• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৭ নভেম্বর, ২০১৯

হাজীগঞ্জে বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

বিশেষ প্রতিনিধি:
হাজীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সম্মেলনে কাউন্সিলর তালিকা তৈরিতে কারচুপিরসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা।
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে মানা হচ্ছে না দলীয় গঠনতন্ত্র। এমনকি দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে তৈরি করা হচ্ছে কাউন্সিলর তালিকা। ইউনিয়ন সম্মেলনে সদস্য তালিকায় কাউন্সিলদের নামের গরমিল দেখা যায়। কাউন্সিল তালিকায় রয়েছে অদৃশ্য নাম। খোঁজ খবর নিয়েও সদস্যদের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে প্রার্থীরা জেলা-উপজেলা কমিটিকে অবহিত করেছেন বলে জানা যায়।
তালিকাগুলোতে দেখা যায় ১৯জন কাউন্সিলরের নাম থাকলেও নেই কোন পরিচিতি। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সদস্যদের পিতার নাম এবং পরিচয় এমনকি মোবাইল নম্বর না থাকায় সম্মেলনের প্রার্থীলা ভোটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না। যেসব নাম দেওয়া হয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব তালিকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
এদিকে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নির্বাচনে প্রস্তুতকৃত ইউনিয়ন কাউন্সিলর তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের কাউন্সিলর তালিকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নগুলোতে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে অন্যায় প্রার্থীদের কাউন্সিলর তালিকা দিচ্ছে না বলে জানান একাধিক প্রার্থী।
এ দিকে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুককৃত কাউসিলর তালিকা থেকে নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারী এবং বিএনপির সমর্থকদের কাউন্সিলর করায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড কমিটির দেওয়া তালিকা বাদ দিয়ে নিজেদের মনগড়া কমিটি করে তার অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ উঠে। আওয়ামী লীগের যে ক’জন নেতার নাম রইউনিয়ন সম্মেলন তালিকায় রয়েছে তারা বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদেরক সমর্থক। অন্যান্য প্রার্থীদের দেওয়া হচ্ছে না কাউন্সিল তালিকা ।
ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রত্যেকটি কাউন্সিলর সদস্য তালিকা তৈরিতে কারচুপির অভিযোগে কয়েকটি ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত সহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। গত ২৪ নভেম্বর উপজেলার ১০নং গন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ডাটরা শিবপুর ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কারচুপির অভিযোগে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওইদিন এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এর পরপরই ৪টি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করে সমন্বয়ক কমিটি।
হাজীগঞ্জ ৫নং সদর ইউনিয়নে ওয়ার্ড কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ইউনিয়ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী রেজাউল করিম মিন্টু। ওই ইউনিয়নে তালিকাগুলোতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নাম এবং স্বাক্ষর না থাকার কারণে জেলা কমিটির কাছে অভিযোগ দেওয়ায় আজকের দিনে নির্ধারিত সম্মেলনের সময়সূচি পরিবর্তন করে আগামী ৩০ নভেম্বর তারিখ ঘোষণা করা হয়।
২৫ নভেম্বর ৮নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর তালিকায় কারচুপির অভিযোগে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন স্থগিত করে সমন্বয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা চলে আসে। ওই ইউনিয়নে নতুন করে কাউন্সিলর তালিকা প্রস্তুত করার দাবীতে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়।
ইউনিয়নের ১নং আওয়ামী লীগের প্রবীন এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এ তালিকা করার অভিযোগ উঠেছে। ওই কাউন্সিল তালিকা থেকে বাধ পড়া নেতাকর্মীরা জেলা নির্বাচন সমন্বয় কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তকদিল হোসেন।
গত ২৫ নভেম্বর বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের রায়চোঁ উত্তর, নোয়াদ্দা, বড়কুল তিনটি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা যায়। এ নিয়ে উত্তর রায়চোঁ ডা. শিবাসের দোকানের সামনে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ফল সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কালু কন্ট্রাক্টরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ তালিকা তাদের তৈরি নয় বলে জানায়।
