঁইয়ার বড় ভাই মো.সফিউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন,‘এ ঘটনায় সালিশ হয়। সালিশে মেম্বার দুই পক্ষের ১৫ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। টাকাটি মেম্বারের কাছেই আছে। তিনি এই টাকা দিয়ে রাস্তার কাজ করবে বলে আমাদের জানায়।’

মাসুম নামের যুবক বলেন,‘আমি শালিসে ছিলাম না। তবে যার ছিলেন পরে তাদের কাছে শুনেছি উভয় পক্ষের ৩০ হাজার টাকা জরিমান করা হয়ছে। সেই টাকা বাচ্চু মেম্বারের কাছে আছে। তিনি টাকাগুলো দিয়ে রাস্তার কাজ করাবেন। কিন্তু রাস্তার কাজ করানো হয়নি’। এ বিষয়ে বাচ্চু মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন,‘কে বলেছে আপনাকে? তওবা তওবা, আস্তাগফুরুল্লা, নাউজুবিল্লা। আমি কোনো টাকা নেইনি। এটা হারাম। তারা যেহেতু যেনা করেছে তাই তাদেরকে শত শত মানুষের সামনে কান ধরে উঠ-বস করিয়েছি।’ ঐ টাকা দিয়ে রাস্তার কাজ করানো হবে বলে আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এ কথা বলার সাথে সাথে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন,‘অসম্ভব, আমি কোনো টাকা নেই নি’। খানিক পরেই তিনি আবার বলেন,‘আমি তাদের টাকা তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছি। যেহেতু এটা হারামের টাকা। তাই আমি টাকা ফেরত দিয়েছি।’

আমরা যখন ফিরে আসছিলাম এই সময় তিনি এ প্রতিবেদকের কানের কাছে এসে ফিস ফিস করে বলেন,‘ভাই টাকা নিয়েছি সত্য কিন্তু সে টাকা স্থানীয় আওয়ামীলীগের লোকদের ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছি। অন্যথায় তারা জামেলা করতো’।
হর্ণি দূর্গাপুর গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বেপারী বাড়ীর তাজুল ইসলাম ও আমির হোসেন এবং মোশারফ হোসেন এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে দু’টি নারিকেল গাছ নিয়ে বিরোধ।

গত ২৫ নভেম্বর এক সালিশী বৈঠকে এবং সার্ভেয়ারের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় গাছ তাজুল ইসলামের। কিন্তু গাছের কিছু অংশ মোশারফ হোসেন গংদের অংশে চলে যায়। এ অবস্থায় বাচ্চু মেম্বারের পরামর্শে মোশারফ হোসেন গংরা বাদী হয়ে তাজুল ইসলামকে বিবাদী করে থানায় একটি অভিযোগ করে। অভিযোগের আলোকে থানা থেকে এস.আই জাফর ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন।

এ বিষয়ে এস.আই জাফর বলেন,‘অভিযোগের আলোকে আমি এলাকাতে যাই। গিয়ে দেখি গাছের বেশীর ভাগ অংশ আমির হোসেনদের ভাগে। তারা আবার সেখানে দেওয়াল করবে। গাছের জন্য দেওয়াল তুলতে পারছে না। তাই আমি বলেছি গাছগুলো কেটে পেলতে।’ এ বিষয়ে মেম্বার বলেন,‘হ্যাঁ, আমি বলেছি থানায় অভিযোগ করতে। আর গাছ গুলো কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তছলিম’।
এ বিষয়ে তাজুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার শিউলি বলেন,‘ আমাদের দু’টি নারিকেল এবং কাঠাল গাছের ফল কয়েকদিন ধরে জোর করে খাচ্ছে মোশাররফ হোসেন ও তার ছেলে আমির হোসেন। পরে সালিশের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় মাফার। মাফার পর গাছগুলো আমাদের ভাগে পড়ে। এটাকে অপমান হিসেবে নিয়ে তারা বাগানে দেওয়াল তুলার কথা বলে আমাদের গাছগুলো জোর করে কেটে ফেলেছে।’
আমির হোসেনকে না পেয়ে তার স্ত্রী আফতাবের নেছার সাথে কথা এই প্রতিবেদকের, এ বিষয়ে তিনি বলেন,‘ভূমি মূলত আমাদের, আমিন (সার্ভেয়ার) ভুল করে তাদেরকে দিয়ে দিয়েছি। আমরা এখানে বিল্ডিং করবো, তাই গাছ কেটে ফেলেছি’।

Sharing is caring!

আরও সংবাদ

error: Content is protected !!