এ কাউন্সিল তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ওয়ার্ড ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের পরাজিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তকদিল হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড মেম্বার মো. আলী মুরাদ, প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মমিন মিয়া, ডা. শিবাস, ডা. মিজানুর রহমান, ছায়েদ আলী বেপারিসহ অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। নেতাকর্মীদের অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কাউন্সিলর তালিকা ১নং ওয়ার্ডে ১৯জনকে কাউন্সিলর করা হয়। এদের মধ্যে কাউন্সিলর তালিকায় ৫নং ঝুটন সাহা, ৭নং সদস্য খোরশেদ আলম পাট:, এবং ১৪নং সদস্য মিরণ ভান্ডারি সক্রিয় বিএনপির সমর্থক। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তাদেরকে সদস্য করায় নেতাকর্মীরা উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।মুক্তিযোদ্ধা তকদিল হোসেন বলেন, আমি দেশকে ভালোবেসে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করি। স্বাধীনতার পর লফিত মাস্টার ছিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর হাতে খুন হওয়ার পর আমাকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। অথচ আমি এ সম্মেলনে কাউন্সিলর হতে পারিনি। কবির হোসেন মিয়াজী জাতীয় পার্টি থেকে আগত সে এ বড়কুল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ধ্বংসের পায়তারা করছে।
বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রাথী সাবেক ছাত্র নেতা মো. আহসান হাবীব তার ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তিনি একজন প্রার্থী এখনো বৈধ ভোটার তালিকা পাননি। আহসান হাবীব বলেন, আমি প্রার্থী অথচ আমাদের কাছে তালিকা হস্তান্তর করছে না। অনেক ওয়ার্ড সভাপতি সাধারণ সম্পাদক জানে না । অথচ তাদের স্বাক্ষরিত তালিকা প্রকাশিত করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তর ও ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী সম্পাদক রেজাউল করিম মিন্টু বলেন, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে তালিকা প্রস্তুত হলেও আমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে না। তবে যে তালিকা প্রকাশ করা হয় ওই তালিকায় অনুমোদনের কোন স্বাক্ষর নেই। এসব তালিকা তৈরিতে মানা হয়নি কোন নিয়ম কানুন। সম্মেলন করে পদ নিজেদের কাছে আঁকড়ে ধরতে নিজেদের মনগড়া তালিকা তৈরি করেছে। ভোটারের নাম থাকলেও তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনি সম্পাদক ও প্রবীন এবং ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা হাসমত উল্ল্যা হাসুর ছেলে মো. ফারুক উল্ল্যাহ বকুল বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। আমার বাবা আওয়ামী লীগের জন্য কি করেছে তা কম বেশি সবাই জানে। আমার বড় ভাই সায়েদ উল্ল্যা এবং চাচাতো ভাই নান্নু। তারা দুই জনই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। রাজপথে তাদের যে ত্যাগ রয়েছে। তা বিবেচনা করে কাউন্সিলর তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে নতুন করে তালিকা করেছে।
৮নং হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী সোহরাব হোসেন মিয়াজী বলেন, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর তালিকা তৈরিতে কারচুপি করেছে। বিএনপি জামায়াতকে সদস্য করা হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ তালিকায় সদস্য করা হয়নি। এমন তালিকা মেনে নেওয়া হবে না।
বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নে সভাপতি প্রার্থী এনায়েত করিম ইসহাক বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে যেসব নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার মধ্যে দুই-একজন ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক নামে একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। ভোটার কে তা নিশ্চিত হতে পারিনি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আহসান হাবীব বলেন, এ কেমন তালিকা যা আশ্চয্য বিষয়। এমন সব সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে স্টেজ। আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করার জন্য এ নীল নকশা তৈরি করা হয়েছে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • রাজনীতি এর আরও খবর
error: Content is protected !!